সিরাজগঞ্জে আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট ২০১৭, ১২:৪৪

গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এর ফলে জেলার পাঁচ উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। যমুনার পাশাপাশি করতোয়া, গুমানী, হুরাসাগর, ফুলজোড় নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের ডাটা অ্যান্টি অপারেটর আবুল কালাম আজাদ জানান, সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৭৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৮ সালের পর এবারই প্রথম যমুনার পানি বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরও বাড়বে বলে সিরাজগঞ্জ পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন।

পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মাত্র চারদিনের ব্যবধানে ৪০ হাজার পরিবারের আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত অনেক মানুষ ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। দুই হাজার হেক্টর ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী মানুষের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৭০ মেট্টিক টন চাল ও নগদ সাড়ে আট লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রনজিক কুমার সরকার জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার যমুনার পানি বৃদ্ধির তীব্রতা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বছর জুলাই মাসের প্রথম বন্যায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে সর্বোচ্চ ১৪.১৪ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়। যেটা ছিল বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার উপরে। অথচ চলতি মাসে দ্বিতীয় দফার বন্যায় চারদিনের মধ্যেই ১২৬ সেন্টিমিটার উপরে এবং গত বন্যার চেয়ে ৪৭ সেন্টিমিটার বেশি। এসব কারণে এবার জেলায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শুভগাছা ইউনিয়নের টুটুলের মোড় এলাকার বাসিন্দা শীলা খাতুন, আফজাল হোসেন, সকিতন ভেওয়া ও আব্দুল কুদ্দুস জানান, বসতবাড়ীতে একেবারে তলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে গলা পানি। কোনো জিনিসপত্র বের করতে পারি নাই। কয়েকটি টিন খুলে এনে ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। যাওয়ার মতো জায়গা নেই। তাই ওয়াপদার ধারে পলিথিন টাঙ্গিয়ে কোনমতে জীবনযাপন করছি। বৃষ্টির কারণে সময়মতো রান্নাও করতে পারি না। অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হচ্ছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজলায় প্রায় দুই শতাধিক গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে জরিপ চলছে। ইতোমধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ১৭০ মেট্টিক টন চাল ও সাড়ে আট লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বন্যার্তদের মধ্যে এগুলো বিতরণ করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, আরও দুয়েকদিন পানি বাড়তে পারে। সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধগুলো ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় সার্বক্ষণেক নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা জানান, যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। কোনো অবস্থাতেই যেন বাঁধ এলাকায় ধস বা ভাঙন সৃষ্টির পরিস্থিতি না হয় সেজন্য পাউবোকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। তারপরেও তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সেনাবাহিনীকে চিঠি দিয়ে অবহিত করে রাখা হয়েছে। সর্বোপরি বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ১৬৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষের জন্য শুকনো খাবার, মোমবাতি, দেয়াশলাই প্যাকেট ইতোমধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/১৫আগস্ট/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :