দীপশিখা জাতির পিতা

আরিফুর রহমান
| আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০১৭, ০৯:৫৯ | প্রকাশিত : ১৪ আগস্ট ২০১৭, ২৩:০২

‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই।/ যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই।’

শোকাবহ আগস্ট মাস এলেই বাঙালি হৃদয়ে অনুরণিত হতে থাকে এই হাহাকার। ১৫ আগস্ট যত সমাগত হয়, তত উচ্চকিত হয়ে ওঠে আমাদের মাতম। এ যে এক গভীর শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বাংলাদেশ হারায় তার জাতির পিতাকে।

সেদিন ভোরের আজানের ধ্বনি বিদীর্ণ করে ঘাতকের অস্ত্র গর্জে ওঠে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ আরো কজন স্বজনের রক্তে রাঙায় পুবাকাশের সুবহে সাদিক।

আজকের এই শোকের দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৫ আগস্টের সব শহীদকে।

আসলে এই হত্যাকাণ্ড শুধু একজন শেখ মুজিবের প্রাণহরণ নয়, এটি ছিল একটি চেতনা ও আদর্শকে মুছে দেয়ার দুষ্কৃতি; নতুন রাষ্ট্রের পুনর্গঠন ও উন্নয়নের স্বপ্নকে বিনাশ করার দুরভিসন্ধি; একজন মৃত্যুঞ্জয়ী বীরের গণতান্ত্রিক-ন্যায়ভিত্তিক সোনার বাংলার স্বপ্ন ধূলিসাৎ করার অপচেষ্টা। ঘাতকরা চেয়েছিল সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা রুখে দিয়ে একাত্তরের হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর দোসরদের অভিলাষ পূর্ণ করতে।

কিন্তু ঘাতকরা আজ নিক্ষিপ্ত হয়েছে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও ১৫ আগস্টের ঘাতকদের অনেকের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে হালকা হয়েছে জাতির বুকে দীর্ঘদিন চেপে থাকা গ্লানির পাথরভার। তবে বুকে জগদ্দলের ঘা শোকায়নি এখনো। কেননা ছয় ঘাতক এখনো পালিয়ে আছে বিভিন্ন দেশে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর না করা পর্যন্ত জনগণের রক্তক্ষরণ থামবে না।

যদিও ১৫ আগস্ট এখন সরকারিভাবে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়, কিন্তু গত ৪২ বছরের বেশির ভাগ সময়ই দিনটি ছিল রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলিত। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এদিন রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়। পরে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে।

আমরা মনে করি, শুধু একটি দিন কিংবা একটি মাসের আনুষ্ঠানিকতা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা দেখানোর জন্য যথেষ্ট নয়। বছরজুড়ে নানা উদ্যোগের মাধ্যমে তার আদর্শ ছড়িয়ে দিতে হবে জনে জনে। তিনি যে সুখী-সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশের জন্য সারা জীবন লড়াই করেছেন, জীবন দিয়েছেন, তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে আমাদের।

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু তার স্বল্পায়ু জীবনে এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে যে গভীর ভালোবাসায় লীন হয়েছিলেন, তা কোনোদিন ছিন্ন হওয়ার নয়। যুগ-যুগান্তরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মানুষের অন্তরে দীপশিখা হয়ে জ্বলবেন জাতির পিতা।

লেখক: সম্পাদক, ঢাকাটাইমস ও সাপ্তাহিক এই সময়

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজপাট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা