নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় কুড়িগ্রামের দুই উপজেলা

সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম
 | প্রকাশিত : ১০ আগস্ট ২০১৭, ০৮:১৩

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভয়াল হয়ে উঠেছে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পাড়। এতে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলাসহ চারটি উপজেলায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি। প্রতিদিনই ভিটেবাড়ি হারাচ্ছেন এই অঞ্চলের মানুষেরা।

সবচেয়ে বড় আশঙ্কার কথা হলো রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার ভাঙন এতটাই ভয়াবহ যে, উপজেলা দুটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এতে এই এলাকার মানচিত্র পাল্টে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজিবপুর, সদর উপজেলা ও তিস্তার ভাঙনে রাজারহাট উপজেলার সহস্রাধিক ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্রের বামতীরের রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার প্রায় ৩৫টি গ্রামে একযোগে ভাঙন শুরু হয়েছে। জুলাই মাস থেকে এই দু’টি উপজেলার প্রায় ৭০০টি বাড়ি-ঘর, কাঁচা-পাকা সড়ক, মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাটসহ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

এছাড়াও ব্রহ্মপুত্রের অব্যাহত ভাঙনে সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ফারাজীপাড়া, বলদিয়াপাড়া, গারুহারাসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের শতাধিক বাড়ি-ঘর নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে।

অন্যদিকে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়ব খাঁ গ্রামের দুই শতাধিক ঘর-বাড়ি তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়েছে।

রৌমারী উপজেলার ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো হলো ইটালুকান্দা, সাহেবের আলগা, চর গেন্দার আগলা, চরঘুঘুমারী, ঘুঘুমারী, খেরুয়ারচর, পূর্বখেরুয়ারচর, পূর্ব খেদাইমারী, উত্তর খেদাইমারী, পশ্চিম পাখিউড়া, পাখিউড়া, পশ্চিম বাগুয়ারচর, বাগুয়ারচর, বাইসপাড়া, বলদমারা, পূর্ব বলদমারা, ধনারচর, ধনারচর নতুন গ্রাম, দিগলাপাড়া, তিনতেলী।

রাজিবপুর উপজেলার শঙ্করমাদবপুর, সাজাই, চরসাজাই, বল্লাপাড়া, উত্তর কোদালকাটি, নয়ারচর, নয়ারচর বাজার, মাঠের ভিটা, লাউশালা, টাঙ্গইলাপাড়।

প্রতি বছর ভাঙনের ফলে গ্রামের পর গ্রামের ঘর-বাড়ি ফসলি জমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গাছপালা বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে। হাজার হাজার মানুষ তাদের বাব দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে পরিণত হচ্ছে ভূমিহীনে। এসব পরিবার সবকিছু হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন উঁচু বাঁধ, অন্যের জমি ও আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন রোধে জরুরি কোনো পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে রৌমারী উপজেলা পরিষদ ভবনসহ সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রৌমারী উপজেলার বলদমারা গ্রামের হামিদা খাতুন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাগো আবাদি জমি নাই, সব নদীতে ভাঙ্গয়া গেছে, ঘাট পাড়ে দোকান করে খাইছি তাও নদীতে ভেঙে গেছে।’

রৌমারীর পশ্চিম বাগুয়ারচর গ্রামের কোরবান আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এক বছরে আমরা দুই বার বাড়ি টান দিছি, এখন আর বাড়ি নেয়ার জমি নাই, আমাগো একটাই দাবি নদী বেঁধে দেন, আমরা রিলিপ চাই না, নিজে জমিতে ঘর তুইলা শান্তিতে পোলাপান নিয়া থাকবার চাই।’

রৌমারী উপজেলা কর্মরত সিএসডিকে এনজিওর নির্বাহী পরিচালক মো. আবু হানিফ মাস্টার ঢাকাটাইমসকে বলেন, গত পাঁচ বছরে রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার নদীভাঙনের কবলে পড়ে সর্বশ্বান্ত হয়েছে। এইসব পরিবারের একটি বড় অংশ ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বস্তিতে বসবাস করছে। উদ্বাস্ত পরিবারের পুনর্বাসন ও নদীভাঙন রোধ না করলে আগামী ১০ বছরে মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে রৌমারী ও রাজিবপুর নামের দুটি উপজেলা বিলীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফাউজুল কবীর ঢাকাটাইমসকে বলেন, বন্যা পানি হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে রৌমারী উপজেলার চরশৌলমারী, বন্দবেড়, যাদুরচর ও রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি, মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে।

রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী ঢাকাটাইমসকে বলেন, নদীভাঙন রোধে সরকারের প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া জরুরি, এভাবে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মহান মুক্তিযুদ্ধের মুক্তাঞ্চল হিসেবে পরিচিত রৌমারী উপজেলা বাংলাদেশের মানচিত্র হতে বিলীন হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পনি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার তীব্র ভাঙনের কথা স্বীকার করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার জন্য আমরা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখেছি। বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটারব্যাপী স্থায়ীভাবে ব্রহ্মপুত্রের বামতীর সংরক্ষণের কাজ এবং ২৫ কিলোমিটার ড্রেজিংসহ প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরির কাজ আমরা হাতে নিয়েছি। এটা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্প উপস্থাপনা এবং মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :