সন্তানের ওপর চাপ না বাড়িয়ে তাদের বন্ধু হোন

​ইফতেখায়রুল ইসলাম
 | প্রকাশিত : ০২ আগস্ট ২০১৭, ১৫:৫৪

আপনি কি কখনো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন? কখনো কি দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত কারও কাছে গিয়েছিলেন? যদি না গিয়ে থাকেন তবে আপনার এই অর্থবহ জীবনের তাৎপর্য আপনি হয়তো পুরোপুরি কখনোই খুঁজে পাবেন না।

পার্থিব এই জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি হলো সর্বশক্তিমান প্রদত্ত জীবন। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে যে মানুষটি; জিজ্ঞেস করুন তাকে এই জীবনের, এই বেঁচে থাকার অর্থ কী? বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি মানুষের কী নিরন্তর প্রচেষ্টা! অথচ কারো কাছে এই অমূল্য জীবন হয়ে উঠেছে অর্থহীন এবং যার পরিণতি আত্মহত্যা। কিন্তু কেন?

সাম্প্রতিক কয়েকটি আত্মহত্যা সম্পর্কে জানতে গিয়ে যা জানলাম তা আমাকে বিস্মিত করেছে। গত ২ মাস আগে ৩৫ বছর বয়সী এক নারী আত্মহত্যা করলেন। কারণ মেয়ের জন্মদিনে তাঁর স্বামী একটি ছোট্ট কেক নিয়ে এসেছেন; পরবর্তী সময়ে কিছুটা বাকবিতণ্ডা এবং ক্রোধের বশে তার আত্মহত্যা।

১৭ বছর বয়সী ছেলে রাত সাড়ে আটটায় বাইরে যেতে চেয়েছে বন্ধুদের সঙ্গে। বন্ধুরা ভালো নয়, তাই বাবার বাঁধা এবং ছেলের আত্মহত্যা।

স্ত্রী কাজ করেন বাইরে, স্বামী বাসায় বাচ্চাকে লালন পালন করেন। পরবর্তী সময়ে নিজেদের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি এবং ফলাফল স্বামীর আত্মহত্যা।

তারা প্রত্যেকে একেক বয়সের কিন্তু সকলের আত্মহত্যার পেছনের কারণ ঘুরেফিরে একই, দুঃখবোধ এবং তা থেকে থেকে সৃষ্ট বিষন্নতাই এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে দায়ী। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু তরুণের এই পথ বেছে নেয়াও ব্যর্থতা থেকে আসা বিষন্নতার ফলাফল।

অস্থিরতা, নানামুখী চাপ, সোশ্যাল মিডিয়ার ঋণাত্মক ব্যবহারসহ আরও কিছু বিষয় এই পথ বেছে নেয়ার পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

আমরা বাবাকে খুব কাছে না পেলেও মাকে অনেক কাছে পেতাম। এতে আমাদের মধ্যে মতামত আদান প্রদানে কোনো ঘাটতি আসতো না। ব্যস্ততম জীবনে ছোট পরিবারে থাকা, যান্ত্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে চলা এই আমরা নিজেরাই নিজেদের ক্রমাগত দূরে সরিয়ে নিচ্ছি মায়া, মমতা ও ভালবাসার বন্ধন থেকে, যা আমাদের প্রতিনিয়ত আত্মকেন্দ্রিক করে তুলছে। আর এই আত্মকেন্দ্রিকতাই অবসাদগ্রস্ত হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে আমাদের জীবনে প্রকৃত বন্ধুদের জায়গা আজ দখলে নিয়েছে ভার্চুয়াল বন্ধুরা। কিন্তু তারা সেই স্বাভাবিক বন্ধুত্বের জায়গাটি দখল করতে পারছে না, সেখানে চলছে শুধু এক্সিবিশনিজম।

আমাদের এক স্যার বলেছিলেন, "জীবনে সুখী হতে চাইলে প্রত্যাশাকে সংকুচিত করো" যার প্রত্যাশা যত কম, তার সুখ তত বেশি।

তাই বাবা মায়েরা সন্তানের ওপর চাপ না বাড়িয়ে দয়া করে তাদের বন্ধু হোন। সন্তান আপনার কাছে শিখে শিখে ঠিক একই রকম আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। এতে তার চরম বিপদেও সে ভাবতে শিখবে তার বলার মত কেউ আছে, তাকে শোনার মত কেউ আছে। আমাদের তরুণ প্রজন্মের সেই বলার মত মানুষটা থাকা চাই। সেই শুনবার মত মানুষটা থাকা চাই।

এভাবে প্রতিটা সম্পর্কেই যদি প্রত্যাশার বিশাল চাপ পরিহার করা যায় তবে বহু অসংগতি ও আত্মহত্যার মত সামাজিক সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

ক্ষণিকের ক্রোধ বা বিষন্নতা যে দ্বারে নিয়ে যায় সেখান থেকে টানেলের শেষপ্রান্তের আলোক বিন্দুটাকে আবারও খুব আপন মনে হতে থাকে, আবারও ফিরে আসতে মন চায়। কিন্তু হায়। সেই ভুলের মাশুল শোধরানো দায়। আশা নিরাশায় পরিণত হয়ে স্রোতস্বিনী নদী হয়ে যায় এক মৃত নদী।

জীবন সুন্দর, সুন্দর এই বেঁচে থাকা শুধু পাশের মানুষটির নয়, তারও পাশের মানুষটির বিপদে একটু পাশে থেকে বহতা নদীর গতি আনয়নে আমাদেরই পাশে দাঁড়াতে হবে।

জীবন হয়তো তখনি হয়ে উঠবে অর্থবহ। তাৎপর্যপূর্ণ এ জীবনের স্বার্থকতা তো এখানেই।

লেখক: ডেমরা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি)

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :