‘নিষিদ্ধ’ অটোরিকশার দখলে ফেনী শহর

আরিফ আজম, ফেনী
 | প্রকাশিত : ১০ আগস্ট ২০১৭, ০৮:৫৪

প্রশাসনের কাগজেপত্রে নিষিদ্ধ হলেও অটোরিকশার দখলে ফেনী শহর। দিনের বেলায় এই যানটি শহরে চলার কথা না থাকলেও চলছে দেদারছে। এজন্য অটোরিকশা চালকদের চাঁদা দিতে হচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহলকে।

ফেনী শহরে নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা টমটম এর স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে ট্রাংক রোডের মডেল থানার বিপরীতে অতিথি হোটেলের সামনে। এখান থেকে চলাচলকারী টমটম সালাহউদ্দিন মোডের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আবার ফিরে এসেও অবস্থান নেয় থানার সামনে। একই চিত্র শহরের ট্রাংক রোডের রেলগেইটে।

জানা গেছে, জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন দলের নেতা এমনকি এক শ্রেণির অসাধু পুলিশকে চাঁদা দিয়ে শহরজুড়ে নির্বিঘ্নে চলছে অনুমোদনহীন এ যান। তবে পুলিশের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা এ টাকার ভাগ পান না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বুধবার শহরের ট্রাংক রোড, রেলগেট, মহিপাল, সদর হাসপাতাল মোড়সহ বিভিন্ন স্ট্যান্ডে সরেজিমনে দেখা গেছে, টমটমের সারিবদ্ধ লাইন। এসব গাড়ির চালকরা জানিয়েছেন, তারা প্রতিদিন শ্রমিক সংগঠনের নামে চাঁদার টাকা দেন।

চালক-মালিক সূত্রে জানা গেছে, ফেনী শহরের প্রধান সড়কগুলো ও পাড়া-মহল্লায় প্রায় দুই হাজার টমটম চলাচল করে। মহিপাল থেকে সদর হাসপাতাল পর্যন্ত সাড়ে চার শতাধিক টমটম চলাচল করে। এ রুটে চলাচল করতে গাড়িপ্রতি দৈনিক ৫০ টাকা করে দিতে হয়। এ টাকা যায় পৌরসভার এক কাউন্সিলরের পকেটে। রানা, সুমন, লোকমান, রিপন ও মামুনসহ কয়েকজন টাকা তোলার দায়িত্বে রয়েছেন। দিনের বেলায় এসএসকে সড়কে বন্ধ থাকলেও সন্ধ্যা হতে শুরু হয় চলাচল। শহরের কানন সিনেমা হলের সামনে থেকে আলেকদিয়া-মৌলভীবাজার রুটে প্রতি চালককে দিতে হয় ১০ টাকা। হাসপাতাল মোড় থেকে ধর্মপুর আমিনউদ্দিন বাজার রুটে গাড়িপ্রতি ৬০ টাকা হারে দিতে হয়। এ রুটে বিরিঞ্চি হাংকার এলাকার যুবলীগ নেতা সরোয়ার ভান্ডারি তার লোকজন দিয়ে টোকেনের মাধ্যমে চাঁদার টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চালকরা জানিয়েছেন, সালাহউদ্দিন মোড় থেকে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত প্রতি গাড়ি ১০ টাকা করে আদায় করলেও র‌্যাবের অভিযানের পর গত প্রায় দুই মাস চাঁদা তোলা বন্ধ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১০ আগস্ট তৎকালীন জেলাপ্রশাসক মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় মহাসড়কসহ জেলার অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে অবৈধ, ফিটনেসবিহীন মোটরযান, লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভার, ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, ভটভটি, টমটম বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্তের পর অভিযানে নামে পৌরসভা। অভিযানকালে বেশ কিছু টমটম গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। একই বছরের ১০ নভেম্বর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়ার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বারাহিপুর এলাকার এক টমটম মালিক। এর প্রতিবাদে মালিক-শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এমনকি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এনিয়ে মামলা-মোকদ্দমা, গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটে। এত তুলকালাম কাণ্ডের পর কীভাবে শহরে নির্বিঘেœ টমটম চলে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন জনমনে।

ফেনী পৌরসভার প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী ঢাকাটাইমসকে জানান, অবৈধ টমটম চলাচল বন্ধে পৌরসভার পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করে বেশ কিছু জব্দ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মীর গোলাম ফারুক ঢাকাটাইমসকে জানান, মানবিক দিক বিবেচনা করে রাত ৯টার পর টমটম চলার সুযোগ দেয়া হলেও দিনের বেলায় শহরে টমটম চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দুই একটি চলতে পারে বলে তিনি স্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার ঢাকাটাইমসকে বলেন, কোনো পুলিশ সদস্য চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে অন্য কেউ চাঁদাবাজি করলেও তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :