ঢাকা-১৫: বিএনপির প্রার্থী ‘স্থানীয়’ না ‘বহিরাগত’
রাজধানী ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন ঢাকা-১৫। বিএনপির সর্বশেষ অংশ নেয়া নির্বাচনে এই আসনে দলের প্রার্থী উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান পরাজিত হন আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদারের কাছে।
হামিদুল্লাহ খান শক্তিশালী প্রার্থী হলেও ‘বহিরাগত’ (মিরপুরের আদি বাসিন্দা নন) ছিলেন বলে নির্বাচনে তার পরাজয়ের কথা তখন বলাবলি হয়েছিল।
মিরপুর-কাফরুল এলাকা নিয়ে গঠিত এই আসনের নির্বাচনে স্থানীয় অধিবাসীদের বেশ বড় প্রভাব দেখা গেছে সব সময়। অধিকাংশ নির্বাচনে এখানে স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্য থেকে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরাই নির্বাচিত হয়েছেন। তাই প্রার্থী বাছাইয়ে ‘স্থানীয়’ না ‘বহিরাগত’ এই হিসাব-নিকাশ ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায় দলগুলোর সামনে।
সেই কথা মাথায় রেখে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা চান এবার স্থানীয় কোনো নেতাকে দলের প্রার্থী করা হোক। আর তাতে আসনটিতে জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে মনে করেন তারা।
এই আসনে কে হবেন বিএনপির নতুন প্রার্থী তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা থাকলেও যুবদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান বিএনপির হাইকমান্ডের পছন্দের শীর্ষে আছেন বলে জানা গেছে।
আবার বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ করছেন ঢাকা-১৫ আসনে মনোনয়ন পেতে। তার দাবি, বিএনপির হাইকমান্ড তাকে এলাকায় কাজ করতে বলেছেন।
নবম সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান মারা যাওয়ায় আগামী নির্বাচনের জন্য আপাতত মামুন হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান ইরান সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দৌড়ঝাঁপ করছেন।
মামুন হাসান মিরপুরের আদি বাসিন্দা হলেও ডা. ইরানের বাড়ি পিরোজপুরে। সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে প্রায় দুই শতাধিক মামলার আসামি মামুন হাসান আগামী নির্বাচন সামনে রেখে স্থানীয় পর্যায়ে মাঠ তৈরির কাজ করছেন।
তবে খালেদা জিয়া ইরানকে এলাকায় কাজ করতে বলেছেন বলে গুঞ্জনের কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় না বহিরাগত প্রার্থী ধানের শীষ নিয়ে লড়বেন, মিরপুরের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ধোঁয়াশায় আছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের কর্মী ইব্রাহীম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দল নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে অবশ্যই স্থানীয় কাউকে মনোনয়ন দিতে হবে। কারণ অতীতে বহিরাগত প্রার্থী দেয়ায় নির্বাচনের ফল বিপক্ষে গেছে।’
মিরপুর থানা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আগের মতো বহিরাগত কাউকে প্রার্থী হিসেবে আগামী নির্বাচনে চাপিয়ে দেয়া হয় কি না তা নিয়ে সবাই টেনশনে আছে। দলের কাছে আমাদের আবেদন এবার যেন ভেবেচিন্তে প্রার্থী দেয়া হয়।’
দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত মামুন হাসান এর আগে মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি ছিলেন। গত আন্দোলনের সময় তার বিরুদ্ধে দুই শর মতো মামলা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন নেতা বলেন, মামুন হাসানের বাড়ি মিরপুরের মণিপুরে। তার বাড়ি শ্বশুরবাড়িও এখানে। মামলার কারণে এখনো বাড়িতে থাকতে পারছেন না তিনি। বাড়িঘর ভাঙচুর হয়েছে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময়। দলে তার অবদান আছে। তাই তিনি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন আমরা এমনটাই মনে করি।’
মনোনয়নপ্রত্যাশী মামুন হাসানও মনে করেন দলের জন্য তার ত্যাগের মূল্যায়ন করবেন শীর্ষ নেতারা। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘এই আসনে বিএনপির অবস্থা আগের মতো নেই। নানামুখী চাপ উপেক্ষা করে এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে। তাদের বিপদে-আপদে থাকার চেষ্টা করি। তবে এলাকাবাসী যাকে চাইবে দল তাকেই মনোনয়ন দেবে বলে আশা করি। আর নেতাকর্মীদের মনোভাব এটুকু জানি, বহিরাগত কাউকে মনোনয়ন দিলে স্থানীয়রা তা মানবে না। আর আমি দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করব।’
দলের জন্য নিজের অবদানের কথা তুলে ধরে মামুন বলেন, ‘আমি আজও পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ইতিমধ্যে ২০০ মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। আরো কত মামলা আছে আমি জানি না। আশা করি দল এর মূল্যায়ন করবে।’
অন্যদিকে মিরপুরের এই আসনের স্থানীয় বাসিন্দা না হলেও জোটে তার অবদানের কারণে তিনি মনোনয়ন পাওয়ার অন্যতম দাবিদার বলে জানান লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিএনপি জোটের সঙ্গে ১২ বছর ধরে আছি। সরকারি দলের হামলার শিকার হয়েছি, একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছি। জোটের পক্ষ থেকে আমি এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার অন্যতম দাবিদার।’
জোটের পক্ষ থেকে এ আসনে তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে তিনি বিজয়ী হবেন বলে আশা করেন ইরান। তার ভাষ্য, ‘এখানকার ৮০ ভাগ লোক আমাদের ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুত।’
গত ১২ জুলাই বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে সস্ত্রীক দেখা করার কথা উল্লেখ করে ইরান বলেন, ‘তিনি (খালেদা) আমাকে বলেছেন, এলাকায় কাজ করো। দেখি কী করা যায়।’
(ঢাকাটাইমস/০৪আগস্ট/মোআ)