উপচে পড়ছে তিস্তা, নীলফামারীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০১৭, ১৮:৩৭

নীলফামারী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

অবিরাম বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তিস্তায় পানি অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে। শনিবার বিকাল ৩টায় ২০ সেন্টিমিটার (বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৪০) উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কারনে জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার তিস্তাপারের নিম্নাঞ্চল ও চরের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। অপরদিকে পানির চাপে তিস্তা সেচ প্রকল্পের দিনাজপুর সেচ নালার নীলফামারীর জলঢাকায় দুটি স্থানে ১০০ ফুট ভেঙে গেছে। এতে জলঢাকার প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেচ নালা ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শনিবার সকালে ওই সেচ নালার জলঢাকার কাঁঠালী ও দেশীবাড়ী নামক স্থানে পানির চাপে ভেঙে যায়। অপরদিকে অবিরাম বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা সকালে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। দুপুর ১২টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

এক নাগাড়ে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে নীলফামারী জেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ। জেলার উপর দিয়ে বহমান ছোট বড় ৩০টি নদীর নাব্য কমে যাওয়ায় নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। শুধু নদী লাগোয়া গ্রাম নয়। অবিরাম বর্ষণের কারণে মাঠঘাট, বাড়িঘর, সড়ক, ফসলি জমি সবকিছু তলিয়ে গেছে। সেই যে গত বুধবার (৯ আগস্ট) হতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তা থামবার নাম নেই। জেলার প্রতিটি নদী এখন বিপদসীমায়। অবিরাম বর্ষণে জনজীবন থমকে গেছে। রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল কমে গেছে। মানুষজন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি হতে বের হচ্ছে না।

ভারী বর্ষণ ও নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় এ জেলার ২০ লাখ মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়েছে। কৃষকদের মতে জেলার ৫০ হাজার হেক্টর আমন ধানের জমি তলিয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টি নীলফামারী জেলার গত কয়েক বছরের রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে। নীলফামারী সদরে ১৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। জেলা শহরের প্রতিটি পাড়া মহল্লার পথঘাট ও বাসাবাড়ি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।

এ ছাড়া এ জেলার ডোমার উপজেলায় ২২৩, ডিমলা উপজেলায় ১৫০, জলঢাকা উপজেলায় ২০৭, সৈয়দপুর উপজেলায় ২৫০ ও কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ২৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে জেলা কৃষি বিভাগ। অপর দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা অববাহিকার ডালিয়া পয়েন্টে ১৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়। কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে তিস্তা নদী ছাড়াও পানি বিপদসীমা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বুড়ি তিস্তা, চারালকাটা, বুড়িখোড়া, যমুনেশ্বরী, খড়খড়িয়া, দেওনাই, খেড়ুয়া, শালকি, নাউতারা, কুমলাই, ধুম, ধাইজান, চিকলি, আউলিয়া খানা, ইছামতি।

জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মোহম্মদ ইদ্রিস জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষি বিভাগের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। শনিবার সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি থাকলেও সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে মাঠে নামানো হয়েছে। আবাদি জমিতে যে সব স্থানে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি রয়েছে তা অপসারণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। প্রয়োজনে জমির আইল কেটে পানি নিষ্কাশনের নির্দেশ দেয়া হয়।

জেলা প্রশাসক মোহম্মদ খালেদ রহীম জানান, প্রশাসনের সব স্তরের সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কোথায় কী ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে তা নিয়ে রিপোর্ট তৈরির কাজ করা হচ্ছে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা ব্যরাজ ডালিয়া পানি উনয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, শুক্রবার (১১ আগস্ট) তিস্তা অববাহিকায় ডালিয়া পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩২ মিলিমিটার। একই সূত্র মতে, গত বুধবার ১৫৮ ও বৃহস্পতিবার ১৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল তিস্তা অববাহিকায়। ফলে গত ৯৬ ঘণ্টায় ৬৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। শনিবার সকাল সারে ১০ টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। এ ছাড়া তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা ব্যারজের ৪৪টি স্লুইচ গেট সার্বক্ষণিক খুলে রাখা হয়েছে। জেলা সদরের খোকসাবাড়ি ইউনিয়নের ইছামতি শাখা নদীর পানি উপচে ওই ইউনিয়নের কুমারপাড়া গ্রামটিকে তলিয়ে দিয়েছে। গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট ও আবাদী জমির উপর দিয়ে স্রোত বয়ে যাচ্ছে। বন্যা কবলিত পরিবারগুলোকে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় দেয়া হয়েছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান।

এ ছাড়া ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের পূর্বখড়িবাড়ি মৌজার তিনটি গ্রামের এক হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ১৫টি পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ৫০ পরিবার বসতঘর সরিয়ে নিয়েছে বলে জানায় ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন। ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড় সিংহের চর গ্রামে ৭৪৫টি পরিবারের ঘরবাড়িও তলিয়ে গেছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান। খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের কিছামত গ্রামে ২৩০টি পরিবারের বসদঘরের ভেতর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন। জলঢাকা উপজেলার খুটামারী ইউনিয়নের বুড়িখোড়া নদীর পানি উপচে জেলেপাড়া গ্রামের ৫৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ শামীম। নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাহিনুর আলমের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের সব সহকারী কমিশনার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাসহ সব সরকারি বিভাগের লোকজন মাঠে নেমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করছেন।

তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান, চারদিনে অবিবরাম বর্ষণের পানি ছাড়াও উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১২আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)