অচেনা রূপবতী কন্যাকে বাইকে তোলার পর...

রাসেল মাহমুদ
| আপডেট : ২৯ জুলাই ২০১৭, ১৮:০৪ | প্রকাশিত : ২৯ জুলাই ২০১৭, ১৭:৫৫

সেদিন আমার সাপ্তাহিক ছুটি। শীষ দিতে দিতে বাইকে চেপে গুলশান রওনা দিয়েছি। ভিসা সেন্টারে গিয়ে পাসপোর্ট নেব, বন্ধুর সঙ্গে দুপুরে খাব, বিকেলে আড্ডা দেবো আরেক বন্ধুর সঙ্গে। মনে মনে সব প্ল্যান পাক্কা। আবার এও ভাবলাম, দুপুরে বলাকায় শাকিব খানের ‘নবাব’ ছবিটাও দেখে ফেলা যায়।

ছবি দেখতে একা যাওয়া যাবে না। সিনেমা দেখার প্রস্তাব দিতে এক বান্ধবীকে ফোন করলাম। তিনি জানিয়ে দিলেন ছয়টার আগে তাঁর পক্ষে অফিস থেকে বের হওয়া সম্ভব নয় এবং সিনেপ্লেক্স ছাড়া তিনি সিনেমা দেখবেন না। এমনকি বাংলা সিনেমা দেখার মতো সময় ও রুচি তাঁর নেই।

রাস্তায় বাইক থামিয়ে ফোন করেছিলাম। মেজাজটা অতিশয় খারাপ হয়ে গেল। সকালে বুয়ার বানানো একটা আসামিদের মোটা রুটি খেয়েছি। রুটি ঠান্ডা, ভাজিও ঠান্ডা। ঘুম থেকে দেরি করে ওঠার ফল। পেট্রোবাংলার নিচে এক কাপ চা কোথায় খাওয়া যায় ভাবতেই ‘এক্সকিউজ মি’ বলে এক ভদ্রমহিলা সামনে দাঁড়ালেন। বিনয়ের সঙ্গে বললেন, ‘ভাইয়া ভীষণ বিপদে পড়েছি। কিচ্ছু পাচ্ছি না; একটু লিফট দেবেন?’

মেজাজ খারাপ অবস্থায় এসব ক্ষেত্রে ফট্ করে ‘না’ বলে দিই। এই ক্ষেত্রে সেটা পারা গেল না। হেব্বি রূপবতী। বললাম, ‘একটা উবার বা পাঠাও ডেকে নিলেই তো পারেন। অ্যাপস নেই? ডেকে দেবো?’।

তিনি উল্টো বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘না, ভাই আমি এতক্ষণে ট্রাই করেছি। আসতে সময় লাগবে। আমার আধ ঘণ্টার মধ্যে গুলশান পৌঁছাতে হবে!’

মনে মনে বললাম, ‘নইলে কি ব্রেক-আপ হয়ে যাবে?’ শব্দ করে বললাম, ‘আপু আমার বাড়তি হেলমেট নেই।’

তিনি হড়বড় করে বললেন, ‘লাগবে না। প্লিজ ভাই আল্লার দোহাই লাগে...’

চা খেলাম না। ভদ্রমহিলা মল্লিকা শেরওয়াতের মতো দুই পাশে পা দিয়ে বাইকে বসলেন। আমি ২০ মিনিটে পৌঁছে গেলাম দুই নম্বর মোড়ে। ভদ্রমহিলা বাইক থেকে নেমে ব্যাগ থেকে পাঁচশ টাকার একটা নোট বের করে বললেন, ‘অনেক ধন্যবাদ ভাই। বাঁচালেন।’

আমি থ মেরে গেলাম। বললাম, ‘এক্সকিউজ মি! আমি ভাড়াটে চালক না। এরকম ব্যবহার করবেন জানলে আপনাকে নিতাম না।’

তিনি বললেন, ‘প্লিজ যা বলি শোনেন। কোনো দিকে তাকাবেন না। রাস্তার ওপাশে আমার বয়ফ্রেন্ড দাঁড়ান; সে দেখছে যে আমি বাইক থেকে নেমেছি। টাকাটা রাখেন প্লিজ। বিপদে পড়ব।’

আমি তাঁর বাস্তবতা বুঝলাম। বললাম, ‘বাইক চালিয়ে জীবনে প্রথম ইনকাম করলাম, সেলিব্রেট করতে চাই। কফি খাই চলেন। আপনার বয়ফ্রেন্ডসহ।’

ভদ্রমহিলা বললেন, ‘ফোন বের করেন।’

আমি করলাম।

তিনি একটা নম্বর বললেন, তারপর বললেন, ‘মিসডকল দেন।’

আমি বাধ্য ছেলের মতো মিসকল দিলাম।

তিনি বললেন. ‘বয়ফ্রেন্ড না, আমি একা খাবো একদিন। থ্যাঙ্কস।’

আমি পাঠাও চালকের মতো পেশাদার ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে ভিসা সেন্টারের দিকে রওনা হলাম। পাসপোর্ট পেলাম না। বাইরে এসে রেনু নামের এক বয়স্ক মহিলাকে খুঁজে বের করলাম। তিনি ভিসা অফিসের বাইরে ২০ টাকার বিনিময়ে ব্যাগ রাখেন। দুই বার আমার ব্যাগ রেখেছেন। খাতির হয়ে গেছে। তাঁকে নিয়ে চা খেলাম। তারপর কারওয়ান বাজার ফিরলাম।

একটা রিচার্জরে দোকানে গিয়ে ভদ্রমহিলার নম্বরে পাঁচশ টাকা লোড করে অফিসে উঠলাম। সেদিন অফিস থেকে বের হওয়ার পর মনে হলো, ওহ হো, আজ তো সাপ্তাহিক ছুটি ছিল আমার।

লেখক: সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :