একটি চাঞ্চল্যকর মামলা ও তার অভূতপূর্ব সমাধান

ইফতেখায়রুল ইসলাম
| আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০১৭, ১৮:০৬ | প্রকাশিত : ০৯ আগস্ট ২০১৭, ১৬:২৩

যাত্রাবাড়ী থানার চাঞ্চল্যকর মামলার ভিকটিম রফিকুল ইসলাম রুবেলের লাশ উদ্ধার এবং হত্যাকান্ডে জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ।

ঘটনাটি শুনে যত সহজ মনে হচ্ছে বিষয় আসলে ততটা সহজ ছিল না..আসুন লোমহর্ষক সেই ঘটনা জেনে নেই।

গত ১৯/০৭/২০১৭ তারিখে ভিকটিম নিখোঁজ হন, এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি জিডি হয় ২০/০৭/১৭ তারিখে। পরবর্তী সময়ে ভিকটিমের স্ত্রী এ বিষয়ে একটি অপহরণ মামলা করেন।

ভিকটিমের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়ায় শেষ অবস্থান নিয়ে কিছুটা মতদ্বৈততাও ছিল। তবে পরবর্তী সময়ে জানা যায় রামপুরার হাজীপাড়া এলাকায় ভিকটিমের অবস্থান ছিল। অজ্ঞাতনামা আসামিরা ভিকটিমকে নিয়ে রামপুরায় অবস্থান করছিল।

বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে নেত্রকোণায় স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ এলাকায় একটি অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয় এবং সেটিই ভিকটিম রুবেলের লাশ!

মামলাটি একটি নতুন মোড় নেয় এবং সেই বাঁকে আমরা জেনে যাই অজ্ঞাত আসামিদের পরিচয়।

আসামিরা পালিয়ে বেড়ানো শুরু করে আমরা শুরু করি তাদের অনুসরণ করা.. তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে পুলিশ চলে যায় সিলেট এবং সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আসামি মোজাম্মেল হককে।

পরবর্তী সময়ে মোজাম্মেলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর আসামি তার স্ত্রী আঁখি আক্তার ঝুমাকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় ঝুমার কাছ থেকে স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। ঢাকায় পৌঁছে একই দিনে বিবাদী ঝুমার ভাই জাকিরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঝুমা আক্তার পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার ঘটনার বর্ণনা করেন। সে তার দূর সম্পর্কের চাচা ভিকটিম রুবেলকে প্রথমে শিল-পাটা দিয়ে আঘাত করে, এতে সাথে সাথেই তার মৃত্যু হয়। এরপর খুব ঠান্ডা মাথায় আসামি ঝুমা ২৫০০ টাকায় একটা ট্রাংক কিনে আনেন। সেই ট্রাংকে ভিকটিমের মৃতদেহ না ঢোকাতে পেরে ধারালো বটি দিয়ে প্রথমে ভিকটিমের মাথা কাটে তারপর পা ও হাত কেটে ট্রাংকে ভরে ফেলে সে। এত নির্মম কার্য আসামি একাই বেশ সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছে।

পরবর্তীতে ঝুমা আলাদাভাবে আর তার স্বামী মোজাম্মেল লাশসহ ট্রাংক নিয়ে চলে যায় নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ গ্রামে। সেখানে মোজাম্মেল তার ভাইয়ের সহায়তায় লাশ পুঁতে ফেলে মাটিতে।

ঝুমা ও তার স্বামী উভয় আসামি হত্যার সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দী দিয়েছে। উল্লেখ্য ভিকটিমের প্রায় তিন লক্ষ টাকা ঝুমা ও তার স্বামী আত্মসাত করে। এত নির্মম ঘটনা ঘটিয়েও আসামি ঝুমা কিন্তু বেশ স্বাভাবিক।

মঙ্গলবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ওয়ারী জোনের ডিসি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।

ডিসি ওয়ারী জনাব মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন এর নির্দেশনায়, এডিসি (ডেমরা জোন), শাহ মো. ইফতেখারের তত্ত্বাবধানে সিনিয়র এসি (ডেমরা জোন) ইফতেখায়রুল ইসলামের সহযোগিতায়, এসআই/বিলাল আল আজাদের নেতৃত্বে উক্ত অভিযানটি পরিচালিত হয়।

লেখক: সহকারী কমিশনার, ঢাকা মহানগর পুলিশ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :