​তাঁরাও ইউএনও: পর্ব-৪

সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য শিক্ষার আলো

প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০১৭, ০৮:২১

তায়েব মিল্লাত হোসেন ও মহিউদ্দিন মাহী

তৃণমূলে সরকারি সেবা নিশ্চিতের কাজ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা-ইউএনও। সেই দায়িত্বে সবাই কী সাফল্য পান? সবাই আসলে পান না। কেউ কেউ পান। এমন ইউএনও যারা, তাদের নিয়েই ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিশেষ আয়োজন। চতুর্থ পর্বে থাকছে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ইউএনও হুরে জান্নাতের কার্যক্রম নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন।

সমাজের সুবিধাবঞ্চিত চা শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার মূল ধারায় নিয়ে আসায় শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখার কারণে জেলা পর্যায়ে ‘জনপ্রশাসন পদক ২০১৭’ পেয়েছেন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হুরে জান্নাত। গত ২৩ জুলাই এ পুরস্কার পান তিনি।

জানা গেছে,  উপজেলার মনিপুর চা বাগানে ৫ কক্ষ বিশিষ্ট বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষা কার্যক্রম চালুকরণের জন্য ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হুরে জান্নাতকে জেলা পর্যায় ‘জনপ্রশাসন পদক ২০১৭’দেয়া হয়। এককভাবে অসামান্য অবদান রাখার জন্য সারা দেশে একক ভাবে ৬ জনকে জনপ্রশাসন পদকে ভূষিত করা হয়। এরমধ্যে হুরে জান্নাত একজন।

এ  বিষয়ে জানতে চাইলে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হুরে জান্নাত এই সময়কে বলেন, ‘আমি এখানে আসার পর থেকেই মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। প্রথমে আমি চেষ্টা করেছি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নিয়ে কিছু করতে। কিন্তু এখানে সেরকম সুযোগ নেই। পরে আমি এই চাবাগানের খোঁজ পেলাম। এরপর একদিন রাতে চা বাগানের বাসিন্দাদের সঙ্গে বৈঠকে বসলাম। দিনে এদের পাওয়া যায় না। তাই রাতেই বৈঠক হলো। সেখানে আমি জানতে চাইলাম কার কী চাওয়া পাওয়া। অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। তবে একজন মহিলা বললেন, আমাদের বাচ্ছাদের লেখাপড়ার সুযোগ নেই। আমরা স্কুল চাই। কথাটা আমার মনে ধরেছে।’

হুরে জান্নাত বলেন, ‘ওই মহিলার প্রস্তাব নিয়ে আমি চিন্তা করেছি। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠাই। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ব্যাপক সাড়া পাই। এরপরই শুরু হয় স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজ। এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে শিক্ষার মূল ধারায় নিয়ে আসতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আন্তরিক সহযোগিতায় মনিপুর চা বাগানে স্কুল চালু করা হয়েছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন বিদ্যালয়ে বর্তমানে দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে। তিনজন শিক্ষক রয়েছেন।’

স্কুল প্রতিষ্ঠায় কোনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাধার সম্মুখীন হয়েছি।  চা বাগান কর্তৃপক্ষ প্রথমে চায়নি এখানে স্কুল হোক। তারা বলেছে, এখানের ছেলে মেয়েরা শিক্ষিত হলে চাবাগানে শ্রমিক পাওয়া যাবে না। কিন্তু আমি সিদ্ধান্তে অনঢ় ছিলাম। তাদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। এরপর আমি কাজ শুরু করেছি।’

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘স্কুল প্রতিষ্ঠা করলেও শিক্ষক নিয়োগে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। কারণ নতুন স্কুলের বেতন দেবে কে? এনিয়ে বেশ তৎপরতা চালাতে হয়েছে। চা বাগানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। তাদের সমস্যা ছিল সেগুলো সমাধান করেছি। এরপর তারা রাজি হয়েছে।  এখন তারা বেতন দিচ্ছে। যদিও পরিমাণে খুবই কম। আর শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি পরীক্ষার মাধ্যমে। খুব ভাল শিক্ষক পেয়েছি। চা বাগান কর্তৃপক্ষের একজন সন্তান আমরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি। ছেলেটি মাস্টার্স পাস। খুবই ভাল। এভাবেই চলছে স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম। স্কুলটিতে উপবৃত্তিও চালু করেছি।  বৃহস্পতিবারও ২ লাখ টাকার উপবৃত্তি দিয়েছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে হুরে জান্নাত বলেন, ‘আমি স্কুলটিকে সরকারি করার চেষ্টা করছি। তবে এটি খুব কঠিন বিষয়। আমি প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু হয়নি। তবে হাল ছাড়িনি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

হুরে জান্নাত বলেন, ‘মনিপর চা বাগানের স্কুলটি প্রতিষ্ঠার ফলে ওই এলাকা এখন আলোকিত হয়েছে। প্রথম জমি অধিগ্রহণ নিয়েও সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সেটিও অনেক কষ্টে আমি ম্যানেজ করেছি সব মিলিয়ে ওই এলাকার মানুষ এখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তাদের স্বপ্ন দেখাতে পেরে আমিও উচ্ছ্বসিত।’

আপনি তো এর স্বীকৃতিও পেয়েছেন?  আসলে আমি তো স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য কাজ করিনি। আমি মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। সরকার আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এতে আমি মনে করি অন্যরাও উৎসাহিত হবে। বৃহস্পতিবার আমাকে ডিসি অফিস সংবর্ধনা দিয়েছে। এর মধ্যমে শুধু কাজের স্বীকৃতি  মিলেছে তা নয়, অনেকেই উৎসাহবোধ করেছে।’

আগামীকাল পঞ্চম পর্বে থাকছে রংপুরের তারাগঞ্জের ইউএনও জিলুফা সুলতানার কার্যক্রম নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন: সবুজায়নে অন্যরকম উদ্যোগ।

ঢাকাটাইমস/১২আগস্ট/টিএমএইচ