ধর্ষণ-নির্যাতন: বগুড়া শ্রমিক লীগ নেতা গ্রেপ্তার, স্ত্রী পলাতক

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৯ জুলাই ২০১৭, ১৯:০৫ | প্রকাশিত : ২৯ জুলাই ২০১৭, ১৮:৪৬

কলেজে ভর্তি করে দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ হওয়ায় ধর্ষিতা ও তার মাকে লাঠিপেটা ও মাথা ন্যাড়া করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ ঘটনায় পুলিশ বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের সভাপতিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়া এবং মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার এড়াতে শ্রমিক লীগ নেতার স্ত্রী, তার বোন পৌরসভার নারী কাউন্সিলর পলাতক।

শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে বগুড়া সদর থানা পুলিশ শহরের চকসূত্রাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন, শহর শ্রমিক লীগের সভাপতি তুফান সরকার, তার সহযোগী, আলী আজম দিপু, আতিকুর রহমান ও রুপম হোসেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া শহরের বাদুড়তলা এলাকার একজন চা বিক্রেতার কিশোরী কন্যা এবার এসএসসি পাস করে। কিন্তু কোনো কলেজে ভর্তি হতে না পারায় প্রতিবেশী আলী আজম দিপু তাকে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের মাধ্যমে সরকারি কলেজে ভর্তি করে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। এরপর তুফান সরকার দিপুর মাধ্যমে ওই কিশোরীকে চার হাজার টাকা দিয়ে একটি কলেজে ভর্তির জন্য পাঠান। কিন্তু ওই কিশোরী ভর্তি হতে না পারার বিষয়টি দিপুর মাধ্যমে তুফান সরকারকে জানায়।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৭ জুলাই তুফান সরকারের স্ত্রী-সন্তান বাসায় না থাকার সুযোগে ওই কিশোরীকে বাসায় ডেকে নেন। এরপর তাকে দিনভর আটকে রেখে তিনি কয়েক দফা ধর্ষণ করেন। এতে ওই কিশোরী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং হুমকি দেয়া হয় বিষয়টি কাউকে না জানাতে।

কিন্তু ধর্ষণের ঘটনা ওই কিশোরীর মা জানতে পারেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে তুফান সরকারের স্ত্রীর কানে যায়। গতকাল শুক্রবার বিকেলে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা খাতুন তার বড় বোন পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি এবং তার মা রুমী বেগম ওই কিশোরীর বাড়িতে যায়। তারা ধর্ষণের ঘটনার বিচার করে দেয়ার কথা বলে মা-মেয়েকে পৌর কাউন্সিলর রুমকীর অফিস চকসূত্রাপুরে নিয়ে যান। সেখানে বিচারের নামে ধর্ষিতাকে পতিতা আখ্যায়িত করে এবং মেয়েকে দিয়ে দেহব্যবসা করানোর অভিযোগ আনা হয় মায়ের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, এরপর তুফান সরকারের কয়েকজন সহযোগী লাঠিপেটা করে মা ও মেয়েকে। নাপিত ডেকে এনে মা-মেয়েকে প্রথমে মাথার চুল কেটে দেয়া হয়, একপর্যায়ে তুফান সরকারের স্ত্রীর নির্দেশে তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়। ২০ মিনিটের মধ্যে বগুড়া শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ার জন্য তাদের রিকশায় তুলে দেয়া হয়।

আহত মা ও মেয়ে চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলে বিষয়টি থানায় জানাজানি হয়। রাত ১১টার দিকে সদর থানার পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে মা ও মেয়ের বক্তব্য শুনে রাতেই অভিযান চালায়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তুফান সরকারকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তার আরো তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তুফান সরকারের গ্রেপ্তারের পরপর তার স্ত্রী আশা খাতুন, স্ত্রীর বড় বোন পৌর কাউন্সিলর রুমকী এবং তুফানের শাশুড়ি রুমী বেগম আত্মগোপন করেন বরে জানায় পুলিশ।

শনিবার এ ঘটনায় ধর্ষিতার মা মুন্নী বেগম বাদী হয়ে তুফান সরকারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় তুফানসহ চারজনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

শনিবার দুপুরে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) সনাতন চক্রবর্তী তার কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মা ও মেয়েকে নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের তৎপরতা চলছে।

(ঢাকাটাইমস/২৯জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :