ষোড়শ সংশোধনীর পর্যবেক্ষণ জনগণের হৃদয়ের কথা: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০১৭, ১৭:২৮ | প্রকাশিত : ০৯ আগস্ট ২০১৭, ১৬:২৪

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ দাবি করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই রায়ের যে অবজারভেশন এটা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের কথা, অন্তরের কথা, হৃদয়ের কথা এবং সেটাই তারা (সুপ্রিম কোর্ট) বলেছেন, উচ্চারণ করেছেন। সুতরাং দেশের ১৬ কোটি মানুষ এই রায়ের অবজারভেশনের সঙ্গে আছে এবং তারা একমত।’

বুধবার দুপুরে জজকোর্টে এক অনুষ্ঠানে ফখরুল এসব কথা বলেন। ঢাকা আইনজীবী সমিতির ভবনের নিচতলায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে এনে বর্তমান সরকারের আমলে পাস করা সংবিধানের ষোড়শ সংধোশনী বাতিল হয়ে গেছে উচ্চ আদালতে। গত ১ আগস্ট এই মামলার যে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে, তাতে শাসনব্যবস্থা, সংসদ নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে নানা মন্তব্য এসেছে।

আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর বিএনপি সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে। আর এই রায়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছে সরকার। মন্ত্রিসভার বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে এই রায় নিয়ে।

ফখরুল বলেন, ‘সরকার বিচার বিভাগের প্রতিপক্ষ হিসেবে অবস্থান নিয়েছে। অর্থমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে কথা বলেছেন এতে একটি বিষয় খুব পরিষ্কার যে, এই সরকার বিচার বিভাগের প্রতিপক্ষ হিসেবে একটা অবস্থান নিয়েছে।’

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। আপিল বিভাগকে সংবিধানের অভিভাবক বলা হয়। সংবিধানের যেখানে যেখানে ক্রটি থাকে অথবা যে আইনগুলো সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য নয় আপিল বিভাগ সেই বিষয়গুলো নিয়ে মতামত প্রদান করেন। সংসদে যে আইনগুলো পাস করা হয়েছে, সংবিধান যে সংশোধন করা হয়েছে, সে সম্পর্কে ইতিপূর্বেও আপিল বিভাগে তার মতামত প্রদান করেছে। জনগণের যেটা প্রাপ্য, জনগণের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা সেটাই তারা বলেছে।’

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে মন্ত্রিসভার প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই রায় দেয়ার পরে, অবজারভেশন দেয়ার পরে মন্ত্রিসভায় যে আলোচনা হয়েছে এবং সরকারের কিছু মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা যে ভাষায় কথা বলছেন, আমি জানি না আপনারা (আইনজীবীরা) ভালো বলতে পারবেন তা আদালত অবমাননার দায়ে পড়ে কি না?’

ফখরুল বলেন, ‘তারা (সরকার) সুপরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রের যে প্রধান তিনটি স্তম্ভ, সেই স্তম্ভগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করছে। আপনারা দেখেছেন, বিচার বিভাগের সঙ্গে পার্লামেন্টে একটা বিরোধ তারাই তৈরি করে দিয়েছে।’

অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের যদি ন্যূনতম গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস থাকতো, এই সরকারের যদি ন্যূনতম একটি আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনার ইচ্ছা থাকতো তাহলে তারা পদত্যাগ করতো। কারণ তাদের আর এই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকার কোনো নৈতিকতা নাই।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, এখনো বলছি, আপনারা অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, নৈতিক অবস্থার কারণে পদত্যাগ করে একটি সহায়ক সরকারের হাতে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন; যে নির্বাচন হবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সবাই সেখানে অংশগ্রহণ করবে।’

ফখরুল বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক অবস্থা তা পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। যে কথাটি আমাদের সবচেয়ে বেশি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ করেছে তা হচ্ছে, এই শাসকরা এখন দ্বৈত পরিণত হয়েছে। তাদের দায়িত্ব ছিল গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার, সেই গণতন্ত্রকে রক্ষা না দ্বৈতে পরিণত হয়েছে। ধ্বংস করে দিচ্ছে সবকিছু।’

আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, ‘এই দুঃসময় আইনজীবীদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে, অগ্রণী ভূমিকার রাখার দরকার। আজকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার জন্য, মানুষের অধিকারকে রক্ষা করবার জন্য, মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষা করার জন্য আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে সামনের সারিতে ভ্যানগার্ড হিসেবে। আমি বিশ্বাস করি, আইনজীবীরা গণতন্ত্রের সমস্ত মূল্যবোধকে রক্ষা করবার জন্য এগিয়ে এলে জাতির অনেক বেশি অনুপ্রাণিত হবে।’

ফখরুল বলেন, ‘শুধু এইটুকু বলতে চাই, এই সরকার যত বেশিদিন থাকবে, ততই বাংলাদেশ অতল গহ্বরে রসাতলে যাবে। গত কয়েকদিনের খবরের কাগজে দেখবেন, কীভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, কীভাবে ধর্ষণ বেড়েছে, কীভাবে খুন বেড়েছে, দেখেছেন যে, কীভাবে সমস্ত আইন অমান্য করে এই ছাত্রলীগ-যুবলীগ নিজেরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করে মানুষকে হত্যা করছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই যে একটা একনায়কতন্ত্র, এই যে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করবার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এটা যদি আমরা এখনই বন্ধ না করতে পারি তাহলে আমরা একেবারে ফ্যাসিবাদের যাঁতাকলে পড়ে যাবো এবং একদলের অধীনে পড়ে যাবো, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, আপনাদের অধিকার, আমাদের অধিকার কিছু থাকবে না।’

ঢাকা আইনজীবী সভাপতি অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চুর পরিচালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব সানাউল্লাহ মিয়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার বক্তব্য দেন।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা আইনজীবী সমিতির বোরহান উদ্দিন, মহসীন মিয়া, মকবুল হোসেন ফকির, আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান, গোলাম মোস্তফা খান, খোরশেদ মিয়া আলম, মোসলেহ উদ্দিন জসিম, ওমর ফারুক ফারুকী প্রমূখ।

(ঢাকাটাইমস/০৯আগস্ট/বিইউ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :