হাজারো মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় পিরোজপুরে মেজর জিয়ার জানাজা

সৈয়দ মাহফুজ রহমান
ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩১ জুলাই ২০১৭, ২২:১৪ | প্রকাশিত : ৩১ জুলাই ২০১৭, ২০:৫৭

ঢাকা থেকে মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিনের মরদেহ নিয়ে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তার স্বজনরা। দুপুরে পথে অপেক্ষমা খুলনা ও বাগেরহাট এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা তার কফিনে শ্রদ্ধা জানান।

পরে সন্ধ্যা ৬টায় তার মরদেহ পিরোজপুর শহরে পৌঁছলে সেখানে সমবেত হাজার হাজার মানুষ তাকে শেষবারের মত দেখতে আসেন।

এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পিরোজপুর জিলা স্কুল মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নিতে সোমবার সকাল থেকেই পিরোজপুর ও আশপাশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন জিলা স্কুল মাঠে। মেজর জিয়া উদ্দিনের জানাজায় অংশ নেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাবেক সাংসদ অধ্যক্ষ শাহ আলম, জেলা প্রশাসক খায়রুল আলম, পিরোজপুর পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক, উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান খালেক, বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যাবসায়ী, প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ জনসাধারণ।

মঙ্গলবার সকাল ৯টায় আফতাব উদ্দিন কলেজে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে পিরোজপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার মরদেহ রাখা হবে সর্বসাধারনের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। এরপর দুপুরে গার্ড অব অনার শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শহরের পাড়েরহাট রোডস্থ নিজ বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

এদিকে বুধবার বিকাল ৩টায় গোপাল কৃষ্ণ টাউন হল মাঠে নাগরিক শোক সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে শনিবার বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জানাজা শেষে বিকাল ৩টার দিকে জিয়াউদ্দিনের কফিন আনা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

শ্রদ্ধা নিবেদনের শুরুতে ঢাকা জেলা প্রশাসনের একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল জাতীয় পতাকায় মোড়ানো এই মুক্তিযোদ্ধার কফিনের সামনে গার্ড অব অনার দেয়।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে মেজর জিয়াউদ্দিনের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, জাসদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

গত ১ জুলাই হঠাৎ লিভার জটিলতায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১২ জুলাই রাত ৩টায় এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। শনিবার রাতে তার মরদেহ ঢাকায় আনা হয়।

রাতে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে রাখার পর সকালে মরদেহ নেয়া হয় তার ধানমন্ডির বাসায়।

মুক্তিযুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিলের অধীনে সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে সুন্দরবন অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দেন মেজর জিয়াউদ্দিন।

কর্নেল তাহেরের অনুসারী জিয়া উদ্দিন ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পর সুন্দরবনে আশ্রয় নেন। পরে সুন্দরবনে সেনা অভিযানে গ্রেপ্তার হন তিনি। সামরিক আদালতে বিচারের নামে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পাশাপাশি জিয়া উদ্দিনকেও ১২ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল। ১৯৮০ সালে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পান তিনি।

আশির দশকে এইচ এম এরশাদ সরকারের সময় বেশ কিছুদিন সিঙ্গাপুরে অবস্থানের পর দেশে এসে নিজের এলাকায় চলে যান জিয়াউদ্দিন। এই মুক্তিযোদ্ধা পরে ‘সুন্দরবন বাঁচাও’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলেন এবং সুন্দরবনে মৎস্য ব্যবসা শুরু করেন। স্থানীয়ভাবে তাকে ডাকা হত সুন্দরবনের ‘মুকুটহীন সম্রাট’ নামে।

(ঢাকাটাইমস/৩১জুলাই/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :