বঙ্গবন্ধু হত্যায় ষড়যন্ত্র খুঁজতে কমিশন গঠনের চিন্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৭ আগস্ট ২০১৭, ১৭:৫৮
ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যায় জড়িতদের বিচার হলেও এই ঘটনার নেপথ্যে কারা ছিল সেটা বের হয়নি এতদিন। এ নিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার আক্ষেপের দুই দিনের মধ্যে এই চক্রান্ত খুঁজতে কমিশন গঠনের চিন্তার কথা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর নিবন্ধন পরিদপ্তর প্রাঙ্গণে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন। আইন মন্ত্রণালয় এ আলোচনা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের পিছনের করা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে একটা কমিশন করার চিন্তা করছে সরকার। যাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম বিষয়টি জানতে পারে।’

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে সুপ্রিম কোর্টে রক্তদান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা তদন্তে ষড়যন্ত্রের দিকটি উপেক্ষা করায় তার আক্ষেপের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের রায়ে আমরা পরিস্কারভাবে বলে দিয়েছি এটা একটা ক্রিমিনাল কনস্পিরেসি, পরিকল্পিতভাব হত্যা করা হয়েছিল এবং তাদেরকে বিচারের সোপর্দ করার জন্য।’

প্রধান বিচারপতি সেদিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যার সঙ্গে অনেক রাঘব-বোয়াল জড়িত ছিল। কিন্তু তদন্তে দুর্বলতার জন্য তাদেরকে বিচারে সোপর্দ করা যায়নি। এটি ছিল একটি ফৌজদারি ষড়যন্ত্র।’

উচ্চ আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানির স্মৃতিচারণ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি নথি পর্যালোচনা করে দেখলাম এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে আরো অনেক রাঘব বোয়াল অনেকে... জড়িত ছিল। কিন্তু ইনভেস্টিগেশনের ত্রুটির জন্য আমরা তাদের আর বিচারে সোপর্দ করতে পারি নাই।’

একই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনায় উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বঙ্গবন্ধু হত্যায় ষড়যন্ত্র খুঁজতে কমিশন গঠনের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) হত্যার পেছনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিল। এই ষড়যন্ত্রের বিস্তারিত তথ্য আমাদের জাতীয় ইতিহাসে সন্নিবেশিত হওয়া প্রয়োজন। এই হত্যা রহস্যের উদ্ঘাটন এখন সময়ের দাবি।’

বঙ্গবন্ধু হত্যা এক বিরাট চক্রান্ত ছিল মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে কিন্তু লাহোরে (পাকিস্তানের শহর) মারা হয়নি, তাকে ঢাকায় হত্যা করা হয়েছে। এর মানে হলো আমাদের মধ্যেই শত্রু আছে।’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, সেই হত্যার প্যাটার্নটা দেখেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, তার স্ত্রী, সন্তান, পুত্রবধুকে হত্যা করা হয়। কিন্তু কেন? এই হত্যার সবচেয়ে বড় একটা কারণ ছিল তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর চেষ্ঠা করেছিল। কিন্তু তখন তারা পারেনি। এরপর খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার জন্য চেষ্টা করেছে।’

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তে জিয়াউর রহমানের নাম ছিল। তিনি এই হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু যখন এই তদন্ত হয় তার ১৫ বছর আগেই মৃত্যু হয়। মৃতকে মামলায় অভিযুক্ত করা যায় না।’

আনিসুল হক বলেন, ‘এই বিচার হওয়ার ২১ বছর আগে এই হত্যা হয়েছিল। ২১ বছর পরে অনেক কিছু তদন্তে আসেনি। যদি ২১ বছর আগে মামলা হতো, বিচার অনুষ্ঠিত হতো তাহলে এই মামলায় অনেক কিছু বেরিয়ে আসত।’

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘যিনি হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট দিয়ে গেছেন কিন্তু অনেক বিচারপতি তার হত্যার বিচার করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এটা আমাদের জন্য লজ্জার।’

‘কোনো একক নেতৃত্বে স্বাধীনতা আসেনি’- এমন কথা বলার চেষ্টা হচ্ছে মন্তব্য করে আইমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের এমন একজন নেতাকে দেখান যিনি ১৩ বছরের অধিক সময় বাঙালি জাতির জন্য কারাবরণ করেছেন। বঙ্গবন্ধু হওয়ার আগে তিনি আমাদেরকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। বাঙালি বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারবে, বঙ্গবন্ধু সেই ভাষা আমাদেরকে দিয়ে গেছেন। গণতন্ত্র দিয়ে গেছেন।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা দল ছিল কিন্তু ৭০ এর নির্বাচনে বাংলাদেশ মানুষ ভোট দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকে। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু থাকবে।’

সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সিনিয়র সচিব শহীদুল হক, অতিরিক্ত সচিব নাসরিন বেগম, ইসরাইল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ও নিবন্ধন পরিদপ্তরের মহাপরিচালক খান মো. আবদুল মান্নান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

(ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/এমএবি/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :