সাগরে ধরা পড়লেও নদীতে দেখা নেই ইলিশের

ইকরামুল আলম, ভোলা এবং বরিশাল ব্যুরো
 | প্রকাশিত : ০৯ আগস্ট ২০১৭, ০৮:০৮

গত কয়েক দিন ধরে সাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়লেও ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় দেখা নেই ইলিশের। ভরা মৌসুমে ইলিশ না পেয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছে ভোলার উপকূলের জেলেরা।

বরিশালেও নদীতে ইলিশ মিলছে না। তবে সাগরে ধরা প্রচুর ইলিশ আসছে বরিশালের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে।

বছর কয়েক আগেও ইলিশের এ ভরা মৌসুমে মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ ধরা পড়ত। কিন্তু এখন নদীতে ইলিশ ধরা পড়ছে না। এর কারণ হিসেবে ডুবোচরকে দায়ী করছেন জেলে ও ইলিশ বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে ট্রলারের ইঞ্জিনের শব্দও নদী থেকে ইলিশ তাড়ানোর একটি কারণ বলছেন তারা।

জেলেরা জানান, জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু থেকে কার্তিকের শেষ পর্যন্ত ইলিশ ধরার মৌসুম। এর মধ্যে আষাঢ়-শ্রাবণ ইলিশের ভরা মৌসুম। এখন জালে ঝাঁেক ঝাঁকে ইলিশ পড়ার কথা। কিন্তু তারা হতাশ।

ভোলার দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া ইউনিয়নের বাঁধের পাড়ে থাকেন মো. হানিফ (৩৪)। মেঘনা নদীতে মাছ ধরে সংসার চলে তার। ইলিশের আকালে অচল হওয়ার পথে তার পাঁচ সদস্যের সংসার।

তিনি আরও বলেন, সোমবার ভোরে ফজরের আজানের আগে চার-পাঁচজন জেলে মিলে তারা নদীতে জাল ফেলেন। জাল তোলার পর মাত্র দুটি ইলিশ পান তারা। বিক্রি করে পাওয়া গেছে ২৫০ টাকা। তা-ও আবার চার ভাগ হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হানিফের মতো অনেক জেলে মেঘনায় ইলিশ না পেয়ে বেকার বসে আছেন। তারা জানান, ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে গেলে তাদের জ্বালানি তেল ও খাবার খরচই উঠতে চায় না। এ জন্য মাছ ধরতে না গিয়ে বসে আছেন।

মেদুয়া মাঝিরহাটের মো. ফারুক মাঝি (৩২) বলেন, মৌসুমের শুরুতে অনেক আশা নিয়ে তিনি জাল নিয়ে নদীতে যান। মাছ না পেয়ে শেষে তাকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। বারবার একই ঘটনা ঘটায় এখন ইলিশ ধরতে যাওয়ার উৎসাহও কমে গেছে তার। জ্বালানি তেলসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়াও তাদের মাছ ধরতে না যাওয়ার একটি বড় কারণ।

মদনপুরের জেলে সিরাজ মাঝি (৪৫), নাছির মাঝি (৩৫), নুরুল ইসলাম মাঝিসহ (৪৯) অনেক জেলে বলেন, ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে গেলে দুই-তিন হাজার টাকা খরচ হয়। প্রথম দিকে প্রতিবারে দুই-এক হালি করে ইলিশ পাওয়া গেলেও এখন মাছ পাওয়াই দায়। এতে খরচ ওঠে না। তাই তারা উৎসাহ পাচ্ছেন না।

ভরা মৌসুমেও মাছ না পড়ার কারণ হিসেবে সদর উপজেলার তুলাতুলির জেলে আ. মতিন মাঝি (৬১) জানান, ইলিশের উৎস হিসেবে পরিচিত ছিল মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেল। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পড়ত সেখানে। এখন সেখানে হরদম ট্রলার চলাচল করায় ইঞ্জিনের বিকট শব্দে ইলিশ আসে না। ওই চ্যানেলে একজন জেলে এখন দিনে দু-একটি ইলিশও পান না।

দৌলতখান মদনপুরের জেলে রহমত মুন্সি (৮০) বলেন, ‘ইলিশ মাছ আইবো কোইত্তন! নদীডার মাইদ্যে যে পরিমাণ চর পড়ছে, বাডা (ভাটা) ওইলে হাডু পানি থাহে। এই পানিতে আইয়ে সব জাটকা ইলিশ। হেগিন ধরি হালায় পিডাইন্যা জাইল্যারা। ওরা তো মাছেরে বড় অইতো দেয় না। আমরা পামু কুডে?’

২৭ বছর ধরে মাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত দৌলতখান গুপ্ত বাজারের ব্যবসায়ী আলম মাঝি (৫২) বলেন, নদীতে ডুবোচর রয়েছে। এতে পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় ইলিশ আসতে চায় না। এ ছাড়া ইলিশ ট্রলারের শব্দও ইলিশ তাড়াচ্ছে। বর্ষাকালে আগে যে পরিমাণ বৃষ্টি হতো, এখন তা হচ্ছে না। এই প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে জুন-জুলাই মাসেও ইলিশের দেখা নেই বলে মনে করেন তিনি।

সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কমকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ইলিশ মাছ চলাচলে যে পরিমাণ ¯্রােত প্রয়োজন নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে ওই পরিমাণ ¯্রােত নেই। তাই ইলিশ চলাচলে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় নদীতে ইলিশ কমে গেছে। তবে দু-এক সপ্তাহর মধ্যে ইলিশ কিছুটা বাড়বে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

বরিশালের মোকামে বাড়ছে ব্যস্ততা

আমাদের বরিশাল ব্যুরো জানায়, ইলিশের মৌসুম বেশ আগে শুরু হলেও ইলিশের সংকটে ছিল বরিশালের ব্যবসায়ীরা। তবে গত কদিন ধরে ফিশিং বোটে (সাগরে মাছ ধরার নৌযান) ধরা ইলিশের আমদানি বাড়ছে বরিশাল পোর্টরোডস্থ বেসরকারি অবতরণ কেন্দ্রে। তবে ব্যবসায়ীদের হিসাবে এখনো ইলিশের আমদানি গত বছরের এই সময়ের চেয়ে অনেক কম।

মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল জানান, “গত বছর এ সময় ৪ হাজার মণ ইলিশ এসেছে বরিশালের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। আর এখন আসছে মাত্র এক থেকে দেড় হাজার মণ ইলিশ। তাও আমাদের স্থানীয় নদীর নয়, সাগরের ইলিশ।”

তবে মৌসুম শুরুর পর দিন পনেরো কোনো ইলিশ ধরা পড়েনি। সে ক্ষেত্রে গত কয়েক দিন ধরে ইলিশ ধরা পড়ছে। এটা ভালো লক্ষণ বলে জানান নীরব হোসেন। তিনি আশা করছেন, দিন যত যাবে তত বেশি মাছ ধরা পড়বে জেলেদের জালে।

স্থানীয় মৎস্য আড়তদার জহির সিকদার বলেন, ‘ওভাবে এখনো মাছ আসতে শুরু করেনি বরিশালে। তে মাছের পরিমাণ আরো বাড়লেও বিগত সময়ের লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নেয়া যাবে।’

শাহাদাত নামে ইলিশ মোকামের এক শ্রমিক জানান, মাছ আসতে শুরু করলেও দর সেভাবে এখনো কমেনি। হাজার টাকার মতো মণপ্রতি দর কমেছে ইলিশের। তবে আমদানি বাড়লে দর আরও কমবে।

(ঢাকাটাইমস/৯আগস্ট/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :