বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়ায় বেঁচে গেছে ৮০০ ভারতীয়

রাহেবুল ইসলাম টিটুল, কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
| আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০১৭, ২২:৫৩ | প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট ২০১৭, ২২:১০

বানের পানি ভেঙে প্রায় ৮০০ ভারতীয় নারী-পুরুষ-শিশু বাংলাদেশের লালমনিরহাটের দুই গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশে ঢুকতে না দিলে বানের পানিতে মৃত্যু হতো তাদের।

তাদের একজন বছির উদ্দিন (৭৫)। বাংলাদেশে ঢুকে জীবন বাঁচানোর কথা তুলে ধরেন সংবাদকর্মীদের কাছে।

বছির উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে ঢুকতে না দিলে ধরলা নদীর বন্যার পানিতে বহু ভারতীয়কে মরতে হতো। আমরা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে ঢুকেছি।’

আশ্রয় নেয়া মানুষের ভাষ্য, পানির তীব্র স্রোতের কারণে ভারতের ভেতরের দিকে যাওয়ার উপায় ছিল না তাদের। আবার তাদের আবাসস্থল ‘জারি ধরলা’ চরে থাকলে নিশ্চিত ধরলার বন্যার পানিতে ভেসে যেতে হতো।

তারা জানায়, প্রথম দিকে অনেকে ভারতে ঢুকতে পেরেছে। কিন্তু তারা ৭০০-৮০০ মানুষ শিশু, বৃদ্ধ নিয়ে আটকা পড়েন। পরে জীবন বাঁচাতে তারা পানি ভেঙে বাংলাদেশের দিকে চলে আসেন।

বাংলাদেশে তাদের ঢুকতে দেয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ভারতীয় নাগরিকরা বলেন, ‘বাংলাদেশি ও বিজিবির সদস্যরা আমাদের ঢুকতে না দিলে কয়েক শ লোকের নিশ্চিত মৃত্যু ঘটত। যত দিন বেঁচে থাকব তত দিন বিজিবি ও বাংলাদেশের মানুষের কথা মনে রাখব।’

ধরলার ভয়াবহ বন্যা থেকে জীবন বাঁচাতে ভারতীয় দুই গ্রামের আট শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু লালমনিরহাট জেলার মোগলহাট ও দুর্গাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে বলে বিজিবি নিশ্চিত করেছে।

গত শনিবার (১২ আগস্ট) সন্ধ্যায় এসব ভারতীয় লোকজন একাধিক গ্রামে স্থানীয় লোকজনের বাড়ি, ফাঁকা জায়গা ও পাকা রাস্তার ওপর আশ্রয় নেয়। মঙ্গলবার বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয়দের বাড়ি ও পাকা রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। তাদের একজন জারি ধরলা চরের বাসিন্দা অন্তঃসত্ত্বা আর্জিনা খাতুন (৩৫)। তিনি তিন মেয়ে, এক ছেলে আর স্বামী ইকুল হকসহ (৪৪) দুর্গাপুরের কুমারপাড়ায় উঠেছেন। দিল্লির এক সেলাই কারখানার শ্রমিকের স্ত্রী একই গ্রামের এক সন্তানের মা মেহের বানীও (২৩) এসেছেন।

চার শিশুসন্তান নিয়ে বাংলাদেশি ফজলুল হকের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া ছামিদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশিদের সাহায্যে ভারতীয় গীতালদহের দরিবাস ও জারি ধরলা দুই গ্রামের প্রায় ৮০০ মানুষ বেঁচে গেছে। এ দেশে ঢোকার সুযোগ না দিলে এসব লোক ধরলার ভয়ংকর বন্যায় ভেসে মারা যেত।’ এই সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। একই ইউনিয়নের কর্ণপুর এলাকার আশ্রয়দাতা ফজলুল হক ও তার স্ত্রী গোলে খাতুন বলেন, ‘ধরলা নদীতে জেগে ওঠা ভারতীয় জারি ধরলা চরের বছির উদ্দিন (৭২) ও তার স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন (৬৩) ভারতীয় মানুষ। তারা নিরুপায় হয়ে একটু আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে ঢুকেছে। এ জন্যই তাদের থাকার জায়গা করে দিয়েছি। যদিও আমাদের বাড়ীতেও এক হাঁটু পানি উঠেছে।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের চওড়াটারী এলাকার বাসিন্দা রিয়াজুল হক (৪৪) তার ধান শুকানোর চাতালের ফাঁকা জায়গায় কিছু ভারতীয়কে আশ্রয় দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক মহাবিপর্যয়ের সময় কারো দেশ থাকতে নেই। ভারতীয় লোকজন এসেছে একটু আশ্রয়ের জন্য। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে।’ লালমনিরহাট উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ভারতীয় কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার গীতালদহের দরিবাস ও জারি ধরলা চর দুটিতে প্রায় ৫ হাজার লোকজন বসবাস করে। অনেকেই ভারতের ভেতরে চলে গেলেও জীবন বাঁচার তাগিদে কিছু নারী-পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশে এসেছে। তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেই ভারতীয়রা নিজ দেশে ফিরে যাবেন।’

লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল গোলাম মোর্শেদ ভারতীয়দের আশ্রয় নেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘পাঁচ শতাধিকের মতো ভারতীয় নারী-শিশু ও পুরুষ বাংলাদেশে এসেছে। আশ্রয় নেয়া লোকজনের খোঁজ-খবর রাখছে বিজিবির সদস্যরা।

(ঢাকাটাইমস/১৫আগস্ট/মোআ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :