ছুটন্ত দানবের পাশে প্রাণ সঁপে ঘুম যাদের

মুনিরুজ্জামান মুনির, নন্দীগ্রাম (বগুড়া)
 | প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট ২০১৭, ০৮:৩১

তাদের বসত ঘেঁষে চলে গেছে বগুড়-নাটোর মহাসড়ক। বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সড়কটিতে দিন-রাতে গোঁ গোঁ করে ছুটে চলে বড় বড় ট্রাক-বাস। বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে যখন হেডলাইটের তীব্র আলো জ্বালিয়ে গাড়িগুলো যায়, তখন ওই বসতির বাসিন্দাদের মনে হয় কোনো দানব ছুটে চলেছে। যেকোনো সময় আছড়ে পড়বে তাদের ঘরে। এ যেন ছুটন্ত দানবের পাশে প্রাণ সঁপে ঘুম।

বসতির নূরুল ইসলাম যেমন বলেন, ‘সারা দিন কাজকর্ম শেষে রাতে যখন পরিবার নিয়ে ঘুমাতে যাই, তখন বুকের ভেতর ধুকপুক করে। বারবার ভয় জেগে ওঠে মনে- সকালে সুস্থ অবস্থায় নিজেগো জাগনা পামু তো।’

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে বসবাস করছে নুরুল ইসলামের মতো আরো শখানেক পরিবার। তাদের এমন আশঙ্কা আর ভীতি অমূলক কিছু নয়। প্রায়ই ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। সাম্প্রতিক একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যাক।

বগুড়া থেকে নাটোরগামী একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওমরপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বসতির রাজু খন্দকারের ঘরের ওপর উল্টে পড়ে। এতে ঘুমের মধ্যে নিহত হয় তার কিশোরী মেয়ে ইতি খাতুন। এমনিভাবে মাঝেমধ্যেই প্রাণহানি ঘটছে এখানে।

এই মহাসড়কের দুই পাশে ভূমিহীনরা বসতবাড়ি বানিয়ে বসবাস করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু তাদের জীবনের নেই কোনো নিরাপত্তা। দীর্ঘদিনের এই নিরাপত্তাহীনতা দেখারও যেন কেউ নেই।

মহাসড়কের দুই পাশে বন বিভাগের লাগানো গাছের মাঝে ভূমিহীন মানুষের বসতবাড়ি। মহাসড়ক দিয়ে বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। এরই কোনোটি অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে উল্টে যায়। অথবা কখনো কোনো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে বসতঘরে ঢুকে পড়ে।

সরেজমিনে নন্দীগ্রাম পৌর এলাকার ওমরপুর সড়কপাড়ায় গিয়ে বসতিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতার পরপর তারা সড়কের পাশে বেড়ার ঘর তুলে বসবাস শুরু করে। এসব ঘর বানাতে খরচ হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এখানে বসবাসরত প্রায় ১০০ পরিবারের বাসিন্দারা বর্তমানে নন্দীগ্রাম পৌরসভার ভোটার।

রাজু আহম্মেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, রাশেদ খন্দকার ও রফিকুল ইসলাম তাদেরই কজন। তাদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, নিজেদের কোনো জায়গা না থাকায় তারা এখানে ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হয় তাদের। সরকার তাদের জন্য গুচ্ছগ্রামের ব্যবস্থা করলে জীবনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতেন তারা।

স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ভূমিহীন মানুষকে সরকারি খাস জায়গা অথবা সরকারি খাস পুকুরপাড়ে বসতবাড়ি স্থাপনের ব্যবস্থা নিলে প্রাণহানির ঘটনা ঘটত না। ওমরপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মহাসড়কের পাশে ভূমিহীন মানুষদের বেশি বসতি। সেখানেই বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনারোধে ভূমিহীন মানুষজনকে সেখান থেকে অন্য কোথাও স্থানান্তর প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

নন্দীগ্রাম পৌরসভার মেয়র কামরুল হাসান সিদ্দিক জুয়েল অবশ্য জানান এসব ভূমিহীনের জন্য সরকারিভাবে বাসস্থানের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্য তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পৌরসভা থেকে তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :