উত্তরাঞ্চলে দৈনিক ঘাটতি ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ

প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০১৭, ২১:৪৭

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী

উত্তরাঞ্চলে দৈনিক প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকছে। এ জন্য পুরো রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের লোডশেডিং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর জোনে অতিরিক্ত সিস্টেম লস লোডশেডিং বাড়িয়ে দিয়েছে।

এসব এলাকার কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমদ কায়কাউসকে এ তথ্য জানান।

শনিবার বিকালে রাজশাহী বিদ্যুৎ ভবনে বিদ্যুৎ সচিব রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় কর্মকর্তারা উত্তরাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ সচিবকে এসব তথ্য জানান।

তারা বলেন, চাহিদামতো বিদ্যুৎ না পেয়ে বাধ্য হয়েই লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

এ সময় বিদ্যুৎ সচিব বলেন, ৪ অক্টোবর নতুন একটি টাওয়ারের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। তখন পরিস্থিতি কিছুটা হলেও সামাল দেয়া যাবে। লোডশেডিংও তখন কিছুটা কমবে। এর আগে উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুতের যেসব যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে সেগুলো সারিয়ে নেয়ার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন সচিব।

তিনি বলেন, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অন্য কোনো মন্ত্রণালয় ৫০ বা ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়ে গেলে এক ঘণ্টা কথা খরচ করতে হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো প্রকল্প নিয়ে গেলে ১০ মিনিটের মধ্যেই সেটি গ্রহণ করা হয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা পাসও হয়। এর কারণ, সরকার বিদ্যুৎ বিভাগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে সচিব বলেন, মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করবেন না। আপনার-আমার রুটি-রুজির মালিক এই জনগণ। কেউ ‘স্যার’ না বললে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবেন, তা হবে না। এখানে যারা প্রকৌশলী আছেন, তারা অত্যন্ত মেধাবী। এখন তারা দক্ষ ব্যবস্থাপক হয়ে উঠলেই বিদ্যুৎ বিভাগে কোনো সমস্যা থাকবে না।

তার কাছে রাজশাহী অঞ্চলের বিদ্যুৎ বিভাগের সব তথ্য লিখিত আকারে তুলে না ধরায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সচিব বলেন, তিনি এ বিষয়টা নিয়ে খুবই মর্মাহত হয়েছেন। এই বিভাগের কর্মকর্তাদের আরও দায়িত্ববান হতে হবে। দায়িত্বে কারও কোনো অবহেলা বরদাশদ করা হবে না বলেও জানান সচিব।

প্রসঙ্গত, গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে উত্তরাঞ্চলে লোডশেডিং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ নিয়ে গত জুলাইয়ে জেলার চারঘাট ও দুর্গাপুর উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের অফিসে হামলা চালিয়েছেন বিক্ষুদ্ধ জনতা। গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের রাজশাহীর জেনারেল ম্যানেজার একেএম মুশফিকুর রহমানের কার্যালয়ে গিয়ে দ্রুত বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু একটুও কমেনি বিদ্যুতের আসা-যাওয়া।

বিদ্যুৎ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যুতের সমস্যার সমাধান না হওয়ায় স্থানীয় একজন সংসদ সদস্য বিদ্যুৎ সচিবকে রাজশাহী এসে বিদ্যুতের পরিস্থিতি তদন্তের জন্য অনুরোধ করেন। পরে বিদ্যুৎ সচিবের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের একটি দল শুক্রবার রাতে রাজশাহী আসে।

পরে দলটি বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করে। এ সময় রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের নানা সমস্যার কথা বিদ্যুৎ সচিবের কাছে তুলে ধরেন। এদের মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ সচিবকে জানান, পাবনা পৌরসভা প্রায় ১৭ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখেছে। তারা অনেক চেষ্টার পরেও তা আদায় করতে পারছেন না।

রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী সচিবকে জানান, তার এলাকায় কৃষি সেচের ৬০ কোটি ৭২ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে আছে। অনেক চেষ্টা করে তিনিও সেই টাকা আদায় করতে পারছেন না। বকেয়া আদায়ে এই দুই প্রকৌশলী বিদ্যুৎ সচিবের পরামর্শ চান। সচিব এ সময় বিষয়টি লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে জানানোর পরামর্শ দেন। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান সচিব।

(ঢাকাটাইমস/১২আগস্ট/আরআর/এলএ)