রিমান্ডে ধর্ষণের কথা ‘স্বীকার’ তুফানের

প্রতীক ওমর, বগুড়া
| আপডেট : ৩১ জুলাই ২০১৭, ১৯:৪৮ | প্রকাশিত : ৩১ জুলাই ২০১৭, ১৯:২৩

বগুড়ায় আলোচিত ধর্ষণ মামলা বহিষ্কৃত শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। রিমান্ডে থাকাকালে তিনি ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন বলে পুলিশের বিশেষ সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এর আগে গ্রেপ্তারের প্রথম দিনেই ১৬৪ ধারায় তুফানের সহযোগী আতিকুর রহমান আতিক আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এরপর তাকে রিমান্ডের বাইরে রাখা হয়। রিমান্ড চাওয়া হয় তুফানসহ সহযোগ আলী আজম দিপু ও রুপম হোসেনের।

এদিকে ধর্ষিতা এবং তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া নারসুন্দর জীবনকেও আটক করেছে পুলিশ।

এছাড়া গত দুই দিনে গ্রেপ্তার সাত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ সোমবার আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্যাম সুন্দর রায় বিকাল ৫টায় নারী কাউন্সির রুমকির চার দিনের এবং বাকি ছয় আসামির দুই দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ডের অন্য আসামিরা হলেন, তুফানের স্ত্রী আশা, শ্বশুর জামিলুর রহমান রুনু, শাশুড়ি রুমি বেগম, সহযোগী জিতু ও মুন্না এবং নরসুন্দর জীবন। তাদের মধ্যে নরসুন্দর জীবন এবং তুফানের শ্বশুর জামিলুর রহমান রুনু ওই মামলার ইজাহারের বাইরের আসামি।

এর আগে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামি তুফান সরকার এবং তার সহযোগী, আলী আজম দিপু ও রুপম হোসেনের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে ইতোমধ্যেই তুফান সরকার ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। পুলিশের বিশেষ সূত্র ঢাকাটাইমসকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।

এদিকে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়া চেষ্টায় বগুড়া সদর থানায় দুই মামলা হয়। ওই দুই মামলায় মোট ১০ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে শিমূল ছাড়া বাকি নয় আসামি গত দুই দিনে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ইজাহার ছাড়া দুই ব্যক্তিসহ মোট ১১ জনকে পুলিশ এই মামলায় গ্রেপ্তার করলো।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ-সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তী জানান, পরে গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নতুন করে আরও সাত আসামির বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গতরাত ১টার দিকে পুলিশ সদর দপ্তর ও সাভার থানা পুলিশের সহযোগিতায় পালিয়ে থাকা আশা, জিতু ও মুন্নাকে ঢাকার সাভার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে রবিবার সন্ধ্যায় অভিযুক্ত বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মার্জিযা হাসান রুমকি ও তার মা রুমি বেগমকে পাবনা শহর থেকে গ্রেপ্তার করে বগুড়া ডিবি পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি শহরের চকসুত্রাপুর এলাকার জাহিদ হাসানের স্ত্রী। তার মা রুমি বেগম শহরের বাদুড়তলা এলাকার জামিলুর রহমানের স্ত্রী। আর আটক রুমকির পিতা জামিলুর রহমান রুনু বাদুড়তলা এলাকার মৃত জিল্লার রহমানের বড় ছেলে। আশা কাউন্সির রুমকির ছোট বোন।

অপরদিকে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি আলাদাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসক নূরে আলম সিদ্দিকী আশা প্রকাশ করে বলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই ওই কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস সামাদ ওই তদন্ত কমিটির প্রধান। তাকে সহযোগিতা করছেন আরও দুই সদস্য।

এদিকে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, তাদের সহযোগী সংগঠনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দলটি কেন্দ্রীয়ভাবে একটি তদন্ত টিম বগুড়ায় পাঠাবে। কবে নাগাদ পাঠাবে সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কিছু জানা যায়নি।

জেলা বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সোমবার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাধীন মা- মেয়ের খোঁজখবর নিয়েছে। জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে উপস্থিতি ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস, অ্যাডভোকেট নাজমুল হুদা পাপন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাহ মেহেদী হাসান হিমু, শহর যুবদলের সভাপতি মাসুদ রানা, শ্রমিকদল নেতা লিটন শেখ বাঘা প্রমুখ।

জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদেরকে জানান, বিএনপি সব সময় নির্যাতিতদের পাশে আছে এবং থাকবে। তিনি বলেন, বর্বোরচিত এই নির্যাতন সভ্য সমাজে মেনে নেয়া যায় না। তিনি সব শ্রেণিপেশার মানুষকে এ ঘটনার প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান

এদিকে গ্রেপ্তারকৃতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে এখনো সোচ্চার রয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। সোমবার শহরে মানববন্ধন করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো। পাশাপাশি জেলা যুবলীগ এক বিবৃতিতে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।

সোমবার বিকাল ৩টার দিকে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধর্ষিতা এবং তার মাকে দেখতে যান। এসময় তিনি বলেন, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ভিকটিমকে আইনগত যাবতীয় সহযোগিতা করা হবে।

বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বিকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, বগুড়ার এই আলোচিত ঘটনার সাথে জড়িতদের পুলিশ ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। আসামিদের রিমান্ড চলছে। তাদের কাছ থেকে ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই মালায় সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।

এসপি জানান, আসামিরা যতই ক্ষমতাবান হোক না কেন দোষী সাব্যস্ত হলে কেউ পার পাবে না।

(ঢাকাটাইমস/৩১জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :