ইসিকে যেসব পরামর্শ দিলেন টিভি-অনলাইন সাংবাদিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০১৭, ২০:৪৭ | প্রকাশিত : ১৭ আগস্ট ২০১৭, ১৫:৩৩

নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার যথাযথ প্রয়োগ, সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি, ত্রুটিহীন ভোটার তালিকা করা, প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার, সংখ্যালঘুরে নিরাপত্তা, প্রার্থীদের অর্থের উৎসের সন্ধান, তাদের ব্যয় নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখা নিশ্চিত করাসহ নির্বাচন কমিশনকে নানা প্রস্তাব দিয়েছেন বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন, রেডিও এবং অনলাইন গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা।

বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এসব পরামর্শ উঠে আসে। একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইন সংস্কার, সীমানা পুননির্ধারণসহ ঘোষিত রোডম্যাপ নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে গণমাধ্যমের সঙ্গে দুই দিনব্যাপী সংলাপের বসে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রথম দিন বুধবার বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে। আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন ও রেডিওপ্রধানসহ গণমাধ্যম প্রতিনিধির সঙ্গে সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন।

সকাল ১০টায় নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে সংলাপ শুরু হয় শেষ হয় দেড়টায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে সংলাপে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে ২৪ জন গণমাধ্যম প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

সংলাপে বেসরকারি টেলিভিশন বাংলাভিশনের হেড অব নিউজ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কয়েক ধাপে আলোচনা করা দরকার। কারণ তারাই মূল স্টেকহোল্ডার। তাদেরকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেয়া, তারা যেন নিরাপদে ভোট দিতে পারে সে ব্যপারে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।

আরেক বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসির হেড আব নিউজ মঞ্জুরুল ইসলাম এ বলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেন ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা দিতে হবে। প্রয়োজনে হাই কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এটার ব্যবস্থা করা উচিত যাতে তারা বিদেশে বসে ভোট দিতে পারে। আর চিহ্নিত অপরাধীরা যেন পোলিং এজেন্ট না হতে পারে সে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। কারণ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাধারণ মানুষ ভয় পায়।

মাই টিভির খান মোহাম্মদ সালেহ বলেন, এলাকাভিত্তিক প্রশাসন নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন করে। তাই তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ বেশি রাখতে হবে ইসিকে।

ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের খালেদ মুহিউদ্দিন বলেন, ‘আপনারা যদি এটা বিশ্বাস করেন আপনাদের আর কোন চাওয়া-পাওয়া নেই, তাহলে আপনাদের যে কাজ, যে দায়িত্ব তা আপনারা পালন করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘কেউ বলবে সেনাবাহিনী প্রয়োজন, কেউ বলবে প্রয়োজন নেই। মূল কথা হলো আপনাদের উপর যেন ভোটাররা আস্থা রাখতে পারে।...আপনারা (নির্বাচন কমিশন) ম্যাসেজ দেন যে আপনারা ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। আপনারা একটা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করুন।’

একাত্তর টিভির মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘বলা হয় রাজনৈতিক দলগুলো হলো প্রধান স্টেকহোল্ডার। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে মতে করি, ভোটারাই প্রধান স্টেকহোল্ডার। নির্বাচন কমিশনের উচিত স্টেকহোল্ডারের স্বার্থে রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উৎসবমুখর একটা পরিবেশ তৈরি করা। সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করা। নির্বাচনে যেন সবাই অংশগ্রহণ করে।

মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘ফলাফল প্রকাশে নির্বাচন কমিশন যেন পিছিয়ে না থাকে। কেন তারা মিডিয়ার থেকে পিছিয়ে থাকবে?’ তিনি প্রতিটা কেন্দ্রের ফলাফল অনলাইনে তাৎক্ষণিক প্রকাশের কথা বলেন।

চ্যানেল আই এর রহমান মোস্তাফিজ ‘না’ ভোটের বিধান রাখার পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে এক লক্ষ ‘না’ ভোট পড়েছে। এটা আরও বাড়বে আর এতে প্রার্থীদের উপর চাপ বাড়বে। দলগুলো তাহলে দুর্নীতিমুক্ত প্রার্থী দেবে। আমি মনে করি এটা রাখা উচিত। কারণ, এমন হতে পারে কোনো প্রার্থীই জনগণের পছন্দ হলো না, তখন তারা তাদের মত জানিয়ে দিতে পারে।

এটিএন বাংলার জ ই মামুন বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য আপনাদের লিডারশিপ ভূমিকা নিতে হবে, কন্ট্রোলারের ভূমিকা নিতে হবে। তফসিল ঘোষণার পর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে থানার ওসিরা প্রধান নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠবে। নির্বাচনে তাদের উপর কতটা কন্ট্রোল থাকবে নির্বাচন কমিশনের সেটাই মূল প্রশ্ন।’

প্রার্থীরা নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দেয় সেটার তদারকিতে কার্যকরী ব্যবস্থা নেই বলেও মনে করেন জ ই মামুন। বলেন, কেউ ভুল তথ্য দিলে দুই থেকে সাত বছরে জেল হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে আমি কখনও শুনিনি কারও দুই ঘণ্টার জেল হয়েছে। কিন্তু সবাই কি সঠিক তথ্য দেয়? নির্বাচনের ব্যয় শুরু হয় তফসিল ঘোষণার দুই বছর আগে থেকে। এখনই রাস্তায় বিলবোর্ড দেখা যায়। এখনি ডকুমেন্টারি বানানো হয় টেলিভিশনের জন্য সেগুলো কি নির্বাচনী ব্যয়ের মধ্যে পড়ে না? তার পরে বিভিন্ন দলকে বড় কোম্পানি চাঁদা দেয় সেটা আপনাদের মনিটরিং করতে হবে। বাংলাদেশে নির্বাচনে টাকা হলে সব কেনা যায়। তাই নির্বাচন কমিশনকে দেখতে হবে প্রার্থীর টাকা কোথা থেকে আসছে।’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে আসছে আমরা যেটা বুঝতে পারছি। তাই নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক থাকে এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া সরকার। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচনী কেন্দ্র আছে তা চিহ্নিত করে তা এখই ব্যবস্থা নিতে হবে।

নিউজ টোয়েন্টিফোরের নির্বাহী পরিচালক হাসনাইন খোরশেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন যেন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের এডেন্ডা বাস্তবায়নকারী না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

দেশ টিভির সুকান্ত গুপ্ত অনিক বলেন, ‘আপনাদের যে ক্ষমতা আছে সেটা প্রকাশ করতে হবে। জনগণ যেন বুঝেতে পারে আপনারা নিরপেক্ষ কাজ করছেন।’

চ্যানেল আই এর শাইখ সিরাজ, সময় টিভির আহমেদ যুবায়ের, মাছরাঙ্গার রেজওয়ানুল হক রাজা, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের তালাত মামুন, ফাহিম আহমেদ প্রমুখ এই সংলাপে অংশ নেন।

(ঢাকাটাইমস/১৭আগস্টজেআর/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

স্বস্তি নেই মাছ-মাংসে, ফের বাড়ছে আলু-পেঁয়াজের দাম 

ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৮ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি শুরু

ঢাকায় কর দিয়ে ২৬৮০ বিয়ে 

সংরক্ষিত আসনের এমপিদের মধ্যেও সংখ্যায় এগিয়ে ব্যবসায়ীরা: সুজন

মানবাধিকার ও ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা জরুরি: ড. কামাল উদ্দিন

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রেলকে গড়ে তুলতে হবে: রেলমন্ত্রী

ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

জিম্মি নাবিকদের মুক্তির আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডিএনসিসি কার্যালয় সরানোর মধ্য দিয়ে কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :