বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত মেজর জিয়া

সৈয়দ মাহফুজ রহমান, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ আগস্ট ২০১৭, ২২:৫০

বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত হলেন মুক্তিযুদ্ধে ৯ নং সেক্টরের সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম স্বাক্ষী পিরোজপুরের কৃতি সন্তান মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ।

মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টায় বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর একটি চৌকশ দল গার্ড অব অনার প্রদান শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়।

এরপর যশোর ৫৫ পদাধিক ডিভিশনের ব্রিগেডিয়ার মাইনুল রহমান মরহুমের পরিবারের কাছে জাতীয় পতাকা হস্তান্তর করেন। পিরোজপুর শহরের পাড়েরহাট রোডের পারিবারিক কবর স্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ছয়টায় তার মরদেহ পিরোজপুর শহরে পৌঁছলে সেখানে সমবেত হাজার হাজার মানুষ তাকে শেষবারের মত দেখতে আসেন। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পিরোজপুর জিলা স্কুল মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নিতে সোমবার সকাল থেকেই পিরোজপুর ও এর পার্শবর্তী বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন জিলা স্কুল মাঠে। তার জানাজায় শোকাহত মানুষের ঢল নামে।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিতে¦ সচিবালয়ে মন্ত্রীসভার বৈঠকের শুরুতে এ মহান মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে গভীর শোক জানানো হয়। মুক্তিযুদ্ধের এই বীর সেনানীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গভীর শোক জানিয়েছেন।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা থেকে মেজর জিয়া উদ্দিনের মরদেহ নিয়ে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তার স্বজনরা। দুপুরে পথে অপেক্ষমান খুলনা ও বাগেরহাট এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা তার কফিনে শ্রদ্ধা জানান।

মেজর জিয়ার মৃত্যু উপলক্ষ্যে বুধবার বিকাল ৩টায় গোপাল কৃষœ টাউন হল মাঠে নাগরিক শোক সভা অনুষ্ঠিত হবে।

গত ১ জুলাই হঠাৎ লিভার জটিলতায় অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১২ জুলাই রাত ৩টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

শনিবার রাতে তার মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। তার মৃত্যুর খবর শোনার পরের দিন থেকে পিরোজপুরে মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ কালো ব্যাজ ধারণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিলের অধীনে সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে সুন্দরবন অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দেন মেজর জিয়াউদ্দিন।

কর্নেল তাহেরের অনুসারী জিয়া উদ্দিন ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পর সুন্দরবনে আশ্রয় নেন। পরে সুন্দরবনে সেনা অভিযানে গ্রেপ্তার হন তিনি। সামরিক আদালতে বিচারের নামে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পাশাপাশি জিয়া উদ্দিনকেও ১২ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছিল। ১৯৮০ সালে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পান তিনি।

আশির দশকে এইচ এম এরশাদ সরকারের সময় বেশ কিছুদিন সিঙ্গাপুরে অবস্থানের পর দেশে এসে নিজের এলাকায় চলে যান জিয়াউদ্দিন।

এই মুক্তিযোদ্ধা পরে ‘সুন্দরবন বাঁচাও’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলেন এবং সুন্দরবনে মৎস্য ব্যবসা শুরু করেন। স্থানীয়ভাবে তাকে ডাকা হত সুন্দরবনের ‘মুকুটহীন স¤্রাট’ নামে।

(ঢাকাটাইমস/০১আগস্ট/প্রতিনিধি/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :