‘বাংলাদেশে ধর্ম-বর্ণের ক্ষেত্রে বৈষম্য থাকবে না’
দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আহ্বান এবং ভবিষ্যত মননশীল বাংলাদেশের স্বপ্নে উৎসবে মিলিত হয়েছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী যুবকেরা।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার চত্বরে বেলুন উড়িয়ে দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
বুড্ডিস্ট ইয়ুথ ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ বাংলাদেশের এই আয়োজন উদ্বোধন করে ঢাবি ভিসি বলেন, ‘বাংলাদেশ ১৬ কোটি মানুষের দেশ। এখানে কে কোন ধর্ম অবলম্বন করছে, কোন ধর্ম অনুসরণ করছে সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। এখানে নানা মত, নানা ধর্ম থাকবে; কিন্তু দেশ আমাদের একটাই বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের দেশ দিয়ে গেছেন। যেখানে ধর্ম-বর্ণের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য থাকবে না।’
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হককে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘এই দেশ কোনো হিন্দুর নয়, মুসলিমের নয়, বৌদ্ধের নয়, খ্রিস্টানের নয়। তাহলে এই দেশ কার? এই দেশ তার যে দেশকে ভালোবাসে।’
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে গিয়ে পাকিস্তানি চিন্তা-চেতনা লালনকারীদের কঠোর সমালোচনা করেন ঢাবি উপাচার্য।
তিনি বলেন, ‘এদেশে এখনো কিছু লোক আছে, যারা পাকিস্তানিরা যে মত ও আদর্শ লালন করত সেটা ধারণ করে। সেটা একইসঙ্গে দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। এদের পেছনে ফেলে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
তরুণদের ঐকতান সৃষ্টির জন্য বুড্ডিস্ট ইয়ুথ ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক।
কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উৎসবের আহ্বায়ক অরূপ রতন বড়ুয়া বলেন, ‘নিজেদের বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় করা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের লক্ষ্যে আমরা এই সংগঠন গড়ে তুলেছিলাম। একইসঙ্গে নিজেদেরকে আত্মবিশ্বাসী, স্বপ্নবান ও দূরদর্শী করে গড়ে তোলা আমাদের উদ্দেশ্য।’
লক্ষ্য অর্জনের জন্য সেমিনার ও কর্মশালার মাধ্যমে দিনের আয়োজন সাজানো হয়েছে জানিয়ে অরূপ রতন বলেন, ‘ক্যারিয়ার ও পেশাদারিত্বের বিষয় মাথায় রেখে আমরা অনুষ্ঠান সাজিয়েছি। যেটা তরুণদের সমৃদ্ধ আগামীর জন্য তৈরি করে তুলবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফাদার বেঞ্জামিন ডি কস্তা, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগংয়ের উপাচার্য অধ্যাপক প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বিমান চন্দ্র বড়ুয়া, সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য দয়াল কুমার বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মিলনায়তনে ত্রিপিটক পাঠ ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে মূল আয়োজনের সূচনা হয়। সংগঠনের নিজস্ব সঙ্গীত পরিবেশন করা হয় এই সময়।
আয়োজনের এই পর্বে সভাপতিত্ব করেন বুড্ডিস্ট ইয়ুথ ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের চেয়ারম্যান কল্লোল বড়ুয়া।
দুপুরের খাবারের পর অনুষ্ঠিত হয় ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা নিয়ে প্যানেল আলোচনা, ইয়ুথ আইকনদের বক্তৃতা, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রফেশনালিজম নিয়ে ওয়ার্কশপ এবং যুব উদ্যোগ নিয়ে প্যানেল আলোচনা।
সন্ধ্যা ৬টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ব্যক্তি ও সংগঠনসমূহকে পদক ও সম্মাননা দেওয়া হবে।
আয়োজকরা জানান, চতুর্থবারের এই যুব উৎসবে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন ভাষা সৈনিক ও শিক্ষাবিদ প্রতিভা মুৎসুদ্দি এবং ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়া
‘বিশেষ সংবর্ধনা’ দেওয়া হবে শালবন বিহার ও ভিক্ষু প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শীলভদ্র ভিক্ষু এবং প্রান্তিক ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টকে।
তরুণদের মধ্যে বাংলাদেশ বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষণ বড়ুয়া, মাল্টিপেক্স ওয়েব ডিজাইনের স্বত্ত্বাধিকারী হিরো বড়ুয়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সুবর্ণা বড়ুয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের প্রভাষক বিপাশা বড়ুয়া পাচ্ছেন ‘যুব সংবর্ধনা’।
ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/বিইউ/জেডএ