নিজের প্রতিষ্ঠিত মসজিদের পাশে সমাহিত হবেন মুন্নু

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ আগস্ট ২০১৭, ২০:০২

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক মন্ত্রী ও এমপি শিল্পপতি হারুনার রশিদ খান মুন্নুকে আগামীকাল বুধবার তার গ্রামের বাড়িতে সমাহিত করা হবে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জ্যেষ্ঠ কন্যা, মুন্নু গ্রুপের এমডি ও বিএনপি নেত্রী আফরোজা খান রিতা বর্তমানে লন্ডন অবস্থান করছেন। আগামীকাল সকালে তাঁর ঢাকার ফেরার কথা রয়েছে। তিনি দেশে ফিরলেই শুরু হবে মুন্নুর দাফন প্রক্রিয়া।

মুন্নুর কনিষ্ঠ কন্যা ফিরোজা মাহমুদ পারভীন সাবেক জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের স্ত্রী।

মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক আবদুল আউয়াল জানান, মঙ্গলবার হারুনার রশিদ মুন্নুর মরদেহ ঢাকায় বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। বুধবার তাঁর ছয়টি জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে।

রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রথম জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ধামরাইয়ের মুন্নু সিরামিকসে তাঁর মরদেহ নেয়া হবে। এরপর তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে মানিকগঞ্জ শহরে। সেখানে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে জানাজা শেষে এই রাজনীতিবিদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর জন্মস্থান গ্রামের বাড়ি জেলার হরিরামপুর উপজেলার পাটগ্রামে। পাটগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পঞ্চম জানাজা হবে।

ষষ্ঠ ও শেষ জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মাঠে। এরপর গিলন্ড এলাকায় মুন্নু সিটিতে নিজ হাতে গড়া মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হবে।

বার্ধক্যজনিত কারণে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গিলন্ড এলাকায় মুন্নু সিটির নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন হারুনার রশিদ খান মুন্নু। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

তার মৃত্যুতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ (ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয়) নাঈমুর রহমান দুর্জয়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দিন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম খান শান্ত গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ জুলাই শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হারুনার রশিদ খান মুন্নুকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুটা উন্নতি হওয়ায় সেখান থেকে গতকাল সোমবার বিকালে মানিকগঞ্জের মুন্নু সিটির বাসভবনে ফিরে আসেন তিনি। এরপর ভোরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার নির্মিত স্থানীয় মুন্নু মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে স্ত্রী হুরুন নাহার, দুই মেয়ে আফরোজা খান রিতা ও ফিরোজা মাহমুদ পারভীনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

বর্ণাঢ্য জীবন

প্রয়াত মুন্নু বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে মানিকগঞ্জ-২ আসন এবং ২০০১ সালে মানিকগঞ্জ-২ ও মানিকগঞ্জ-৩ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে গঠিত চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন দপ্তরবিহীন মন্ত্রী।

মুন্নু আর্ট প্রেসের মাধ্যমে তাঁর যে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছিল, তার পূর্ণতা পায় মুন্নু গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। তিনি মুন্নু সিরামিক, মুন্নু জুটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, মুন্নু ফেব্রিকস ও মুন্নু অ্যাটায়ার লিমিটেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।

মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে রেখেছেন অনন্য অবদান। মুন্নু মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, মুন্নু নার্সিং ইনস্টিটিউট, মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন।

তিনি ১৯৩৩ সালের ১৭ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে মানিকগঞ্জ মডেল হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, জগন্নাথ কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক (পাস) এবং পরবর্তী সময়ে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট (সিএ) কোর্স সম্পন্ন করেন।

দলীয় কর্মসূচি

এই নেতার মৃত্যুতে জেলা মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার- এই তিন দিন শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা বিএনপি। এই দিনগুলোতে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন শাখা দলীয় কার্যালয়ে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ এবং জেলা শহরের দলীয় কার্যালয়ে শোক বইতে স্বাক্ষর কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। আগামী শুক্রবার জুমার নামাজের পর জেলায় মসজিদসমূহে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০১আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :