ষোড়শ সংশোধনীর রায়

সংবিধান অবমাননার মামলার চিন্তা আ.লীগে

তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১১ আগস্ট ২০১৭, ১৮:২০ | প্রকাশিত : ১১ আগস্ট ২০১৭, ১১:২০

ষোড়শ সংশোধনীর বাতিলে আপিল বিভাগে রায় ও পর্যবেক্ষণে সংবিধানপরিপন্থী কোন কিছু রয়েছে কিনা তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে আইন পেশার সাথে নিয়োজিত দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে দুই জনকে বিশেষ দায়িত্বও দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ার জন্য দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু এবং আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিমকে নির্দেশ দিয়েছেন। এই রায়ের মধ্যে কী কী অপ্রাসঙ্গিক বিষয় রয়েছে, কোন কোন জায়গায় আইনি ফাঁক-ফোকর রয়েছে এগুলো খুঁজে বের করতে বলেন। প্রয়োজনে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের পরামর্শ নিতে বলেন শেখ হাসিনা।

চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এমন কোন সুযোগ পেয়ে থাকলে সংবিধান অবমানার দায়ে মামলা করার মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে দলটি।

বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর নেতাদের সঙ্গে এক যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।

বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে এনে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদের সংশোধনী পাস হয় যেটি ষোড়শ সংশোধনী নামে পরিচিতি পায়। উচ্চ আদালত এই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছে গত ৩ জুলাই। আর ১ আগস্ট প্রকাশ হয়েছে পূর্ণাঙ্গ রায়। এই রায়ের ৯৬ অনুচ্ছেদের বাইরে গিয়ে শাসন ব্যবস্থা, সংসদ নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছে যেগুলোতে সরকার ক্ষুব্ধ হয়েছে। এসব মন্তব্যে সংসদকে অবমাননার অভিযোগ করছেন সরকারি দলের নেতারা। আর এই রায়ের পর করণীয় ঠিক করতে আলোচনা হয় সভাপতি ও সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সুচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদার বৈঠকে ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে চরম ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এই সংশোধনী নিয়ে কী করণীয় সে সব বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের মতামত চান দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এসময় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল মতিন খসরু,আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল, সিনিয়র নেতা শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বক্তৃতা করেন।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী নেতারা বলেন, প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আওয়ামী লীগের নেতারা রায়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। আপিল বিভাগের ৭৯৯ পৃষ্ঠা রায়ের পর্যবেক্ষণের কিছু বিষয় নিয়ে তীব্র আপত্তি জানানো হয়। যেমন জাতির পিতার ক্ষেত্রে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘ফাউন্ডিং ফাদার্স অফ দা নেশন।’ জাতির পিতা বা পিতা কীভাবে একাধিক হয়; এ বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতারা ব্যাপক ক্ষোভ ছাড়েন প্রধান বিচারপতির ওপর।

সভা সূত্র জানায়, নেতারা বলেন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা, কর্মচারী রাষ্ট্রপতি আমরা কেউই সংবিধানের উদ্ধে নয়। তাই সংবিধানের স্বীকৃত সত্যকে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

ষোড়শ সংশোধনীর আপীলের পর্যালোচনায় ঢালাওভাবে সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সংসদের এমপিদের সমালোচনা করা গেলে অন্যদের সমালোচনা কেন করা যাবে না? তিনি বলেন, আরও নতুন নতুন ষড়যন্ত্র হতে পারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। শেখ হাসিনা দলের সকল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মনে রাখতে হবে বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ কেউ প্রতিদ্বন্দ্ধী নই। আমরা সমালোচনা করব গঠনমুলক।

সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমস্যা নাই। আমাদের হাতে অনেক কিছুই আছে, দেখা যাবে।’

ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যর সমর্থন করেন নেতারা।

আপিল বিভাগের এই রায়ের কিছু জায়গায় জাতীয় সংসদকে খাটো করে উপস্থাপন করা হয়েছে অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, সংসদে পাস না হলে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের এই রায়ের কোনো মূল্য নেই। তারপরও প্রধান বিচারপতি এই রায়ে এমন এমন কিছু কথা লিখেছেন, যা পড়লে মনে হয়; তিনি নিজেই সংবিধান লংঘন করেছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কোন ছাড় দেব না।’

দলটির আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সংশোধনীতে আইনের ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।’

সভায় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে মাহবুবে আলম ছাড়া অন্য যারা কাজ করেন তারা সরকারের স্বার্থের কথা আমাদের আদর্শে কিনা খোঁজ খবর নেওয়া উচিত।’

সভায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলায় সাজা হলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় শ ম রেজাউল করিম বলেন, মামলার রায়ের পর আপিল বিভাগ যদি তা স্থগিত করে তাহলে তিনি (খালেদা জিয়া) নির্বাচন করতে পারবেন।

বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, নেতারা সেই প্রসঙ্গ উঠালে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে আসবে এটা ধরেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। তাছাড়া বিএনপি নির্বাচনে না আসলে অংশগ্রহণমুলক হবে না এই ধারণাও পাল্টাতে হবে। বিএনপির একক নির্বাচন বয়কটে কিছু আসবে, যাবে না। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আরও অনেক আছে।’

সভায় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলে। কিন্তু আমাদের আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আবার ক্ষমতায় আসব।’

‘শেখ হাসিনা এমন কিছু করে নাই যে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারব না’-এমন মন্তব্য করে আশরাফ বলেন, ‘আমাদের এমন কিছু করা যাবে না, এমন কোন কথাবর্তা বলা যাবে না যাতে দলের নেতাকর্মীদের হতাশ হয়ে পড়ে।’

দলের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে হবে- এই বক্তব্য না রেখে আমাদের বলতে হবে নির্বাচন হবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে।’

এসময় সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে তা সংবিধানে বলা আছে। সুতরাং সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে- এই অবস্থানই জানাতে হবে।’ এর সঙ্গে সায় দেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেও।

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :