কুড়িগ্রামে বন্যা: ৪ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ আগস্ট ২০১৭, ২০:৫২

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি ধীর গতিতে হ্রাস পাচ্ছে। চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে।

সরকারি তথ্যানুযায়ী জেলার ৯ উপজেলায় ৬০ ইউনিয়নের ৮শ ২০টি গ্রামের ৪ লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বানভাসী মানুষেরা গত ৫ দিন ধরে ঘর-বাড়ি ছেড়ে গবাদি পশুসহ আশ্রয় নিয়েছে পাকা সড়ক, উচু বাঁধ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বন্যা দুর্গত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দেয়ায় দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে বানভাসীদের।

গত চার দিনে বন্যার পানিতে ডুবে ১১ জন ও সাপের কামড়ে ১ জনসহ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই শিশু।

কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সড়ক তলিয়ে চারটি পয়েন্টে ধসে যাওয়ার এখনো বন্ধ রয়েছে সোনাহাট স্থল বন্দরসহ নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা।

৪৩৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে থাকায় বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। তলিয়ে গেছে ৫০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন সবজি ক্ষেত।

জেলা মৎসসম্পদ কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, বন্যার পানিতে ভেসে গেছে জেলার ৮ হাজার পুকুরের প্রায় ১২ কোটি টাকার মাছ।

বিজিবির পক্ষ থেকে গত ৪দিন ধরে কুড়িগ্রামের ৪৫ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক আউয়াল উদ্দিন আহমেদ বন্যার্তদের মাঝে প্যাকেজ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। কুড়িগ্রাম পৌরসভার পক্ষ থেকে মেয়র আব্দুল জলিল পৌরসভা এলাকার প্রায় ৫ হাজার বানভাসীর মাঝে খিচুরির প্যাকেট বিতরণ করেছে। ত্রাণ বিতরণ করছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি মো. জাফর আলী। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও মোটর মালিক সমিতির সভাপতি শিল্পপতি পনির উদ্দিন আহমেদসহ ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই ত্রাণ তৎপরতা শুরু করছেন। কুড়িগ্রাম জেলা ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিমের ব্যক্তিগত ১১শ বানভাসী ১১শ বাড়িতে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন।

সরকারি-বেসরকারিভাবে সামান্য ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। চরাঞ্চলের দুর্গম এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এসব এলাকায় ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন না কেউ। ফলে ত্রাণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এসব এলাকার মানুষের।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা চরের শাহ কামালের স্ত্রী জমিরন জানান, শুনি অন্য জায়গার মানুষ ত্রাণ পায়- কিন্তু আমরা পাই না। কেউ এতো দূরে আসে না। ৫ দিন ধরে পানিবন্দি আছি কেউ কিছু দেয় নাই।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, বন্যার্তদের জন্য ৪শ ৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ২৫ হাজার ১৪টি পরিবার। বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য সাড়ে ১৭ লাখ ৫ হাজার টাকা, ৬শ ৫১ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে চাহিদা অনুযায়ী বিতরণ করা হবে।

এদিকে রৌমারী উপজেলায় বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করেছে ত্রাণ মন্ত্রণলয়ের অতিরিক্ত সচিব আতিকুল রহমান।

এসময় বন্যা দুর্গত বেশির ভাগ মানুষের ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী ত্রাণ দেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :