কিশোরগঞ্জে সিরাজুল ইসলাম বীরবিক্রমের শাহাদতবার্ষিকী পালিত

আমিনুল হক সাদী, কিশোরগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট ২০১৭, ১৮:০০

সাহসী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সিরাজুল ইসলাম বীরবিক্রমের ৪৬তম শাহাদতবার্ষিকী কিশোরগঞ্জের পালিত হয়েছে।

শহীদ সিরাজের শাহাদতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের ইটনা সমিতি ও শহীদ সিরাজুল ইসলাম বীরবিক্রম স্মৃতি সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে।

১৯৭১ সনের ৮ আগস্ট সুনামগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর সাচনা পাক হানাদারদের হাত থেকে দখল মুক্ত করার লক্ষ্যে পরিচালিত রক্তক্ষয়ী সম্মুখযুদ্ধে তিনি শাহাদত বরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় এ যুদ্ধে তিনি কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দেন। ভয়াবহ এই যুদ্ধে মুক্তিসেনাদের প্রবল আক্রমণে ৩৬ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং এক পর্যায়ে পাকসেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে সাচনা বন্দর শক্রমুক্ত হয়। কিন্তু যুদ্ধ শেষে পলায়নরত পাকসেনাদের কাভারিং ফায়ারের একটি বুলেট শহীদ সিরাজের কপালে বিদ্ধ হলে তিনি গুরুতর আহত হন। সঙ্গে সঙ্গে মিত্র বাহিনীর হেলিকপ্টার যোগে ভারত নেয়ার সময় পথিমধ্যে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর লাশ নিয়ে হেলিকপ্টার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের নিকট টেকেরঘাটে অবতরণ করে। সেখানে খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।

মৃত্যুর মাত্র সাত দিন পূর্বে তিনি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তাঁর পিতাকে একটি পত্র লেখেন। সেই চিঠির প্রতিটি লাইনে ফুটে উঠেছে মাতৃভূমির প্রতি শহীদ সিরাজের নিখাঁদ ভালোবাসা।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার শহীদ সিরাজকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে এবং সাচনা নদী বন্দরের নামকরণ করা হয় সিরাজনগর।

শহীদ সিরাজুল ইসলাম ১৯৫২ সালে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার ছিলনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। যুদ্ধের শুরুতেই তিনি মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন এবং ভারতের আসামে ইকোয়ান ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে তিনি ৫নং সেক্টরের অধীনে সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে সাচনা যুদ্ধ ছাড়াও সিলেট ও সুনামগঞ্জ এলাকায় আরও অনেক যুদ্ধে বীরত্বের সাথে অংশগ্রহণ করেন। মরহুম মকতুল হোসেন ও গফুরুন্নেছার একমাত্র পুত্র শহীদ সিরাজ ছিলেন দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। শহীদ সিরাজ ছিলেন অবিবাহিত।

স্বাধীনতা পরবর্তী শহীদ সিরাজের পরিবারের কাহিনি অত্যন্ত করুণ। পুত্র শোকে তাঁর পিতা ১৯৭৩ সালে ইন্তেকাল করেন। একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে তাঁর মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং দীর্ঘদিন অপ্রকৃতিস্থ থাকার পর রোগে-শোকে ১৯৮৮ সালে তিনিও মারা যান। প্রতিকূল অবস্থার কারণে শহীদ সিরাজের চিঠিতে বর্ণিত ইচ্ছা মোতাবেক তার দুই বোনকে সুশিক্ষিত করে তোলা সম্ভব হয়নি। খুব সাধারণ ঘরে তাদের বিয়ে হয়। বড় বোন মনোয়ারা খাতুন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুরে ঘর-সংসার করছেন। ছোট বোন আনোয়ারা খাতুন তিন পুত্র ও দুই কন্যা রেখে ১৯৯২ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সাচনা নদী বন্দরকে সিরাজ নগর হিসেবে নামকরণের ঘোষণা দেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে নামকরণ কার্যকর হয়নি।

তাঁর স্মরণে জেলা সদরে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে এবং নিজ বাড়ি ইটনা উপজেলা সদরে ধনু নদীর উপর একটি সেতুর নামকরণ করা হয়েছে।

কিন্তু সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাটে অবস্থিত শহীদ সিরাজের কবর অযত্ন-অবহেলায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় যেকোনো সময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

শহীদ সিরাজের শাহাদতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের ইটনা সমিতি ও শহীদ সিরাজুল ইসলাম বীরবিক্রম স্মৃতি সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।

সাচনা নদী বন্দরের নাম সিরাজ নগর কার্যকর ও সুনামগঞ্জের টেকেরঘাটে শহীদ সিরাজের জরাজীর্ণ কবর সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদের প্রশাসক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ দেশপ্রেমিক জনগণের আহ্বান জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জস্থ ইটনা সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক ভুইয়াঁ, সাধারণ সম্পাদক মেহের উদ্দিন এবং শহীদ সিরাজুল ইসলাম বীরবিক্রম স্মৃতি সংসদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মারুফ আহমেদ।

(ঢাকাটাইমস/০৮আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :