উইনিং কম্বিনেশন ভাঙা উচিত হবে না

লিয়াকত আলী ভূঁইয়া
| আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০১৭, ১০:১০ | প্রকাশিত : ১৭ আগস্ট ২০১৭, ১৬:২৩

অস্ট্রেলিয়া দলকে স্বাগত।এই সিরিজটা অবশ্য গতবছরই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অযৌক্তিভাবে তারা বাংলাদেশ সফরে আসেনি। তার কয়েকমাস পরেই অবশ্য ইংল্যান্ড দল সফর করে গেছে। বাংলাদেশে যে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নেই এবং যে কোনো দেশের চেয়ে এখানে নিরাপদ-এটা বুঝতে একটু দেরি করেছে অস্ট্রেলিয়া।অবশ্য অস্ট্রেলিয়ানরা সবসময় একটু বেশিই সতর্ক। একসময় পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা সফরের ব্যাপারে তারা মাঝেমধ্যেই নাক সিটকাতো।

সিরিজটা বাংলাদেশের জন্য কাঙ্খিত। কিন্তু টাইমিংটা কাঙ্খিত নয়। যেভাবে টানা বৃষ্টি হচ্ছে তাতে, সিরিজের দশটা দিন বৃষ্টি ছাড়া পার করা যবে, তা ভাবা যায় না। সিরিজটা কিছু দিন পরে হলে ভালো হতো। অবশ্য সপ্টেম্বরেই লম্বা সফরে দক্ষিণ আফ্রিকা যেতে হবে টাইগারদের। আমি মনে করি, অস্ট্রেলিয়া সিরিজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ টাইগারদের জন্য। এই সিরিজ দিয়েই মৌসুম শুরু করবে তারা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ভালো করার মনোবল আসতে পারে এই সিরিজ থেকেও।

সিরিজটা গুরুত্বপূর্ণ আরেক দিক দিয়ে। আমি মনে করি, অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারলে বাংলাদেশ দলের গায়ে বড় দলের সাইনবোর্ড লেগে যাবে অনেকটাই। গত বছর ঢাকাতে ইংল্যান্ডকে হারানো, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়–ঘটনা দুটে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের জন্য খুবই ইতিবাচক। আর এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আরেক ধাপে নিয়ে যেতে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো দরকার হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ কী অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে সক্ষম হবে?পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই প্রশ্ন ওঠার খুব এটা সুযোগ নেই। কারণ গতবছরই ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে টাইগারারা।শক্তি সামার্থ্যের বিচারে ইংল্যান্ড দলটা অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে এগিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে।যে দল ইংল্যান্ডকে হারাতে পারে, সে দল তো অজিদেরও হারাতে সক্ষম- এটা সাধারণ হিসেব।আমি মনে করি, দেশের মাটিতে অজিদের হারানোর ক্ষমতা আছে টাইগারদের।দলের আত্মবিশ্বাসও ভালো থাকার কথা। কারণ, গত ম্যাচে জয়ের সুখস্মৃতি তাদের সামনে, তাও দেশের বাইরে।

দল নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। মুমিনুল, রিয়াদ বাদ পড়ছেন শোনা যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচটিতে এ দুজন ছিলেন না।এদের দলে ফিরে আনার জন্য অনেকেই সোচ্চার। কিন্তু আমার মনে হয় না দলের উইনিং কম্বিনেশন ভাঙা হবে। ভাঙা উচিৎও নয়। ওদের বিকল্প সাব্বির রহমান ও মোসাদ্দেক বেশ ভালো করছেন। অভিজ্ঞ এবং পরিসংখ্যান ভালো হলেই যে তাকে দলে রাখতে হবে সেটা ঠিক নয়। তাহলে তো হাবিবুল বাশার সুমনকেও দলে রাখতে হয়, কারণ তার ব্যাটিং গড় বেশ ভালো! রিয়াদ, মুমিনুল বেশ অভিজ্ঞ। কিন্তু তাদের সাম্প্রতিক ফর্মও তো দেখতে হবে। নতুন যারা ভালো করছে তাদেরও তো পর্যাপ্ত সুযোগ পেতে হবে।

তার মানে এই নয় যে, আমি মুমিনুল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলে নেওয়ার বিরোধী। টেস্টে এক সময় মুমিনুলকে বাংলাদেশ দলের সম্পদ মনে করা হতো। তার ব্যাটিং টেকনিকও ছিল অসাধারণ। সেই মুমিনুলের ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে কথা উঠছে। কোচ নাকি তার ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে খুশি নন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবস্থাও তাই। কোচ তাদের সম্ভবত সময় দিতে চাইছেন। ক্রুটিগুলো শুধরেই তারা দলে ফিরবেন, এটাই প্রত্যাশা আমার।

অনেকদিন ধরেই টেলএন্ড বাংলাদেশ দলকে ভোগাচ্ছে। টপ অর্ডার শেষ হওয়ার পরই অলআউট হয়ে যাচ্ছে। ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার মতো দলে টেলএন্ডাররা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। একটা দলকে তখনই বড় বলা যায়, যখন বিপদে টেলএন্ডাররা পরিপূর্ণ ব্যাটসম্যানের ভুমিকা পালন করে। যেটা আমাদের দলে দেখা যায় না। টেলএন্ডারের উপর যেহেতু ভরসা করা করা যায় না, তাই আমি মনে করি আট ব্যাটসম্যান নিয়ে মাঠে নামা উচিৎ বাংলাদেশের। মানে একজন বেশি ব্যাটসম্যান খেলানো উচিৎ।

টেস্ট জিততে হলে প্রতিপক্ষের ২০টি উইকেট নিতে হবে। বাংলাদেশের জন্য যা সহজ নয়। ইংল্যান্ডকে স্পিনে ঘায়েল করেছিল বাংলাদেশ। কাজেই টার্নিং উইকেট ও স্পিনার ছাড়া কোনো পথ নেই। ফাস্ট উইকেট এবং পেস বোলিং দিয়ে ওদের কিছুই করা যাবে না। এই দিকটা ভাবাই উচিৎ নয়।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরাজ যা করেছিলেন তা ছিল অপ্রত্যাশিত। মূলত মিরাজের বোলিংয়েই ইংল্যান্ড বিধ্বস্ত হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মিরাজ আবারও জ্বলে উঠবেন তা আশা করা কঠিন। শ্রীলঙ্কা এবং ইংল্যান্ড সফর তার ভালো হয়নি। অবশ্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুই একটা ম্যাচ (ফাইনাল) বাদ দিলে পুরো টুর্নামেন্ট ছিল ব্যাটসম্যানদের। ওখানে করারও তেমন কিছু ছিল না বোলারদের।আমার মনে হয়, অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ভালো করবে মিরাজ। ও সবসময় উইকেট টু উইকেট বল করে। টার্নিং উইকেটে উইকেট টু উইকেট বল করলে ব্যাটসম্যানরা সমস্যায় পড়েন। আমি মনে করি, মিরাজের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে এ সিরিজে।

দুই ম্যাচের সিরিজ। তাই সিরিজ কারা জিতবে বলা সহজ নয়। বৃষ্টিও বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবুও আমার মনে হয়, বাংলাদেশ একটা ম্যাচ জিতবে। আর জিতলে সেটা হবে বড় সাফল্য বাংলাদেশ দলের জন্য।

লিয়াকত আলী ভূঁইয়া : প্রথম সহ-সভাপতি, রিহ্যাব

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :