মসজিদের টাকা নিয়ে মোতাওয়াল্লি উধাও!

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, গাজীপুর
 | প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট ২০১৭, ২৩:৪০

গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হাজী রমজান আলী মুন্সি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের লাখ লাখ টাকা ও মসজিদের গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক নথি নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন মসজিদের স্বঘোষিত মোতয়াওয়াল্লি মো. শামসুল হক।

আত্মগোপনে থাকা সাবেক কথিত মোতাওয়াল্লি শামসুল হক মোবাইল ফোনে ঢাকাটাইমসকে জানান, তিনি দূরে আছেন। মসজিদের টাকা তিনি আত্মসাত করেননি। কমিটিতে তিনি ছাড়া বাকি যারা ছিলেন, তারাই টাকা আত্মসাত করেছেন।

এ আত্মসাতের কোনো প্রমাণ কী আপনার কাছে আছে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আপনি নিজেই আত্মগোপন করে আছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শামসুল হক জানান, একটু সমস্যা আছে। তারা যে আত্মসাত করেছে এর কোন প্রমাণ আমার কাছে নেই! কিন্তু গত বছরের জুন মাসের ১৬ তারিখ আপনার স্বাক্ষরিত মসজিদের আয়-ব্যয়ের একটি হিসাব বিবরণী তালিকা মসজিদের দেয়ালে টানিয়ে দেয়া হয়। ওই বিবরণীতে লেখা ছিল, মসজিদে জমা টাকার পরিমাণ দশ লাখ ৮০ হাজার দুইশ ৫০ টাকা।

এ টাকাগুলো এখন কোথায়- এমন প্রশ্নের জবাবে শামসুল হক জানান, টাকা মসজিদের কাজে ব্যয় হয়েছে। তবে কোন খাতে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে এ ব্যাপারে শামসুল হক স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।

মসজিদের বর্তমান কমিটি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালে রমজান আলী মুন্সি মসজিদের জন্য ৩৫ শতাংশ জমি দান করেন। পরবর্তীতে এ মসজিদটি তিনি দেখভালের দায়িত্ব দেন তার মেয়ের জামাই আব্দুর রহমানকে। কিন্তু আব্দুর রহমান মসজিদের দেখভালের দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে জমিদাতার বড় ছেলে শামসুল হক স্বেচ্ছায় মসজিদটি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে তিনি মসজিদটির জন্য জনৈক এক শিল্পপতির বাংলো বাড়িতে একটি মনগড়া কমিটি করেন। ওই কমিটির সভাপতি করা হয় শিল্পপতি খলিল চৌধুরীকে।

অপরদিকে, সাধারণ সম্পাদক করা হয় খন্দকার মো. মজিবুর রহমানকে। কমিটিতে মোতওয়াল্লি থাকার পাশাপাশি কোষাধ্যক্ষ পদ বেছে নেন শামসুল হক।

এদিকে, কমিটি হওয়ার পরপরই শামসুল হক ও খন্দকার মজিবুর রহমানের পারস্পরিক যোগসাজসে আইন ও নিয়ম-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে তারা দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেন। এ সিন্ডিকেটটির বিরুদ্ধে মসজিদের জায়গায় নির্মিত মার্কেটের ভাড়া ও মসজিদের দান খয়রাতের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু একসময় এ সিন্ডিকেটটির মধ্যে অর্থের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে মোতাওয়াল্লি কাম ক্যাশিয়ার শামসুল হক ওই পকেট কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। পরে তিনি নিজের দোষ ঢাকতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হন। তার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে হোতাপাড়ার নানা শ্রেণিপেশায় নিয়োজিতদের সমন্বয়ে প্রায় সাত বছর আগে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এসময় বিপুলসংখ্যক মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন। ওই কমিটির সভাপতি হন মো.আব্দুল লতিফ ও সাধারণ সম্পাদক হন লেখক, সাংবাদিক শাহান সাহাবুদ্দিন। পরবর্তীতে কমিটির প্রথম মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে মসজিদের উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজ চলমান থাকায় এলাকবাসীর অনুরোধে এবং মোতায়াওল্লির সিদ্ধান্তে এ কমিটির মেয়াদ আরও তিন বছরের জন্য বৃদ্ধি করা হয়। ওই কমিটিতেও মোতায়াওল্লি ও কোষাধ্যক্ষ হিসেবে থেকে যান শামসুল হক। কিন্তু কমিটি গঠনের প্রথম তিনবছর সব কিছু ঠিকঠাক চললেও দ্বিতীয় মেয়াদে মোতয়াওল্লি তার স্বভাব সুলভ দুর্নীতি না করতে পেরে একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেন। তার অংশ হিসেবে, মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই মসজিদের জমির সাথে তার নিজের জমি মিলিয়ে হোটেল ‘নিরালা’ নামে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মোটা অংকের জামানত নিয়ে তিনি ভাড়া দেন। এছাড়াও রাতের আঁধারে মসজিদের টাইলস চুরি করে তিনি তার বাসায় নিয়ে যান। এ ঘটনাটি কমিটির অন্যান্য সদস্যরা জানতে পেরে শামসুল হকের নিজ বাসা থেকে মসজিদের টাইলস উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে তিনি মসজিদ কমিটির কাছে চুরি করা টাইলসসের মূল্য দিয়ে এ ধরনের কাজ আবার করবেন না বলে প্রতিশ্রুতিও দেন। পরে শামসুল হকের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক শাহান সাহাবুদ্দিন নির্মাণ, তদারকি এবং হিসাব-নিকাশ সংশ্লিষ্ট একাধিক উপ-কমিটি গঠন করে দিলেও শামসুল হকের হটকারিতায় তা ভেস্তে যায়। এমনকি মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে মসজিদের নামে একটি ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও মোতাওয়াল্লির কারণে সেটাও ভেস্তে যায়। ফলে মসজিদের লাখ লাখ টাকা মোতাওয়াল্লি কাম ক্যাশিয়ার কমিটিকে না বুঝিয়ে দিয়ে আত্মসাত করেন।

এ ঘটনা জানাজানি হলে কমিটি ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। পদাধিকার বলে মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. নাজমুল হক এ ব্যাপারে শাসসুল হককে একাধিকবার মসজিদের হিসাব নিকাশ বুঝিয়ে দিতে বললেও শামসুল হক মসজিদের লাখ লাখ টাকা ও দাপ্তরিক সকল কাগজপত্র নিয়ে তিনি আত্মগোপন করেন। এ ঘটনার পর এলাকাবাসীর অনুরোধে জমি দাতার মেজো ছেলে মো. আজমুল হককে মোতাওয়াল্লি করে ও অ্যাড. বাবুল হোসেন খানকে সভাপতি করে গত জুলাই মাসে ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি নতুন কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় শাহান সাহাবুদ্দিনকে। পরে মসজিদের মোতায়াওল্লি মো. আজমুল হক বাদী হয়ে সাবেক মোতাওয়াল্লি শামসুল হকের বিরুদ্ধে মসজিদের অর্থ ও দাপ্তরিক কাগজপত্র চুরির অপরাধে জয়দেবপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

এ অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. নাজমুল হক ঢাকাটাইমসকে জানান, এ বিষয়টি শিগগিরই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে আল্লাহর ঘর নিয়ে কোনো অনিয়মকে বরদাস্ত করা হবে না।

(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :