বঙ্গবন্ধুর চেতনার মৃত্যু নেই: দোলন

প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০১৭, ১৬:৫২ | আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০১৭, ২০:৩৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

খুনিরা মনে করেছিল বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে তাঁর চেতনাকে বিনাশ করে দেবে। তাদের সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। কারণ চেতনার কখনো মৃত্যু হয় না। শেখ মুজিবুর রহমান না থাকলেও তাঁর চেতনা ধারন করছে কোটি কোটি হৃদয়। কথাগুলো বলছিলেন আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজ, কামারগ্রামের গভর্নিং বডির সভাপতি আরিফুর রহমান দোলন। মঙ্গলবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় এক শোক সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজ, কামারগ্রাম এই সভার আয়োজন করে।

কলেজের অধ্যক্ষ মোরসেদুর রহমান তাজের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তৃতা করেন, ফরিদপুর জেলা পরিষদ সদস্য শেখ শহীদুল ইসলাম, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শেখ শওকত হোসেন, কলেজের উপাধ্যক্ষ কামাল আতাউর রহমান, গোপালপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি খান আমিরুল ইসলাম, কলেজ গভর্নিং কমিটির সদস্য মোনায়েম খান, সহকারী অধ্যাপক আবুল কাশেম, এ ইউ হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।

সভা শুরুর আগে একটি শোক শোভাযাত্রাও বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি কলেজ থেকে বের হয়ে গোপালপুর বাজারসহ গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ঘুরে আমার কলেজে এসে শেষ হয়। আরিফুর রহমান দোলন, কলেজের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীসহ অন্যান্য অতিথিরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভা শেষে কলেজ প্রাঙ্গণে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলের মালা দেয়া হয়।

কাঞ্চন মুন্সি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান দোলন বলেন, ‘যদি বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হতো তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশ আমরা পেতাম না। শেখ মুজিবুরে জন্ম না হলে বিশে^র বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার চিন্তাও আমরা করতে পারতাম না। এই স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন। কীভাবে স্বপ্নপূরণ করতে হয়, বাংলাদেশ স্বাধীনতা করার মাধ্যমে সেই লক্ষ্যে কিন্তু আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কতিপয় কুচক্রি বিপথগামী সেনা সদস্যদের নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে মনে করেছিল তার যে চেতনা সেটা বোধ হয় বিনাশ হয়ে গেল। কিন্তু চেতনার কখনো মৃত্যু হয় না। বঙ্গবন্ধুর যে চেতনা, তাঁর যে স্বপ্ন, স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার। অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা। আমরা সেদিকেই এগিয়ে চলছি।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের দৃঢ়তার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। যিনি অত্যন্ত পরিশ্রম করে আমাদেরকে বিশে^র বুকে একটি সমৃদ্ধশালী এবং অত্যন্ত মর্যাদাশীল একটি রাষ্ট্রে পরিণত করছেন। এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।’

উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আরিফুর রহমান দোলন বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের প্রতি আমার আকুল নিবেদন থাকবে তোমরা দয়া করে বঙ্গবন্ধুর জীবনী আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করবে। টুঙ্গীপাড়া তো একটি অজপাড়া গা। সেই গায়ে জন্মগ্রহণ করে পাকিস্তানি হানাদারদের কাছ থেকে একটি রাষ্ট্রের মর্যাদা ছিনিয়ে নেয়ার মতো স্বপ্ন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন তিনি আসলে কতবড় স্বাপ্নিক ও বাস্তববাদী মানুষ ছিলেন তোমরা যদি তার জীবনী পড় তাহলে জানতে পারবে।’

 শেখ মুজিবুর রহমানকে সারাবিশে^র সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখপাত্র উল্লেখ করে দোলন বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান শুধু আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনেরই নেতৃত্ব দেননি। তিনি গোটা বিশে^ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখপাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। আমি মনে করি, আমাদের তাঁর কাছ থেকে পাওয়ার বহু আগেই পাওয়া হয়ে গেছে। আমাদের কিন্তু অনেক ঋণ, অনেক দায়।’

তিনি বলেন, ‘তাকে হত্যার মাধ্যমে তার স্বপ্ন ও চেতনাকে বিনাশ করার যে, ষড়যন্ত্র কুচক্রিরা করেছিল সেটি তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তবে আমাদেরকে আরও সজাগ এবং সতর্ক হয়ে এই চেতনাকে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই কিন্তু আমরা কিছুটা হলেও আমাদের ঋণ শোধ করতে পারবো। আজকে আমরা একটি কলেজে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি, এটা শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশে স্বাধীন হয়েছিল বলে। স্বাধীন বাংলাদেশ না হলে এই কলেজ প্রতিষ্ঠা অসম্ভব ছিল। এই স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’

নিজের ছাত্রজীবনের কথা তুলে ধরে ঢাকাটাইমস ও সাপ্তাহিক এই সময় সম্পাদক বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। কারণ বঙ্গবন্ধু যেই কলেজে পড়েছিলেন আমার সেই কলেজে পড়ার পরম সৌভাগ্য হয়েছে। তৎকালীন ইসলামিয়া কলেজ। বর্তমানে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ কলেজ। বঙ্গবন্ধু ছিলেন কলকাতার বেকার হোস্টেলে। আমিও সেখানে পাঁচ বছর ছিলাম। এই কথা বলছি এই কারণে যে, এসব কথা মনে হলে আমার ভেতরে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৈতিকগুণের বিষয়টি তুলে ধরে তরুণ এই রাজনীতিক বলেন, ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বটেন। কিন্তু তিনি নিজেকে বাংলাদেশের একজন সেবক ও জনগণের একজন সেবক বলে মনে করেন। তিনি নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে দিন শুরু করেন। চিন্তা করতে পারেন একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী কত ভোরে নামাজ পড়েন। দিনের কাজ শুরু করেন। ব্যক্তিগত কোনো বিলাসিতা, আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন করেন না। কেন করেন না? কারণ তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তাঁর স্বপ্ন ছিল সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষ তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসা। সেই স্বপ্নই শুধু শেখ হাসিনা দেখেন না তিনি বাস্তবায়ন করার চেষ্টাও করছেন। এই কারণে তিনি নিজেও অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপন করেন।’

 শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একাধিকবার হামলার বিষয়গুলো তুলে ধরে আরিফুর রহমান দোলন বলেন, ‘এই আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধুকন্যাকেও হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল কুচক্রিরা। ২১ আগস্ট আপনারা জানেন বিএনপি-জামায়াত, তারেক জিয়া চক্র বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বিনাশ করার চেষ্টা করে। কিন্তু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর লীলাখেলা বোঝা বড় দায়। শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। তারেক জিয়া পালিয়ে বেড়াচ্ছে। দেশেও আসে না। ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারি আছে। লন্ডনে বসে উনি আমার নেত্রীর বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের প্রত্যেককে সজাগ থাকতে হবে।’


দোলন বলেন, ‘শেখ হাসিনা যদি আবারও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে পারেন, তাহলেই একমাত্র এই অঞ্চলের উন্নয়ন এবং অগ্রগতি আরও বেশি করে সম্ভব হবে। ইতিহাসের পাতায় সারাজীবন লেখা থাকবে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু তার জন্মস্থান ফরিদপুর জেলা। আমরা কতটা সৌভাগ্যবান, বাংলাদেশের জন্ম যিনি দিয়েছেন তিনি যেখানকার মানুষ আমরাও সেখানকার মানুষ। এই জন্যেই আমাদের দায় বেশি।’ তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে সমর্থনের ক্ষেত্রে আমাদের আরও বেশি অবস্থান নিতে হবে। আরও বেশি মুখ খুলতে হবে। তিনি যদি ভালো থাকেন তিনি যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকেন, তাহলে যেভাবে বঙ্গবন্ধুর চেতনা বাস্তবায়নের জন্য সারাদেশে একযোগে কাজ হচ্ছে আরও বেশি করে হবে। ঘাতকেরা, খুন মোশতাকেরা এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছিল যে, বঙ্গবন্ধুর নাম যেন কেউ না নেয়। কিন্তু এখন উল্টো হয়ে যাচ্ছে। তাদের নাম নেওয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’

বঙ্গবন্ধুর চেতনা বাস্তবায়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করে আরিফুর রহমান বলেন, ‘শেখ মুজিবের চেতনা যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে এই দেশে আর দারিদ্র থাকবে না। অভাব থাকবে না। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ যে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। বঙ্গবন্ধু শুধু একটি স্বাধীন রাষ্ট্র চাননি। তিনি উন্নত এবং সমৃদ্ধ দেশ গড়তে চেয়েছিলেন। আমরা এখন স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথেই আছি।’

আলফাডাঙ্গাকে নৌকার ঘাঁটি উল্লেখ করে দোলন বলেন, ‘অতীতে আমরা যখন বঙ্গবন্ধুর নৌকা মার্কা দেখেছি তখন বিপুলভাবে সমর্থন দিয়েছি। মানুষের ভালোবাসার এই পরিসংখ্যানও শেখ হাসিনার কাছে আছে। তিনি সবই জানেন। আমি মনে করি, আর একটিবার যদি তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পান তাহলে আমাদের উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে কোনো দাবি নিয়ে তাঁর কাছে যেতে হবে না। কারণ, তিনি আমাদের বিষয়গুলো জেনে গেছেন। হয়তো গত সাড়ে সাত, আট বছর সব চেপে রাখা হয়েছিল। এখন শেখ হাসিনার কাছে আপনাদের কথা পৌঁছে দেয়ার মতো লোক আছে। চাইলে আমরাও কিন্তু নেত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারি, দেখা করতে পারি। আমাদের দাবির কথা জানাতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘অতীতে আমরা যেন জনপ্রতিনিধি সংসদে পাঠিয়েছিলাম, তারা কিন্তু আমাদের ভোট নিয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। নেত্রী পর্যন্ত আমাদের সমস্যার কথা, অভাবের কথা, কষ্টের কথা, দুঃখের কথা, যন্ত্রণার কথা পৌঁছেনি। আমি কথা দিচ্ছি, যখনই সুযোগ হবে তখনই আমরা আমাদের এলাকার উন্নয়ন এবং এই অঞলের সব মানুষ দলমত নির্বিশেষে একহয়ে কাজ করবো। যেটা বঙ্গবন্ধু করেছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কিন্তু এলাকার উন্নয়নের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবো। বঙ্গবন্ধুর চেতনা যদি বাস্তবায়ন করতে পারি সেটি হবে পরম পাওয়া।’

সভা শেষে শোকদিবস উপলক্ষে কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কবিতা আবৃত্তি, রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/ ১৫ আগস্ট/ প্রতিনিধি/ এইচএফ)