ঝিনাই নদীতে বিলীন চার শতাধিক বাড়ি-ঘর

নিজস্ব প্রতিবেদক,টাঙ্গাইল
 | প্রকাশিত : ০২ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৩৬

টাঙ্গাইলের বাসাইলে গত এক সপ্তাহে ভাঙনে প্রায় চার শতাধিক বাড়ি-ঘর ঝিনাই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও আরো প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।

গত বর্ষা মৌসুমে ঝিনাই নদীর প্রবল স্রোতে অনেক ফসলি জমি, প্রায় দুই শতাধিক বসতবাড়ি ও সামাজিক বনায়নের বাগান বিলীন হয়ে নদীরপাড়ের অসহায় মানুষ শত কষ্টে টিকে ছিল। কিন্তু এ বছর উজান থেকে নেমে আসা পানি ও বিরামহীন বর্ষণে ঝিনাই নদীতে প্রবল স্রোত সৃষ্টি হয়। এতে নদী তীরবর্তী উপজেলার কাশিল, কাঞ্চনপুর, ফুলকি ও হাবলা ইউনিয়নের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এতে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কাজিরাপাড়া, বিলপাড়া, মানিকচর ও আদাজান গ্রামে প্রায় ৭০টি, হাবলা ইউনিয়নের বিলপাড়ায় ১০টি, কাশিল ইউনিয়নের দাপনাজোর, দেউলী, কামুটিয়া, নথখোলা, কাশিল, থুপিয়া, নাকাছিম ও বিয়ালা এলাকায় দুই শতাধিক, ফুলকি ইউনিয়নের দোহার, হাকিমপুর, জশিহাটি পশ্চিমপাড়া এবং একঢালা এলাকায় ৪০টিসহ নদী তীরবর্তী এলাকায় প্রায় চার শতাধিক ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনে ভিটামাটি সহায়-সম্বল হারিয়ে প্রায় ৪ শতাধিক পরিবারের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, গত এক সপ্তাহে ঝিনাই নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ভাঙনে অনেক ফসলি জমি ও ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে আরো বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এলাকার অধিকাংশ মানুষ ফসলি জমি ও ভিটাবাড়ি রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে ছিন্নমূলদের তালিকায় কয়েক হাজার মানুষ বাড়বে। কৃষক পরিবারগুলো অসহায় হয়ে পড়বে।

স্থানীয়দের অভিযোগ প্রায় তিন বছর আগে ঝিনাই নদীতে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু উত্তোলনের পর থেকে এ এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। তারপর থেকে প্রতি বছরই অনেক আবাদী জমিসহ ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত বছরও এ এলাকার প্রায় ২ শতাধিক ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা আরো বলেন, বর্ষা শেষ হলেই ঝিনাই নদী বালু খেকোদের দখলে থাকে। প্রশাসনকে বারবার জানালেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয় না। বালু খেকোরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলাও যায় না। প্রতি বছর নদী থেকে ব্যাপক হারে বালু উত্তোলনের ফলে এ এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েই চলছে।

ভাঙন কবলিত এলাকা কাঞ্চনপুরের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আশরাফুজ্জামান বক্তার বলেন, কাঞ্চনপুর কাজিরাপাড়া, কাঞ্চনপুর বিলপাড়া, মানিকচর এলাকায় প্রায় শতাধিক ভিটাবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত বছরও এসব এলাকার অর্ধশতাধিক ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতি বছর সরকারিভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এদের তালিকা নিলেও কোন প্রকার অনুদান দেয়নি।

কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা রাজিক বলেন, কাশিল ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত ঝিনাই নদীর তীরবর্তী এলাকা দাপনাজোর, দেউলী, কামুটিয়া, নথখোলা, কাশিল, থুপিয়া, নাকাছিম ও বিয়ালা গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বসতভিটা হারিয়ে অনেকে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। এই মুহূর্তে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

ফুলকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ঝিনাই নদী তীরবর্তী দোহার, হাকিমপুর, জশিহাটি পশ্চিমপাড়া ও একঢালা এলাকায় প্রায় ৪০টি ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গছে। এছাড়াও অনেক কৃষকের আদাবী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

কাঞ্চনপুর কাজিরাপাড়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত খুসরু খান জানান, আমার ভিটাবাড়ি যে টুকু ছিল, সবই নদীতে চলে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে বসবাস করার মতো জায়গাটুকুও নেই। সাময়িকভাবে রাস্তার পাশে ঘর বানিয়ে রয়েছি।

ক্ষতিগ্রস্ত নুর ইসলাম, শাহাদত ও নয়েজ আলীসহ অনেকেই বলেন, প্রতি বছর সরকারিভাবে শুধু ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরিই করা হয় কিন্তু কোন অনুদান দেয়া হয় না।

বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল ইসলাম বলেন, ভাঙনের বিষয়ে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানোর পরও তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ঝিনাই নদী থেকে একটি মহল অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে প্রতি বছর ভাঙনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সায়মা আক্তার বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা আমি পরিদর্শন করেছি। ভাঙনের বিষয়টি টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ বলেন, আমি ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। অতিদ্রুত এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২আগস্ট/আরকে/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :