আইনজীবীদের দ্বিধাবিভক্তিতে উদ্বিগ্ন প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ আগস্ট ২০১৭, ২৩:৪৬

আইনজীবীদের দ্বিধাবিভক্তিতে ভবিষ্যত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে উদ্বিগ্নের কথা জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেছেন, আইনজীবীরা আজ স্পষ্ঠত দ্বিধাবিভক্ত। একজন একপক্ষে কথা বললে অন্যপক্ষ তার বিপক্ষে কথা বলেন। এভাবে চললে আইনের শাসনের ভবিষ্যত নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন।

সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এবি মাহমুদ হোসেনের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে বুধবার আয়োজিত এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।

এসকে সিনহা বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচারককে ভাল রায় লিখতে আইনজীবীরা সাহায্য করবেন। কিন্তু সেই রকম আইনজীবী দিন দিন কমে যাচ্ছে। এটা খুবই উদ্বেগের। দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আইনজীবীদের পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করতে হবে। তা না হলে যে সভ্যতা পেয়েছি তা হারিয়ে মধ্য যুগের বর্বরতা ফিরে আসবে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, অষ্টম সংশোধনীর মামলায় আমরা দেখেছি দলমত নির্বিশেষে গোটা আইনজীবী সমাজ আইনের শাসন রক্ষায় একসঙ্গে ঝাপিয়ে পড়েছেন। আজ আমরা সেই ভূমিকার কথা ভুলে যাচ্ছি। আমরা আইনের শাসনের কথা ভুলে যাচ্ছি। তিনি বলেন, লর্ড ডেনিং। একজন প্রখ্যাত বিচারপতি। তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার মতো লোকেরা দুশ বা আড়াইশ বছর আগে যে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন, একবিংশ শতাব্দিতে এসে আজ আমরা সে সাহস দেখাতে পারছি না। আজ পৃথিবীতে উগ্রবাদ, ক্ষমতার লড়াই, ব্যবসা, টাকার পাহাড় গড়ায় ব্যস্ত। কেউ নিজের অবস্থান নিয়ে সন্তষ্ট নই।

তিনি বলেন, ১৯৮২ সালের আগে যে সুপ্রিম কোর্ট দেখেছি আজ সেই সুপ্রিম কোর্ট নেই। এজন্য আইন পেশায় যারা আছেন তারাই অনেকাংশে দায়ী। আজ সত্যিকারের দক্ষ আইনজীবী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দিনে দিনে দক্ষ আইনজীবী বিলীন হয়ে যাচ্ছেন। এক শ্রেণির আইনজীবী আছেন যারা শুধুই টাকার দিকে ছুটছেন। মক্কেলের কি হলো সেদিকে তাদের খেয়াল থাকে না। তাদের টাকা হলেই হলো। তাদের ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি। যে কোনোভাবে ক্ষমতায় যাওয়া বা টাকা কামানোর দিকে নজর। এ পথ পরিহার করে আইনজীবীদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি। তিনি গরিব বিচার প্রার্থীদের পক্ষে বিনা টাকায় মামলা পরিচালনা করতে আইনজীবীদের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, শুধুই আইনজীবী নন, আজ দক্ষ বিচারপতিরও অভাব। আর ভাল আইনজীবী না হলে ভাল বিচারকও পাওয়া যায় না। কারণ অধিকাংশ বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয় আইনজীবীদের মধ্য থেকে। তাই দক্ষ বিচারক করতে একটা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করা দরকার।

সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেনের সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জমির বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সৈয়দ এবি মাহমুদ হোসেন স্মৃতি সংসদ এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।

ড. কামাল হোসেন বলেন, একসময় পেশাগত দক্ষতা, জ্ঞান ও সততার ভিত্তিতে মানুষের আস্থা অর্জন করতো। দলীয় ভিত্তিতে আস্থা অর্জন করতো না, দলীয় চিন্তাভাবনা থাকতো না।

ড. মোহাম্মদ জমির বলেন, বিচারপতি সৈয়দ এবি মাহমুদ হোসেন নৈতিকতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তার মতো লোক হলে দেশের উন্নতি হবে। নৈতিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা পাবো। দেশে রাজনৈতিক অবক্ষয়ের কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে তা থেকে রক্ষা পাবো।

বক্তারা সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এবি মাহমুদ হোসেনকে ধার্মিক, সৎ, ন্যায়পরায়ন ও উদার মনাষিকতার মানুষ হিসিবে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, বিচারপতি সৈয়দ এবি মাহমুদ হোসেন ধার্মিক ছিলেন। কিন্তু তার মধ্যে দর্মীয় গোড়ামী ছিল না।

(ঢাকাটাইমস/০২আগস্ট/এমএবি/জেডএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমারকে কারাগারে পাঠালেন আদালত

৩১ মার্চ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম

বিচারপতির আসনে ছাদ বেয়ে পানি, বিচারকাজ বন্ধ ১৮ মিনিট

আগাম জামিন পেলেন অ্যাডভোকেট যুথিসহ চার আইনজীবী

জামিন নিতে এসে রায় শুনে পালিয়ে গেলেন হলমার্ক কেলেঙ্কারির আসামি

তিন মাসের মধ্যে সালাম মুর্শেদীকে গুলশানের বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ

হলমার্ক কেলেঙ্কারি: তানভীর ও তার স্ত্রীসহ নয়জনের যাবজ্জীবন

সুপ্রিম কোর্ট বারে মারামারি: নাহিদ সুলতানা যুথীর জামিন শুনতে নতুন বেঞ্চ নির্ধারণ

পি কে হালদারের ১৩ সহযোগীর সাজা বাড়ানোর আবেদন দুদকের

ড. ইউনূসের সাজা ও দণ্ড স্থগিতের আদেশ হাইকোর্টে বাতিল

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :