অভাবের সংসারে নারী শ্রমিকদের সংগ্রাম

মোহাম্মাদ মানিক হোসেন, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর)
| আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০১৭, ০৮:৫০ | প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট ২০১৭, ০৮:৪৯

আদিকালে থেকে নারীরা কৃষিকাজের সূচনা করেছিল। সেই নারীরা আজো সম্পৃক্ত আছে কৃষি কাজের সাথে। কেবল কৃষি কাজই নয় দিনের পর দিন বেড়েছে নারী শ্রমিকদের কর্মপরিধি, কিন্তু বাড়েনি তাদের পারিশ্রমিক। নানা অবহেলায়, পরনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে না থেকে স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার তাগিদেই নারীরা বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত হচ্ছেন।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর এলাকার নারীরা পাট ধোয়া. চারা রোপণ, আগাছা নিড়ানি, পাটের বীজ ছিটানো, ধান কাটা, মাড়াই, গম কাটাসহ প্রভৃতি কাজও করছেন। তবে শ্রম দিলেও শ্রমের নায্য মজুরি না পাওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে তাদের।

কথা হয় উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের রহমান ডাক্টারপাড়ার নারী শ্রমিক জোসনার সাথে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সারাদিন পাট ধুইয়া ১৪০ টাকা পাই। একজনের (স্বামী) কামাই দিয়া সংসার চলা খুব কষ্ট হয়।’

তার স্বামী মমতাজও একজন কৃষি শ্রমিক। তার সাথেই পাটের ধোয়ার কাজ করছেন জোসনা। তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা আটজন। স্বামীর উপার্জনের ওপর নির্ভর করতে হলেও বিভিন্ন সময় নিজেও উপার্জনে জড়িত হন জোসনা আক্তার। তিনি ধানের চারা রোপণ, আগাছা নিড়ানি, পাটের বীজ ছিটানো, ধান কাটা, মাড়াই, গম কাটাসহ প্রভৃতি কাজও করেন। তবে শ্রম দিলেও শ্রমের নায্য মজুরি না পাওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে তার।

অভিযোগ করে তিনি বলেন, একজন পুরুষ যতটুকু সময় দেয়, আমরা নারীরাও ততটুকু সময় দিই। পুরুষ ২৫০ টাকা পেলেও আমরা নারীরা পাই ১২০-১৫০ টাকা পর্যন্ত।

পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কাজ কম করি না বলে মন্তব্য করেন নারী শ্রমিক জোসনা আক্তার। তার মতো আক্ষেপ করেন ধনেশ্বরী, বটবালা, শেফালী রানীও।

জোসনা আক্তার, বড়দা, সুসমা রানীর মতো শত শত নারীর কর্মব্যস্ততা চোখে পড়বে দিনাজপুরের বৃহত্তর চিরিরবন্দরের ইছামতি নদীর ঘা ঘেঁষে নশরতপুর, আলোকডিহি, ফতেজংপুর, ইসবপুর, আব্দুলপুর, সাইতাড়াসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়। দল বেঁধে ১০-১৫ জনের গ্রুপ হয়ে পাট মৌসুমে আঁশ ছড়ানোর কাজ করছেন তারা। নশরতপুর ইউনিয়নের রহমত ডাক্টার পাড়ারজোসনা আক্তারের দলে দেখা মিলবে ৫০ থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধা বটবালার। ওই নারী শ্রমিকের স্বামী মারা গেছেন কবে টিকমত মনে নেই তার। বর্তমানে চারজনের সংসারে ছেলের উপার্জনের সঙ্গে নিজের অর্থও যুক্ত করেন পরিবারে।

পাট চাষীমোস্তাফা জানান, পুরুষ শ্রমিকরা বিভিন্ন এলাকায় যায় কাজ করতে। কাছাকাছি থাকে না। মহিলাগুলো যে কোন সময় কাজের জন্য পাওয়া যায়। তাদের ১২০-১৪০ টাকা করে হাজিরা দেই।

তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘পাটের বাজার খারাপ। এক হাজার ৫০০ টাকা মণ বিক্রি চলছে। মুজরি দিয়ে তেমন লাভ হয় না। চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। কী রকম লাভ হবে বুঝতে পারছি না।’তবে নারী শ্রমিকদের মজুরি তুলনামূলক কম দেয়া হয় বলেও স্বীকার করেন তিনি।

মানবাধিকার কর্মী নারী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা মোছা. আরজিনা খাতুন জানান, যাদের ঘর্মাক্ত শরীর আর বিন্দু বিন্দু রক্তের ফোঁটায় তিল তিল করে গড়ে ওঠে মালিকের সম্পদের পাহাড়, সেই শ্রমিকদের দূরাবস্থার কথা যেন শোনার কেউ নেই। এ অঞ্চলের নারীরা অনেক কর্মঠ। শ্রম দেন। কিন্তু সঠিক মজুরি পান না। এ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছি আমরা। এজন্য মালিক ও শ্রমিক দুই পক্ষকে সচেতন হওয়া দরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক নারী শ্রমিক টাকা না নিলেও টাকার পরিবর্তে পাটখড়ি নিয়ে যান। কারণ হিসেবে বাড়িতে তারা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন।

(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :