নার্সিংয়ে পড়ার সুযোগ চান রাজশাহীর সেই মা

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ১৭ আগস্ট ২০১৭, ০৮:৪১

সামাজিক মর্যাদা নেই। তাই টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদও চান না তিনি। শুধু চান একটু পড়াশোনার সুযোগ। ১৮ বছর বয়সী ওই তরুণীর বিশ্বাস, নার্সিংয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেলেই তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন। তখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন নিজের সন্তানকে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বটতলী গ্রামের এই তরুণীর ছেলের বয়স এখন সাড়ে তিন বছর। ১৪ বছর বয়সে ধর্ষণের শিকার হয়েই এ সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তারপরের গল্প শুধুই সংগ্রামের। এ নিয়ে গত ১২ আগস্ট ঢাকাটাইমসে ‘ধর্ষণে জন্ম নেয়া সন্তান নিয়ে যন্ত্রণায় এক মা’ শিরোণামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর রাজশাহীর একজন ব্যবসায়ী এবং একজন সুইজারল্যান্ড প্রবাসী মেয়েটিকে আর্থিক সাহায্য করতে এগিয়ে আসলে তিনি সেই সহযোগিতা গ্রহণ করেননি। তার কথা, পারলে কেউ তাকে নার্সিংয়ে পড়াশোনা করার ব্যবস্থা করে দিক। এতেই তার স্বপ্নপূরণ হবে।

প্রতিবেদন প্রকাশের পরই রাজশাহী মহানগরীর কোর্ট স্টেশন এলাকার আবু জাফর নামে এক ব্যবসায়ী ঢাকাটাইমসের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি মেয়েটিকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিষয়টি ওই তরুণীকে জানানো হলে কিন্তু সহযোগিতা গ্রহণ করতে রাজি হননি।

এরপর গত মঙ্গলবার ইমরান হোসাইন নামে এক সুইজারল্যান্ড প্রবাসী রাজশাহীর একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে ঢাকাটাইমসের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনিও মেয়েটিকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিষয়টি মেয়েটিকে জানানো হলে এবারও তিনি সহযোগিতার প্রস্তাব নাকচ করেন। পাবনার বাসিন্দা ইমরান হোসাইন তখন মেয়েটির মোবাইল নম্বর নিয়ে নিজে তার সঙ্গে কথা বললেও মেয়েটি তার সহযোগিতা গ্রহণ করতে চাননি।

ব্যবসায়ী আবু জাফর এবং ইমরান হোসাইন জানান, মেয়েটির অসহায়ত্বের কথা জেনে তারা তাকে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলেন। অন্তত তার সন্তানের জন্য হলেও মেয়েটির কিছু টাকা দরকার। কিন্তু মেয়েটি তা গ্রহণ করতে রাজি হননি।

আর মেয়েটি বলেছেন, আগে তিনি নার্সিংয়ে ভর্তির সুযোগ চান। তখন হয়তো পড়াশোনা চালাতে তার টাকার প্রয়োজন। কিন্তু পড়াশোনার সুযোগ না পেলে কারও আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে তিনি ঋণগ্রস্ত হতে চান না।

মেয়েটি যে আর্থিকভাবে খুব স্বচ্ছল তা নয়। বাবা কৃষি কাজ করেন। বড় ভাই নির্মাণ শ্রমিক। মা গৃহিনী। আর ছোট বোনের বিয়ে হয়েছে কয়েক বছর আগে। বাবা-ভাইয়ের উপার্জনেই চলে তাদের সংসার। তারপরও আর্থিক সহযোগিতা চান না তিনি। শুধু চান নার্সিংয়ে পড়ার সুযোগ।

ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর মেয়েটিকে তার সন্তান নিয়ে সরকারি আবাসন কেন্দ্রে ‘বন্দি’ জীবন কাটাতে হয়েছে প্রায় তিন বছর। সেখান থেকে কোর্ট-কাচারি করতে হয়েছে। চলেছে পড়াশোনাও। যখন তিনি সন্তান জন্ম নেয়, তখন তার এসএসসি পরীক্ষা চলছিল। মহিলা সহায়তা কর্মসূচির সেই আবাসন কেন্দ্র থেকে তাকে এসএসসির বেশ কয়েকটি পরীক্ষা দিতে হয়েছিল।

মেয়েটি এইচএসসির পরীক্ষাও দিয়েছিল আবাসন কেন্দ্র থেকে। পাসও করেছে। কিন্তু এখন নার্সিংয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করারই সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি। কারণ, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সন্তানের মা তো দূরের কথা, কোনো বিবাহিত মেয়েই নার্সিংয়ে ভর্তির আবেদন করতে পারেন না। সরকারি-বেসরকারি সব নার্সিং কলেজের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য।

মেয়েটিকে যে যুবক ধর্ষণ করেছিল, আদালত তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। তিনি এখন কারাগারে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই তরুণীর মতো যারা ভুক্তভোগী, তাদের জন্য নার্সিং কলেজে ভর্তির নিয়মকানুন শিথিল করা প্রয়োজন। এজন্য তারা সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।

ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/আরআর/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :