এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্নার অনন্য উদ্যোগ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০১৭, ০৯:৫৪ | প্রকাশিত : ০৫ আগস্ট ২০১৭, ০৯:১০

বাল্যবিয়ের সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায় সে উদাহরণ তৈরি করেছেন সিরাজগঞ্জ সদর ও কামারখন্দের সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না। গত দুই বছরের উদ্যোগে কামরখন্দের পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলাকে অনেকটাই বাল্যবিয়ে ‍মুক্ত করা গেছে।

এই দুই উপজেলায় বাল্যবিয়ে নিরোধে যেসব কর্মসূচি পালন করা হয়, সেখানে যতদূর সম্ভব জনউপস্থিতি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে নারীদের সংখ্যা থাকে বেশি। বাল্যবিয়ের ক্ষতি কী, সেটি নাটিকা, গানের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে। পাশাপাশি কোথাও বিয়ে হচ্ছে খবর পেলেই প্রশাসন এবং সম্ভব হলে স্থানীয় সংসদ সদস্য গিয়ে তা বন্ধের চেষ্টা করছেন।

মেয়েদের ১৮ বছরের নিচে বিয়ে নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশে ২০১১ সালে প্রতি ১০০ জন মেয়ের মধ্যে ৬৭ জনের বিয়ে হতো ১৬ বছরের নিচে। বর্তমানে তা কমে ৫২ শতাংশে নেমেছে। তবে এই সংখ্যাটিও উদ্বেগজনক বলে সরকার এখনও নানা পদক্ষেপ চালু করেছে।

তবে দেশকে বাল্যবিয়ে মুক্ত কীভাবে করা যায়, সেটি করে দেখাচ্ছেন সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্না। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার ৯৪টি স্কুলের ৬০০ মেয়েকে দেয়া হয়েছে সাইকেল। এর ফলে কেবল এদের স্কুলে যাতায়াত সহজ হবে না, বাল্য বিয়ে রোধে উদ্যোগের প্রচারও হবে নিত্যদিন। আর এই উদ্যোগে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর নাতনি আলীজা হোসেন।

প্রধানমন্ত্রীর নাতনির নেতৃত্বে ৬০০ মেয়ে সাইকেল চালিয়ে বাল্যবিয়ে বিরোধী প্রচারে অংশ নেন। তাদের মাধ্যমে জনতা আবারও জানতে পারে এই বিষয়টি নিয়ে। এই আয়োজনেও সেখানে ১০ হাজারের মত মানুষ অংশ নেয়।

হাবিবে মিল্লাত ঢাকাটাইমসকে বলেন, গত কয়েক বছরে কমলেও এখনও বিশ্বে বাল্যবিয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এই বিষয়টি নিয়ে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন কাজ করছে, আর আমি এই ইউনিয়নে হেলথ অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করছি। এর অংশ হিসেবে কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি আমরা।’

হাবিবে মিল্লাত জানান, ২০১৫ সালে বাল্যবিয়ে নিয়ে সিরাজগঞ্জে প্রথম সচেতনতামূলক জনসভা করেন তারা। সেখানে জাতীয় সংসদের স্পিকার ছাড়াও বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অংশ নেন। কামারখন্দ উপজেলার হাজী কুরপআলী কলেজে প্রায় ৩০ হাজার নারী এই জনসভায় অংশ নেন। সেখানে বাল্যবিয়ের ক্ষতি নিয়ে প্রচার হয়।

এরপর স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিরা ক্রমাগত নানা কর্মসূচি চালিয়ে এলাকাবাসীকে এ বিষয়ে সচেতন করার কাজ চালিয়ে যান। স্কুলে স্কুলেও চলে প্রচার।

একই বছরের শেষ দিকে আইপিইউ এর সহযোগিতায় ওই বছরের শেষের দিকে একটি ওয়ার্কশপে বহুলি উইনয়নে জার্মান রাষ্ট্রদূত ও ২০ জন সংসদ সদস্য অংশ নেন। এরপর সেদিনও সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে এক সঙ্গে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার মানুষ অংশ নেন। এদের মধ্যে বেশি ছিলেন নারী।

হাবিবে মিল্লাত বলেন, ‘যেখানে বাল্যবিয়ে সেখানেই প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছি।’

-আপনারা কীভাবে তথ্য পান?

-দুই উপজেলায় ইউএনও আছেন, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বাররা আছেন, কাজিদেরকেও সচেতন করা হয়েছে। তাছাড়া ব্যাপক প্রচারের কারণে এলাকার ছেলেমেয়েরাও এখন বিষয়টি আমাদেরকে জানায়। তাদেরকে মোবাইল নম্বর দেয়া আছে।

-এই মডেলটি কি অন্য কোথাও কাজ করেছে?

-হ্যাঁ, রংপুরের পীরগঞ্জ, নেত্রকোণার মদন-মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরি, পটুয়াখালীর বাউফলেও একই প্রক্রিয়ায় কাজ চলছে। সেখানেও স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং উপজেলা চেয়ারম্যানরা বিষয়টির দেখভাল করছেন। সব এলাকাতেই বেশ সাফল্য এসেছে।

-সিরাজগঞ্জে আপনার নির্বাচনী এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও কি এই উদ্যোগ আছে?

-হ্যাঁ, আমরা জেলা সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে বাল্যবিয়ে রোধের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছি। কেবল সিরাজগঞ্জ নয়, ধীরে ধীরে সারা বাংলাদেশেই এটা ছড়িয়ে দেয়া হবে।

জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজউদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা সিরাজগঞ্জ সদর ও কামারখন্দকে বাল্যবিয়ে মুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছি। এ জন্য সব শ্রেণি পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আর সেই কাজটিই শুরু হয়েছে আমাদের এমপির নেতৃত্বে।’

কামারখন্দ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মতিন খান চৌধুরী বলেন, আমাদের এলাকাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত করতে কাজ শুরু হয়েছে। এ জন্য সরকার নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যও আন্তরিকতার সাথে আমাদের সহযোগিতা করছেন।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার মোহাম্মদ রায়হান বলেন, ‘দল মত নির্বিশেষে সবাই আমাদেরকে সহযোগিতা করলে গোটা জেলাকেই বাল্যবিয়ে মুক্ত করা সম্ভব।

ঢাকাটাইমস/০৫আগস্ট/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :