আবার বন্যার পদধ্বনি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১২ আগস্ট ২০১৭, ০৮:২৩ | প্রকাশিত : ১১ আগস্ট ২০১৭, ২২:৩৯

আগস্টে বড় বন্যা আসছে বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। মন্ত্রীর সতর্কবাণী সত্যি হতে চলেছে। দেশের সীমান্তবর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় চারটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও চট্টগ্রামের রাউজানে নতুন করে কমপক্ষে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জ, লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

এদিকে আখাউড়ার সীমান্তবর্তী ভারতীয় শহর আগরতলার অধিকাংশ জায়গা আকস্মিক বন্যার পানিতে ডুবে আছে বলে জানা গেছে।

ঢাকাটাইমসের জেলা প্রতিনিধির পাঠানো সংবাদে জানা যায়, টানা বর্ষণ এবং ত্রিপুরা রাজ্যের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী আখাউড়া উপজেলার চারটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কৃষকের রোপা আমন ও আউশ ধানের ফসলি জমি, বসতঘরসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়াও পানিতে ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। এতে অন্তত পাঁচশ হেক্টর রোপা আমন ও আউশ পাকা ধানের ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যায়।

উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন জানান, তাঁর ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের রোপা আমন ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। নিচু এলাকায় সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় পুকুরে মাছ ভেসে গিয়ে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জুয়েল রানা বলেন, প্রবল বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ত্রিপুরা পাহাড়ি ঢলের কারণে সীমান্তবর্তী আখাউড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা রোপা আমন ও আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা শহরের অধিকাংশ জায়গা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে গেছে। ত্রিপুরা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার বাবু পবিত্র কর ঢাকাটাইমসকে বলেছেন, ত্রিপুরার রাজ্যের ইতিহাসে এত বড় বন্যা আর দেখা যায়নি। বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার সকাল অবধি রেকর্ড পরিমাণ ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় বলে জানান ডেপুটি স্পিকার। বড়মুড়া পাহাড় থেকে বৃষ্টির পানি এসে শহরের অধিকাংশ জায়গা প্লাবিত হয় বলে জানান।

ত্রিপুরা টাইমস পত্রিকার সম্পাদক মানস পাল বন্যার বিবরণ দিতে গিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, বিগত কয়েক দশকের মধ্যে আগরতলা এত বড় বন্যা মোকাবেলা করেনি। শহরের শ্রীলঙ্কা বস্তি, চন্দ্রপুর, বলদাখাল, সেন্ট্রাল জোন, ইস্ট জোন, প্রতাপগড় ঋষিকলোনি, কলিকাপুর, যোগেন্দ্রনগর, বিশালগড়, রাধানগরসহ কয়েকটি এলাকা সম্পূর্ণভাবে পানির তলে তলিয়ে গেছে। কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থা মোকাবেলা করছে।

এর আগে গত জুলাই মাসে চার সপ্তাহের মধ্যে বড় বন্যা আসছে বলে সতর্ক করেছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহেই এই দুর্যোগ আসবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

এদিকে লালমনিরহাটে ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি ফের বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে তিস্তা নদীর পানি দোয়ানী ব্যারেজ পয়েন্টে শুক্রবার ভোর ৬টায় বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুরে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় যেকোনো সময় বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে পাউবো কন্ট্রোল রুম সূত্র জানিয়েছে।

এছাড়া ভারী বর্ষণে জেলার ছোট-বড় সব কয়েকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা নদীর চরাঞ্চল ও তীরবর্তী কয়েকটি এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে নিম্নাঞ্চলের শত শত বিঘা জমির সদ্য রোপনকৃত আমন ধান, সবজিসহ নানা ফসল তলিয়ে গেছে।

ডালিয়া (দোয়ানী ব্যারেজ) পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শুক্রবার সকাল থেকেই তিস্তার পানি প্রবাহ বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। তবে পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেয়া হয়েছে।

সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ। ফলে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না সাধারণ মানুষ।

জানা যায়, জেলার পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগড়, দোয়ারা, ছাতক, দিরাই-শাল্লা উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টরের অধিক রোপা আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। নিম্ন অঞ্চলের স্কুল, হাট-বাজার, বসত-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জেলার সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাসাপাতাল, বিভিন্ন হাট-বাজার ও নিম্ন অঞ্চলগুলোর বসতবাড়ি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ডুবে যাওয়া হাট-বাজারের দোকানের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে ও স্কুলগুলোতে ছাত্ররা আসতে না পারায় ক্লাস বন্ধ।

আরও জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার ২৩টি হাওর ও নদ-নদীগুলোতে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সপ্তাহখানেকের ভারী বর্ষণে সীমান্তের ছোট-বড় ২০ ছড়া দিয়ে প্রবল বেগে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে পাহাড় ধসের আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে চারাগাঁও, চানঁপুর, রজনী লাইন, বড়ছড়া, বাগলী সীমান্তে বসবাসকারী মানুষ।

এদিকে যাদুকাটা নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ায় নদী তীরবর্তী বিন্নাকুলি, আনোয়ারপুর বাজার ভেঙে যাচ্ছে। এছাড়াও বসতবাড়িগুলো রক্ষা করার জন্য ওই এলাকার লোকজন করছে পানির সাথে যুদ্ধ। অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে তাহিরপুর উপজেলার-পাতারগাঁও, ইছুবপুর, টেন্ডারপাড়া, সোহালা, সত্রিশ, ইসলামপুর, লামাগাঁও, লামাগাঁওসহ ৪০ গ্রামের মানুষের বসতবাড়ির চারপাশে পানিবন্দী হয়ে আছে ও রাস্তাঘাট ডুবে গেছে।

উপজেলার বাদাঘাট বাজার ঔষধ কোম্পানির ফারিয়ার সভাপতি সুহেল আহমদ সাজু জানান, জেলা শহরসহ আশেপাশের উপজেলাগুলোর সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। যেভাবে বাড়ছে বৃষ্টি, সেই সাথে বাড়ছে পানি। তাতে করে সীমাহীন ভোগান্তির শেষ থাকবে না অসহায় এ উপজেলাবাসীর।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম আখঞ্জি ঢাকাটাইমসকে বলেন, বন্যার কারণে তাহিরপুর উপজেলার হাওর এলাকার দ্বীপ সাদৃশ্য গ্রাগুলোতে বসবাসকারী মানুষ রয়েছেন উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়। একশ দিনের কর্মসূচি শেষ অসহায় এই হাওরবাসীর দুর্ভোগের পাশে এখন সরকারি সহায়তার হাত বাড়ানো খুবেই প্রয়োজন। আর যে পরিস্থিতি হোক অসহায় উপজেলাবাসীর পাশে থেকে দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে সড়ক ও জনপথের আনোয়ারপুর-ওয়েজখালী সড়ক তিন স্থানে ভেঙে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

অপরদিকে আনোয়ারপুর বাজারের ৫০টি দোকান, দোকানের মালামাল ঢলের পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাতে দোকানে অবস্থানরত লোকজন তাড়াহুড়ো করে দোকান থেকে বেরিয়ে কোনরকম প্রাণ রক্ষা পায়। তবে কোনো ব্যবসায়ী আহত হননি। বাজারের রাস্তার ওপর দিয়ে পানি গড়াচ্ছে।

বালিজুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া ও আনোয়ারপুর বাজারের ব্যবসায়ী মিলন তালুকদার বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে যাদুকাটা নদী উপচে গিয়ে আনোয়ারপুর বাজারেরর ৫০ দোকান ঘরের মালামাল পানির তোড়ে ভাসিয়ে নেয় এবং বাজারের পাকা রাস্তা স্থানে স্থানে ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

গত তিন দিনব্যাপী বৈরী আবহাওয়ায় ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি নদী যাদুকাটা, মাহারাম, রক্তি নদী দিয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করে ঢলের পানি বইছে।

অপরদিকে নদী ও হাওরের পানি একাকার হয়ে নদী তীরবর্তী ও হাওরপারের গ্রামগুলো ঝড়ো হাওয়ায় বিশাল ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙনের মুখে পড়েছে।

চট্টগ্রামের রাউজান থেকে পাঠানো সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রবল বর্ষণের ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে উপজেলার পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া কর্ণফুলী ও হালদা নদীর জোয়ারের পানি। এতে চট্টগ্রামের রাউজানে আবারো ১৪ ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানিবন্দি হয়ে পড়ে হাজারো গ্রামবাসী।

উরকিরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ আব্দুল জব্বার সোহেল বলেন, টানা বর্ষণ হলেই আমার ইউনিয়নের অনেক গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়। জোয়ারের পানির স্রোতে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে পড়ে। শুক্রবারও চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অনেক বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় জনজীবনে ভোগান্তি নেমে আসে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেন রেজা বলেন, আমরা অবিরাম বর্ষণের ফলে আবারো বন্যা আতঙ্কে আছি।

(ঢাকাটাইমস/১১আগস্ট/এসএএফ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :