যেভাবে চলে ‘অপারেশন আগস্ট বাইট’
১৫ আগস্ট, ভোর থেকে জাতীয় শোক দিবসের আনুষ্ঠানিকতা। এই সময় দেশবাসীর নজর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ছাড়িয়ে পান্থপথে পুলিশের এক অভিযানের দিকে। একটি আবাসিক হোটেলে এক জঙ্গির অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর ঘেরাও করে পুলিশ।
এক জঙ্গির অবস্থানের খবরে পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের কাছে ওলিও ইন্টারন্যাশনাল নামের ওই হোটেল ভবন মঙ্গলবার ভোরে ঘিরে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ সদস্যরা ওই এলাকার প্রতিটি গলি এবং বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন, সোয়াট সদস্যরা অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন অগাস্ট বাইট’।
পান্থপথের যে জায়গায় চারতলা ওই হোটেল ভবনের অবস্থান, সেখান থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ভবনের দূরত্ব মাত্র ৩০০ মিটার।
সকালে পুলিশ হোটেলটি ঘিরে ফেলার পরপরই রাসেল স্কয়ার থেকে পান্থপথ-গ্রিন রোড পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আশপাশের প্রতিটি গলিতে অবস্থান নেন পুলিশ ও সোয়াট সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও এনে রাখা হয়।
ছুটির দিনের সকালে রাস্তার এই অবস্থা দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তৈরি হয় উদ্বেগ। যান চলাচল বন্ধ থাকায় স্কয়ার হাসপাতালে আসা অসুস্থ এক ব্যক্তিকে পুলিশের সহযোগিতায় নিয়ে যেতে দেখা যায়।
পৌনে ১০টার দিকে চারতলা হোটেল হোটেলটি থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। বিস্ফোরণ এতটাই তীব্র যে হোটেলের চতুর্থ তলার রাস্তার দিকের অংশের দেয়াল ও গ্রিল ধসে নিচে পড়ে। চতুর্থ তলার ওই ধ্বংসস্তুপের মধ্যে একজনের দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
কিছু সময় পর সোয়াট সদস্যরা হোটেলের চতুর্থ তলার ওই অংশে দেখা যায়। পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক পরে ঘটনাস্থলে আসেন।
বেলা পৌনে ১১টার দিকে হোটেল ভবনের চতুর্থ তলায় প্রবেশ করেন পুলিশের বোমা নিস্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা। সেখানে আরও বিস্ফোরক আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখবেন তারা।
পরে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, হোটেলের যে কক্ষে বিক্ষোরণ ঘটেছে, আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী এক যুবক সোমবার রাতে সেটি ভাড়া নেয়।
মনিরুল বলেন, ‘হোটেলের রেজিস্ট্রার খাতার তথ্য অনুযায়ী ওই যুবকের নাম সাইফুল ইসলাম, বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়ায়। বি এল কলেজে সে অনার্স পড়ছে। আমরা ধারণা করছি, ওই যুবকই নিহত হয়েছে।’
ঢাকার পান্থপথে একটি আবাসিক হোটেলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট সদস্যদের অভিযানের মধ্যে নব্য জেএমবির সন্দেহভাজন এক জঙ্গি নিহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক জানিয়েছেন, নিহত ওই যুবক নব্য জেএমবির সদস্য। আত্মসমর্পণের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে সে ‘সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী’ হয়েছে।
নিহত ‘জঙ্গি’ শোক দিবসের আনুষ্ঠানিকতায় হামলার উদ্দেশ্যে এসেছিল বলে জানান আইজিপি।
১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসের সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানানো শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল পান্থপথের অভিযানের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান। মন্ত্রী বলেন, সন্দেহভাজন এক জঙ্গির অবস্থানের তথ্য পেয়ে সোয়াটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই অভিযান শুরু করে। সেখানে ‘নাশকতার সরঞ্জাম’ থাকতে পারে বলেও তাদের কাছে খবর আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের মহাপরিদর্শক (গোপনীয়) মনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, সাইফুলের ওপর আগে থেকেই নজর রাখছিল পুলিশ।
‘সে নব্য জেএমবির সদস্য; আগে শিবির করত। তার বাবা আবুল খায়ের মোল্লাও খুলনার জামায়াত নেতা। এক সপ্তাহ আগে সাইফুল ইসলাম খুলনা থেকে ঢাকায় আসে চাকরি খোঁজার জন্য।’
ঢাকাটাইমস/১৫ আগস্ট/এএ/ডব্লিউবি