মৃত্যু পথযাত্রী সন্তানকেও কোলে নিতে পারেননি মা

আলম রায়হান, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট ২০১৭, ১২:৪৭

স্বাধীনতার অর্জন নস্যাৎ করে বাংলাদেশকে পেছনে নিতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র শুরু হয় ১৬ ডিসেম্বর থেকেই। আর এ ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ঘাতকরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা করে। ঠিক একই সময় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এবং ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনির বাড়িতেও চালানো হয় নারী-পুরুষ-শিশু হত্যার পৈচাশিকতা।

সেদিন বঙ্গবন্ধুর অতি আদরের শিশুপুত্র রাসেল এবং আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ শিশুপুত্র সুকান্ত বাবুকে প্রায় একই সময় কেড়ে নেয় সীমারেরও অধম ঘাতক বাহিনীর বুলেট। যে সময় মায়ের কাছে নিয়ে যাবার জন্য শিশু রাসেল আকুতি জানিয়েছে বারবার। হয়তো ঠিক একই সময় বুলেটবিদ্ধ শিশু সুকান্ত মাকে বলছিলো তাকে কোলে নিতে। কিন্তু সন্তানের সেই আকুতিতে সাড়া দেবার ক্ষমতা ছিলো না মমতাময়ী মা শাহানারা আব্দুল্লার। কারণ, তখন তিনি ঘাতকের বুলেটে আহত হয়ে লাশের মতো পড়েছিলেন, আর সাতটি লাশের মাঝে। নিজের শরীরে এখনো ১৫ আগস্টে বুলেট বহনের যন্ত্রণা এবং অতিঘনিষ্ঠ স্বজন হারানোর বেদনাকে ছাপিয়ে শাহানারা আব্দুল্লাহকে বিহব্বল করে দেয় ঘাতকের বুলেটের আঘাতে মৃত্যুপথযাত্রী শিশুপুত্রের আকুতিতে সাড়া দিতে না পারার বেদনা।

আজকের ঢাকা মহানগর পুলিশের অফিস, সেদিনের মন্ত্রীর বাসায় নিহত হন আবদুর রব সেনিয়াবাত, বেবী সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, সুকান্ত আবদুল্লাহ, আরিফ সেরনিয়াবাত ও আবদুল নঈম খান রিন্টু। আর ঘাতকের বুলেটে আহত হন আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর স্ত্রী শাহানারা আব্দুল্লাহসহ পাঁচ জন। সেদিন আবুল হাসনাত ঘাতকের হাত থেকে বেঁচে যান ভবনের কার্নিশে লুকিয়ে। তাকে খোঁজার জন্য দ্বিতীয়বার এসেছিলো ঘাতকরা।

উল্লেখ্য, ১৫ আগস্টে আগেও বরিশালে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহকে হত্যার জন্য দুইবার গুলি চালানো হয়। প্রতিবারই তিনি বেঁচে গেছেন ভাগ্যক্রমে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বেদনায় যারা এখনও ভারাক্রান্ত তাদেরই একজন শাহানারা আবদুল্লাহর সঙ্গে কথা হয় ১৩ আগস্ট বরিশাল শহরে কালীবাড়ি রোডে তার বাড়িতে। বোবা কান্নার মতো তার আহাজারী, ‘মা হয়েও মৃত্যু পথযাত্রী সন্তানকে একটু ধরতে পারিনি।’ এটি তার নিরন্তর বেদনার স্মৃতি। সেদিনের ভয়াবহতা তাকে সারা বছরই তাড়িয়ে বেড়ায়। আর আগস্ট এলে জগদ্দল পাথর হয়ে যায় বেদনার এ সমুদ্র। তার একই প্রশ্ন, ‘আমি কেমন মা।’

শাহানারা আব্দুল্লাহর এ আহাজারি আমি শুনছি ১৯৯৬ সালে তার প্রথম সাক্ষাৎকার গ্রহণ করার সময় থেকে প্রতিবারই। এর ব্যতিক্রম হয়নি গত ১৩ আগস্টও। উল্লেখ্য, আগস্টের ভয়াবহতা প্রসঙ্গ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে আমিই প্রথম তার সাক্ষাৎকার গ্রহন করেছি সাপ্তাহিক সুগন্ধার জন্য; আর এ প্রসঙ্গে টেলিভিশনে তার বক্তব্য প্রথম প্রচারের ব্যবস্থা করি বাংলাভিশনের মাধ্যমে। যেটি তিনি স্মরণ করিয়ে দিলেন ২১ বছর পর গত ১৩ আগস্ট।

এক প্রশ্নের উত্তরে শাহানারা আব্দুল্লাহ বলেন, ১৫ আগস্টের সেই ভয়াবহ ষড়যন্ত্র কখনো থেমে থাকেনি। এর প্রমাণ ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় লাশের স্তুপ সৃষ্টি করাসহ অনেক ঘটনা। ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক থাকার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

আলম রায়হান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :