সালমান শাহের মৃত্যু রহস্যের জট খোলার আশায় পিবিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৭ আগস্ট ২০১৭, ২২:৪৬

চিত্রনায়ক সালমান শাহ আত্মহত্যা করেননি, তাকে খুন করা হয়েছে- এমন বক্তব্য অনলাইনের ভিডিও বার্তায় ছেড়েছেন এই মামলার আসামি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রাবেয়া সুলতানা রুবির। আর এই বক্তব্যকে এই মামলার জট খোলার উপায় হিসেবে দেখছে তদন্তের দায়িত্বে থাকা সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনস (পিবিআই)।

১৯৯৬ সালে সালমান শাহের মৃত্যুর পর থেকে এটা হত্যা না আত্মহত্যা-সে বিতর্ক চলছে। জনপ্রিয় এই নায়কের স্ত্রী সামিরা চৌধুরী একে আত্মহত্যা বললেও মা নীলা চৌধুরী ও বাবা কমরউদ্দিন চৌধুরী তা মেনে নিতে নারাজ ছিলেন। তারা তখন রুবিসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন। তবে এই ২১ বছরেও এই মামলার মীমাংসা হয়নি।

সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। এত সালমান শাহের মৃত্যুক আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। তবে প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা করেন। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। এরপর প্রায় ১২ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।

২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহের মা নীলুফার চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন।

পরে ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলুফার চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজির আবেদন দাখিল করেন।

নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। আদালত নারাজি আবেদনটি মঞ্জুর করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) তদন্তভার দেয়।

মামলাটিতে র‌্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়ার আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করেন।

২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ-৬ এর বিচারক ইমরুল কায়েস রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র‌্যাব মামলাটি আর তদন্ত করতে পারবে না বলে আদেশ দেন। ঘটনার ২০ বছর পর আলোচিত ওই মামলার তদন্তভার দেয়া হয় পিবিআইকে।

জানতে চাইলে পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) আবুল কালাম আজাদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রুবি ছিলেন সালমান শাহ’র বিউটিশিয়ান। সম্প্রতি তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। রুবির সঙ্গে আমরাও যোগাযোগের চেষ্টা করছি। কিন্তু তিনি দেশে নেই। এ কারণে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে তিনি যে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন তা বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করে দেখা হবে।’

রুবি পেশায় ছিলেন বিউটিশিয়ান, তিনি সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার সাত নম্বর আসামি ছিলেন।

সালমান শাহের মৃত্যুর ২১ বছর পর ভিডিওবার্তায় রুবি বলেন, সালমান শাহকে খুন করা হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন তার স্বামী আর সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা চৌধুরী। এই মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার আগ্রহের কথাও জানান রুবি।

সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী শুরু থেকেই বলে আসছিলেন তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আর এই ভিডিও প্রকাশের পর লন্ডন প্রবাসী এই নারী বলেছেন, তার দাবি এখন সত্য প্রমাণ হয়েছে। ছেলে হত্যার বিচারে দেশবাসীর সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি।

সোমবার তার প্রকাশিত ভাইরাল হয়ে পড়া ভিডিওবার্তার তথ্যকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করে পিবিআই।

মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সালমান শাহ হত্যা মামলাটি কয়েক পর্যায়ে তদন্ত হয়েছে। বর্তমানে এটি পিবিআই তদন্ত করছে। অনেক আলামতও নষ্ট হয়েছে। যে কারণে আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।’

ভিডিওবার্তায় যা বলেছেন রুবি

দুই মিনির ৫৯ সেকেন্ডের ভিডিও বার্তায় রাবেয়া সুলতানা রুবি অনেক কথাই বলেছেন। তবে তার মূল কথা হলো সালমান শাহকে খুনে জড়িত ছিলেন তার স্বামী যিনি চীনা নাগরিক চ্যান লিং চ্যান ওরফে জন চ্যান নামে বাংলাদেশে পরিচিত। চীনাদের দিয়ে এই খুন করানো হয়। এতে জড়িত ছিলেন সালমান শাহের স্ত্রী সামিরার পরিবারও।

(ঢাকাটাইমস/০৭আগস্ট/এএ/ডব্লিউবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :