১৫ আগস্ট কি আপনি ভাত খাননি?

শরিফুল হাসান
 | প্রকাশিত : ১৬ আগস্ট ২০১৭, ২০:১৯

আচ্ছা ১৫ আগস্ট কি আপনি ভাত খাননি? আপনার দৈনন্দিন সব কাজ করেননি? তাহলে একজন শিক্ষক যদি তার ছাত্র‌দের আহবানে সাড়া দি‌য়ে তা‌দের ক‌য়েকটা ট‌পিকস ব‌ু‌ঝি‌য়ে দেয় তাহ‌লে সমস্যাটা কোথায়? আমি তো মনে করি ওই শিক্ষককে এজন্য স্যালুট দেয়া উচিত। আমার তো মনে হয় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ গড়ার কাজটাই তিনি করছেন।

ঘটনাস্থল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার সাংবা‌দিকতা বিভা‌গের শিক্ষক মাহবুবুল হক ১৫ আগস্ট সকালে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পাসে আসেন। এরপর যথারীতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে ফুল প্রদান শেষে ওইখানেই দাঁড়ান।। এর মধ্যে তাঁর কিছু ছাত্রছাত্রী এসে বলে, ক‌য়েক‌দিন পর তা‌দের পরীক্ষা। তারা কিছু বিষয় বুঝছে না, একটু সময় দিতে। ওই শিক্ষক তখন তাদেরকে ডিপার্টমেন্টে তাঁর রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে বলনে।

বাকিটা শুনুন ওই শিক্ষ‌কের মু‌খে। তি‌নি ফেসবুকে লি‌খেছেন, "ডিপার্টমেন্টে গিয়ে দেখি ওরা সংখ্যায় প্রায় ১০-১২ জন। আর এর মধ্যেই আমার আরেকজন সহকর্মী অন্য ডিপার্টমেন্টের আরও দুজন সহকর্মীসহ রুমে আসে। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে ওই রুমে বসে কথা বলা সম্ভব ছিল না। কারণে রুমে এত মানুষের বসার জায়গা ছিল না। আমি স্টুডেন্টদেরকে পাশের একটি রুমে বসতে বলি এবং নিজেও একটু পরে সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করি। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আদতে ওই ব্যাচের ক্লাস অনেক আগেই শেষ। এখন তা‌দের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। ইতিমধ্যে একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিতও হয়েছে। সুতরাং ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ একেবারেই সঠিক নয়।"

মাহবুবলকে আমি চি‌নি সাত আট বছর ধ‌রে। এমন দা‌য়িত্ববান শিক্ষক খুব কম আছে। আমি আমি কোনভা‌বেই বুঝলাম না একজন শিক্ষক শোক দিবসে পরীক্ষার্থী ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বললে সমস্যা কোথায়? ছাত্রলীগ ঠিক কী কার‌ণে তার বিরু‌দ্ধে আন্দোলন কর‌ছে তাও বুঝলাম না। ছাত্রলী‌গের না‌কি দা‌বি ২৪ ঘন্টার ম‌ধ্যে ওই শিক্ষক‌কে ব‌হিস্কার কর‌তে হ‌বে। কারণ তি‌নি শোক দিব‌সে ক্লাস নি‌য়ে‌ছেন।

ছাত্রলী‌গের নেতা‌দের কা‌ছে আমার খুব জান‌তে ইচ্ছে ক‌রে একজন ডাক্তা‌রের কা‌ছে রোগী গে‌লে তি‌নি কী শোক দিবস ব‌লে চি‌কিৎসা বন্ধ রাখ‌বেন? এসব ভাবনা কোথা থে‌কে আসে? আমি তো বলবো মাহবুব খুব ভা‌লো কাজ ক‌রে‌ছে। একজন শিক্ষক ২৪ ঘন্টাই যে শিক্ষক সেটা প্রমান করেছে সে। তারপরও সরকার চাই‌লে ঘটনা তদন্ত কর‌তে পা‌রে। ত‌বে আমি নি‌শ্চিত বঙ্গবন্ধু য‌দি পরপার থেকে এই ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক দেখ‌তেন তি‌নি মুগ্ধ হ‌তেন।

ছাত্রলীগসহ সরকা‌রি দ‌লের নেতাকর্মী‌দের কা‌ছে অনুরোধ বাড়াবা‌ড়ি বন্ধ ক‌রুন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শটা বুঝুন। এই যে কয়‌দিন আগে তা‌রিক সালমনকে একইভা‌বে অভিযুক্ত কর‌তে চে‌য়ে‌ছি‌লো সেখানকার আওয়ামীলীগ নেতারা। তা‌তে কী লাভ হ‌য়ে‌ছে?

এখা‌নে আরওও ক‌য়েকটা কথা বলা জরুরী। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬। টানা ২১ বছর ক্ষমতায় ছিলো না আওয়ামী লীগ। ৭৫ এর পর তো বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে রাষ্ট্রীয় সব আয়োজন হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে কী বাঙালির মন থেকে মুছে ফেলা গেছে? যায়নি। বরং এদেশের বহু মানুষ আমরা আমাদের মনের মনিকোঠায় সযত্নে রেখেছি বঙ্গবন্ধুকে।

আমার কথা শু‌নে সরকা‌রি দ‌লের অনে‌কেই রাগ কর‌তে পা‌রেন। বিষয়টা স্পর্শকাতর ব‌লে অনেকেই কথা বলতে চান না। কিন্তু স‌ত্যি বল‌ছি আমার গত ক‌য়েকবছর ধ‌রে ম‌নে হ‌চ্ছে ১৫ আগস্ট নি‌য়ে কিছু লোক বাড়াবা‌ড়ি কর‌ছে।

১৫ আগস্ট দিন ভো‌রে আমি খুলনা ছিলাম। আগের দিন রা‌তে দে‌খি মো‌ড়ে মোড়ে গান বাজ‌ছে। শো‌কের চে‌য়ে উৎসব উদযাপ‌নের চিত্র ম‌নে হ‌য়ে‌ছে আমার। ১৫ আগস্ট ভোর থেকে দে‌খে‌ছি বি‌ভিন্ন মো‌ড়ে মো‌ড়ে বড় বড় চুলায় বি‌রিয়া‌নি রান্নার আয়োজন চল‌ছে। আমার কা‌ছে ম‌নে হ‌য়ে‌ছে অনেকের চো‌খে মু‌খে যথাযথ শ্রদ্ধা নেই।

১৫ আগস্ট আমাকে এক সরকা‌রি কর্মকর্তা ইনবক্স ক‌রে‌ছে যা‌কে আমি মু‌ক্তিযু‌দ্ধের স্বপ‌ক্ষের মানুষ হি‌সেবে বহু‌দিন ধ‌রে জা‌নি। তি‌নি লি‌খে‌ছেন, আমি ঢাকা গিয়েছিলাম বেশ কিছু ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে। আড়াই বছর বয়সী ছেলেকে ডাক্তার দেখানো এর মধ্যে অন্যতম। ১৬ তারিখ ছুটি নিয়েছিলাম। আর ১৪, ১৫ নিয়েছিলাম কর্মস্থল ত্যাগের অনুমতি। কিন্তু আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষ আমাকে বাধ্য করলেন ১৪ আগস্ট রাতেই তা‌কে ফিরতে। ১৫ আগস্ট ভোরে নাকি শোকর‍্যালী হবে। সেখানে না থাকলে নাকি মহাপাপ হবে। একে একে সবার নাম ডাকা হবে।

ওই কর্মকর্তা লি‌খে‌ছেন, আমি যে কী পরিমাণ কষ্ট করে এই রাতে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে আমার স্ত্রী সন্তান নিয়ে কর্মস্থ‌লে ফিরেছি সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। অথচ আমি ছুটির দরখাস্তে লিখেছিলাম যে শোক দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করব। বলেছিলাম, সকালের ট্রেনে করে ১১টার মধ্যে এসে পৌছে যাব। কিন্তু তাতেও কতৃপ‌ক্ষের মন গলেনি। আমাকে রা‌তেই আসতেই হল। এই বাড়াবা‌ড়ির মা‌নে কী?

আমি আসলেই জা‌নি না এই বাড়াবা‌ড়ির মা‌নে কী? সারা‌দেশে এমন ঘটনা নিশ্চয়ই আরও আছে। আমার কা‌ছে ম‌নে হয় বঙ্গবন্ধু‌কে বোঝার ঢের বা‌কি আমাদের। তাই জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দি‌য়ে খুন কর‌তে ছাত্রলী‌গ যুবলীগ আওয়ামীলী‌গের কারও কারও বুক কাঁপে না। বুক কাঁপে না বঙ্গবন্ধুর নাম ক‌রে চাঁদাবা‌জি বা অন্যায় কর‌তে।সরকা‌রের কা‌ছে অনু‌রোধ এমন লোক‌দের থামান যা‌দের কা‌জে বঙ্গবন্ধু ছোট হয়। থামান সেই উপাচার্যদের যারা মু‌খে বঙ্গবন্ধুর কথা ব‌লে নি‌জের ক্ষমতা টি‌কিয়ে রাখ‌তে ছাত্রলীগকে ব্যবহার ক‌রে।

আমি বিশ্বাস ক‌রি যারা বঙ্গবন্ধু‌কে স‌ত্যি সত্যি ভা‌লোবা‌সে তারা তা‌দের নিজ নিজ দা‌য়িত্ব ঠিকভা‌বে পালন ক‌রে, দুর্নীত‌ি অনিয়মের বিরু‌দ্ধে সোচ্চার হয়। কু‌মিল্লা বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ে সেই কাজটাই ক‌রেছে মাহবুব আসাদ মে‌হেদ‌িরা। বরগুনায় সেটা ক‌রে‌ছে তা‌রিক সালমনরা।

স‌রকা‌রি দ‌লের লোকজন‌কে আমি ম‌নে ক‌রি‌য়ে দিতে চাই খন্দকার মোশতাকরা লোকজ‌নের সাম‌নে বঙ্গবন্ধুপ্রেম দে‌খি‌য়ে বঙ্গবন্ধু‌কে হত্যা ক‌রে আর তাজউ‌দ্দিনরা অন্যায় মে‌নে না নি‌য়ে জীবন দি‌য়ে প্রমান ক‌রে গে‌ছেন তা‌দের ভা‌লোবাস। আমি ম‌নে ক‌রি দেশকে ভা‌লো‌বে‌সে যারা নিজ নিজ দা‌য়িত্ব পালন কর‌ছে সততার সাথে তারাই আসলে বঙ্গবন্ধু‌কে ভা‌লোবা‌সে। তারা লোক দেখায় না। বঙ্গবন্ধু‌কে নি‌য়ে বাণিজ্য ক‌রে না। বু‌কের ম‌ধ্যে তারা যত্ন ক‌রে রা‌খে বঙ্গবন্ধু‌কে। আর এ কার‌ণেই বঙ্গবন্ধু‌ কখ‌নো হারাবে না এই দেশ থে‌কে। ত‌বে হা‌রি‌য়ে যা‌বে চাটুকাররা।

লেখকঃ উন্নয়নকর্মী

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :