ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতার দায় কার?

এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ জুলাই ২০১৭, ১৫:৪২ | প্রকাশিত : ২৮ জুলাই ২০১৭, ০৮:৩৩

জলাবদ্ধতা রাজধানীর অনেক পুরোনো সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সময় নেয়া হয়েছে নানা প্রকল্প। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। নগরবাসীর অনেকেই বলছেন রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবমুখী কোন প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে না, আর এ জন্য নগরীর জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করছে।

নগর পরিল্পনাবিদরা বলছেন, দিন দিন ঢাকা শহরের খোলা জায়গাগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে, আর দখল হয়ে যাওয়া জায়গুলিতে পাকা দালান গড়ে ওঠায় পানি চুয়ে নিচে যেতে না পারায়, রান অব ওয়াটার বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে জলাবদ্ধতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, প্রতি আট দশ বছর পর পর এ রকম অতি বর্ষণ হতে পারে, এটাকে মাথায় নিয়েই নগরীর ডেনেজ সিস্টেম করা উচিত।

রাজধানীতে জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বৃষ্টির পানি প্রথমত ভূগর্ভে শোষণ করে নেয়, বাকি পানি রান অব ওয়াটার হয়ে খাল বিল ও ড্রেন দিয়ে নদীতে চলে যায়। কিন্তু এখানে এই দুই পথের সবই অকার্যকর। তাছাড়া নগরীতে যে ড্রেনগুলো আছে তাও আবর্জনায় পূর্ণ, পানি যাওয়ার রাস্তায় বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে, এ কারণে নগরীর জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করছে।

এ ক্ষেত্রে নগরবাসীর দায়ও কম নয় বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। নিষিদ্ধ পলিথিন আর যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলার বাজে অভ্যাস যতদিন নগরবাসী বাদ না দেবে, ততদিন জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয় বলেই তারা মনে করেন।

ঢাকার পরিকল্পনা বলতে জানা যায় ১৯৫৯-৬০ সালের একটি পরিকল্পনার কথা। ওই ‘মাস্টার প্ল্যানে’ ঢাকার চারপাশের নিম্নাঞ্চল ও নদী, শহরের খাল, বিল, ঝিল— এসব রেখেই উন্নয়ন পরিকল্পনা ছিল। অর্থাৎ একধরনের জলের সঙ্গে বসবাসের পরিকল্পনা। কিন্তু আশির দশকে এসব বিবেচনায় না নিয়ে এক ধরনের লাগামছাড়া নগরায়ন শুরু হয়। তাতে সমস্যা আরও বেড়ে যায় বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

রাজধানীর ড্রেনেজ সিস্টেমের দায়িত্ব ছিল স্থানীয় সরকার ও সিএনবির ওপর। কিন্তু আশির দশকে ওয়াসা ড্রেনেজ বিভাগ খুলে দায়িত্ব তাদের কাঁধে তুলে নেন। সে অনুযায়ী নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করার দায়িত্ব ওয়াসার। কিন্তু এখন এসে ওয়াসা জলাবদ্ধতার দায় নিতে চাচ্ছে না। অন্য দিকে সিটি করপোরেশন বলছে জলাবদ্ধতার দায় ওয়াসার ওপরই বর্তায়।

নগরীর জলাবদ্ধতার দায় যে যার মতো করে একে অপরের ওপর চাপাচ্ছে, কিন্তু এর থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর। বরং এই সমস্যা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসীর সীমাহীন ভোগান্তির দায় নিতে নারাজ প্রতিষ্ঠানগুলো।

স্থপতি ইকবাল হাবিবের মতে, ঢাকা জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গণসচেতনা সৃষ্টি করতে হবে। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে সবাই নেমে পড়বে। সব ড্রেনেজ সিস্টেম পরিষ্কার করতে হবে। যাতে নদী পর্যন্ত পুরো লাইন পরিষ্কার থাকে।

এই স্থপতি বলেন, ‘সব খাল-বিল, ড্রেন, বক্স কালভার্ট, জলাধার পরিষ্কার করে ঢাকার রাস্তাগুলোর সঙ্গে সংযোগ লাইনগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। যাতে পানি সরল রেখায় প্রবাহিত হতে পারে। নদী পর্যন্ত এগুলো সচল রাখার সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত কর্মদ্যোগ এবং তার বাস্তবায়ন। এটা করতে না পারলে রাজধানীল জলাবদ্ধতা দুর করা সম্ভব হবে না।’

ইকবাল হাবিব বলেন, ‘একটা নালা পরিষ্কার করলে দেখবেন, সেখানে বিচিত্র সব আবর্জনা পাওয়া যায়। পলিথিন থেকে শুরু করে প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের মোড়ক-কি নাই সেখানে। এগুলো কারা ফেলে? নগরবাসী এত অসচেতন হলে তাকে দায় দেবেন?’।

বুধবার ঢাকায় এক দশকের মধ্যে নজিরবিহীন দুর্ভোগের পর জলাবদ্ধতা পরিদর্শনে এসে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘সব খাল বন্ধ, খালের উপর পাঁচতলা বাড়ি। পানি যাওয়ার কোন জায়গা নেই। এ সমস্যা সমাধানে শর্টকাট কোনো রাস্তা নেই। যে জায়গাগুলোতে স্লুইসগেট বন্ধ হয়েছে সেখানে তা বানাতে হবে। কিন্তু এ দায়িত্ব তো এক এক ডিপার্টমেন্টের। এ সমস্যা সমাধানে গত সপ্তাহে কো-অর্ডিনেশন মিটিং করেছি। গত বছর যে এলাকায় ড্রেন বানিয়েছি সে এলাকায় এবার পানি নেই। নতুন নতুন এলাকায় (জলাবদ্ধতা) হচ্ছে। সমাধানে সময় লাগবে।’

দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন জলাবদ্ধতা সরেজমিন দেখতে হাঁটু পানিতে নামেন। তিনি বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অতিবৃষ্টির পর নগরীর পানি নেমে যাওয়ার জন্য যে ধরনের ড্রেনেজ ব্যবস্থার দরকার ছিল তেমনটি নেই। এজন্য জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।’

একই দিন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রমিজ করছি আগামী বছর থেকে বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা হবে না। এটা কিন্তু স্বাভাবিক পরিস্থিতি না। আমরা সার্ভে করে দেখেছি, ঢাকায় যে ৪৬টি খাল আছে, এর মধ্যে ১৮টির উন্নয়ন করতে হবে। ওয়াসাকে নির্দেশনা দিয়েছি, হেভি (ভারী) বৃষ্টি হলেও তিন ঘণ্টার মধ্যে যেন পানি নিষ্কাশন হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিল্লাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শহরের চারিদিকে বাঁধ থাকার কারণে এই শহরটা একটা পাত্রের মতো হয়ে গেছে। শহরের পানিগুলি পাম্প করে বের করে দিতে হয়, পানি পাম্প পর্যন্ত যেতে সময় লাগে। এটা সমাধানে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নানা প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর কিছু শেষ হয়েছে, তবে কিছু চলমান। সবগুলো শেষ হয়ে গেলেই জলাবদ্ধতার সমস্যা কমবে।’

সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আয়োজনে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ডিএনসিসির প্রকৌশলী শরিফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মহানগরীতে মোট ৪৩টি খাল রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি খালের রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্ব ওয়াসার। এছাড়া মহানগরীর সকল খালের মালিকানায় রয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসক। ডিএনসিসি এলাকায় ২৩টি খাল রয়েছে, যার সবগুলো অবৈধ দখলে। সেগুলো দিয়ে পানি নামছে না। এ কারণে অল্প বৃষ্টি হলেও রাজধানীজুড়ে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা।’

জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘মাস্টার প্লান’ নেয়া হয়েছে। শহরে ১৩টি খাল আমরা দেখভাল করছি আর ১৩টি খালের শেষ দিয়ে গিয়ে আর খাল পাওয়া যায় না। আমরা চেষ্টা করছি খালগুলো সংস্কারের জন্য। আমরা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করছি ২০২৫ সাল নাগাত পুরো শহরের স্যুয়ারেজ লাইন শতভাগ শেষ করতে পারব, তখন আর জলবদ্ধতা হবে না, জলজট হতে পারে তা তিন ঘণ্টার মধ্যেই পানি নিস্কাষণ হবে।’

ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/জিএম/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

বিজিবিতে আযান ও ক্বেরাত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ

পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের বিচার

এক হাতে ইফতারের পানির বোতল, আরেক হাতে যান চলাচলের ইশারা ডিসির

এলিফ্যান্ট রোডে বাসা থেকে শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ঢাকাস্থ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ সমিতির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

অসুস্থতার যন্ত্রণা সইতে না পেরে ছুরিকাঘাতে রিকশাচালকের আত্মহত্যা

রাজধানীর ধোলাইপাড়ে পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’

বুধবার থেকে এক ঘণ্টা বাড়ছে মেট্রোরেল চলাচলের সময়

ঈদকে সামনে রেখে ডিবি-সাংবাদিক পরিচয়ে অপহরণের ফাঁদ

ভবিষ্যৎ নগর উন্নয়নে জাইকা ও ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের সঙ্গে রাজউকের সভা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :