‘এই রায় কেমনে মানি’
বিশ্বজিত দাস হত্যা মামলার রায় হবে। শরীয়তপুরে তার বাড়িতে সকাল থেকেই অপেক্ষায় স্বজনরা। বাড়িতে বিশ্বজিতের স্বরণে তৈরি ভাস্কর্যের সামনে ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন মা কল্পনা রানী দাস। বিশ্বজিতের বাবা অনন্ত দাস নিজেও শোকাহত। তার পরও স্ত্রীকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু উচ্চ আদালতের রায়ের পর ভেঙে পড়েন অনন্ত দাসও।
এই মামলায় বিচারিক আদালত আট জনকে ফাঁসি ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। এই বিচার মেনে নিয়েছিল বিশ্বজিতের পরিবার। তারা আশায় ছিল, উচ্চ আদালতে এই রায় অনুমোদনের পর দণ্ড কার্যকর হবে, তাতে তাদের আত্মা কিছুটা হলেও শান্ত হবে।
শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর এলাকার বাড়িতে সকাল থেকেই স্বজন ও প্রতিবেশীরাও অপেক্ষায় ছিল। টেলিভিশন স্ক্রলে ছিল দৃষ্টি। বিকাল পৌনে পাঁচটা নাগাদ রায় প্রকাশের পর শুরু হয় সশব্দে কান্না। ফাঁসির দণ্ড হওয়া আট জনের মধ্যে ছয় জনেরই এই সাজা হবে না, এটা মানতেই পারছে না কেউ।
বিচারিক আদালতে ফাঁসির দণ্ড পাওয়া দুই জন খালাস হয়েছে, কেন চার জনের দণ্ড কমে যাবজ্জীবন হলো, সে প্রশ্নই এখন বড় হয়ে উঠেছে।
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্বজিৎকে। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর নিম্মআদালত ২১ জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করে। এরমধ্যে আট জনকে ফাঁসি ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডের রায় হাইকোর্টে অনুমোদনের দরকার হয়। একে বলে ডেথ রেফারেন্স। এই শুনানি এবং আসামিদের আপিল শুনানি এক সঙ্গে চলে এবং এই শুনানি শেষে রবিবার হাইকোর্ট রফিকুল ইসলাম শাকিল ও রাজন তালুকদারের ফাঁসি বহাল রাখলেও চার জনের ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। আর দুই জন পান খালাস।
বিশ্বজিতের মা কল্পনা রানী দাস বলেন, ‘এই রায় কেমনে হয়। আমার বিশ্বজিতরে কুপায়া মারল, সবাই দেখল। ভাবছিলাম সবার ফাঁসি হইব। কিন্তু হইল না। এই রায় কেমনে মানি?।’
বিশ্বজিতের বাবা অনন্ত দাস বলেন, ‘সারা দিন না খায়া, টেলিভিশনের সামনে বইসা ছিলাম রায় দেখার জন্য। কিন্তু এইটা কী রায় দেখলাম? সারা পৃথিবীর মানুষ দেখলো তারে কীভাবে কুপায়া মারছে, সেখানে কীভাবে দুই জনের ফাঁসি হয়। তাহলে বাকি আসামিদের কেন ফাঁসি হইল না। আমরা তো ন্যায়বিচার পাইলাম না।’
‘সরকারের কাছে দাবি থাকবে, তারা যেন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে আগের রায় বহাল রাখার ব্যবস্থা করে’ণ্ডক্ষোভের সঙ্গে বলেন বিশ্বজিতের বাবা।
ঢাকাটাইমস/০৬আগস্ট/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি