বন্যার প্রভাবে দুর্দশায় পরিবহন শ্রমিক

কাজী রফিকুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০১৭, ০৯:৪৩ | প্রকাশিত : ১৮ আগস্ট ২০১৭, ০৮:১৮

উজানের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী গাড়ির যাতায়াতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। অলস সময় কাটাচ্ছেন গাবতলী ও কল্যাণপুরের উত্তরবঙ্গের বাস কাউন্টারের লোকেরা। বিপাকে পড়েছেন বাস মালিক, এই রুটের পরিবহন শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টরা।

টানা কয়েক দিনের বন্যায় বিপর্যস্ত দেশের উত্তরাঞ্চল। উজানের পানিতে বন্যা প্লাবিত কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, গাইবান্ধাসহ উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ জেলা। ব্যাপক ক্ষতির স্বীকার হয়েছে এসব এলাকার রাস্তাঘাট। যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বেশ কিছু জেলা ও উপজেলা। এর পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের ওপর।

এতে করে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবহন শ্রমিকরা কার্যত বেকার হয়ে পড়েছেন। তাদের আয় নির্ভর করে বাস চলার ওপর। বাস চলছে না, তাই কোনো আয় নেই। সঞ্চয় ভেঙে বা ধার দেনা করতে চলতে হচ্ছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা ঈদের আগে যেখানে স্বজনদের মুখে হাসি ফোটানোর পরিকল্পনা করেন, সেখানে তাদের মাথায় ঋণ পরিশোধের চিন্তা।

জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় উত্তরবঙ্গের বন্যায় কবলিত এ জেলা গুলো থেকে ছয় শতাধিক যাত্রীবাহী ডে-নৈশ কোচ ও পণ্যবাহী ট্রাক মালামাল নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ফেরত আসে একই হিসাবে। হঠাৎ এ বন্যার কারণে তা নেমে এসেছে চার ভাগেরও কমে।

কেবল মাত্র হানিফ ও শ্যামলী পরিবহনের দুটি করে বাস ছেড়ে যাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে গাবতলী বাস টার্মিনাল সূত্র। অন্যান্য পরিবহন কোম্পানির একটি বাসও ছেড়ে যায়নি গত কয়েকদিন। ফলে, বেকার হয়ে পড়েছেন বাস সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ও কর্মচারীরা।

কথা হয় গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার বিশ্বরোড সংলগ্ন ধাপেরহাট শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার সুজনের সাথে।

তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, বন্যার আগে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টায় আমরা ১২টি গাড়ির টিকিট বিক্রি করতাম। কিন্তু বর্তমানে ২৪ ঘণ্টায় ৪ থেকে ৫টি গাড়ির টিকিট বিক্রি করতে পারছি। তাও আবার যাত্রী কম।

তিনি বলেন, বন্যার কারণে কুড়ি গ্রাম জেলার ভুরুঙ্গমারী, লালমনির হাট, উলিপুর থেকে গত তিনদিন যাবৎ কোনো গাড়ি ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না ঢাকার উদ্দেশ্যে। তার ওপর মহাসড়ক ভেঙে খানাখন্দে ভরে গেছে। যেখানে রংপুর থেকে ঢাকায় যেতে সচারচর সময় লাগত ৬/৭ ঘণ্টা, এখন সেখানে ঢাকায় যেতে সময় লাগছে ১০/১২ ঘণ্টা। ফলে গাড়িগুলো সময়ের হিসাব মেলাতে পারছে না।

একইভাবে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর কাশিয়া বাড়ী গ্রামের খাজা মিয়া বলেন, তিনি ঢাকায় রিকশা চালিয়ে বাড়িতে সংসারের খরচ দেন। ক’দিন আগে বাড়িতে এসে ঢাকায় যেতে পারছেন না।

তিনি বলেন, ‘বন্যার কারণে পরিবার পরিজনসহ গবাদি পশু নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে এখন আমরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছি। এসব ফেলে কেমনে ঢাকায় যাই।’

গাইবান্ধার ঐতিহ্যবাহী কাঁচা মালের হাট ধাপেরহাট বন্দরের ট্রাক চালক আনারুলও তাদের দুর্দশার কথা জানান ঢাকাটাইমসকে।

আনারুল বলেন, আমরা প্রতিদিন এই হাট থেকে ১০/১২টি ট্রাক কাঁচা মাল বোঝাই করে রাজধানী যেতাম। কিন্তু বন্যার কারণে বাজারে কাঁচা মাল একেবারেই কম। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সারা দিনে তিন ট্রাক মালও কিনতে পারেনি কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা। এ হাট থেকে আজ মাত্র ৩টি ট্রাক কাঁচামাল নিয়ে ঢাকায় যাবে। আর আমরা বাকি ট্রাকের চালক ও হেলপাররা বসে থাকব।

জেলা শহরের কাউন্টার গুলোর আশে পাশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন চা বিস্কুটের দোকান। যাত্রী না থাকায় বেচে কেনা বন্ধ হয়ে দোকানদারদের অবস্থাও খারাপ। অনেক দোকান খুলছেই না। বন্যার পানি কমার আগ পর্যন্ত এমন অচল অবস্থা বিরাজ করবে বলে অনেক কাউন্টার মাস্টার ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক কর্মচারীরা বলেছেন।

অন্যদিকে গাবতলী টার্মিনালের উত্তরবঙ্গ রুটের কর্মচারী মইনুল আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পাঁচ/ছয় দিন ধইরা বসা। টার্মিনালে বইসা থাকলে লাভ হইবো! যাত্রী নাই, গাড়িও ছাড়ে না। আমরাও বসা। সিজন হইলেও অন্য রুটে কাজ করতে পারতাম। এহন তো সিজনও না।’

বাস টার্মিনালটি ঘুরে উত্তরবঙ্গমুখী কাউন্টারগুলোতে কোনো যাত্রী দেখা যায়নি। এর প্রভাব পড়েছে, বাস টার্মিনালকে ঘিরে গড়ে ওঠা খাবারের দোকানগুলোতেও। নেই ক্রেতা সমাগম।

একটি দোকানের বিক্রেতা বলেন, ‘বন্যার লাইগ্যা গাড়ি যাইতে পারে না। মানুষ যাইব কেমনে? আর যাত্রী নাই মানে আমাগোও আয়-ইনকাম নাই।

বন্যা পানি কমার আগ পর্যন্ত এমন অচল অবস্থা বিরাজ করবে। এছাড়া ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের সংখ্যা কমতে পারে। এমন ধারণা গাবতলী বাস টার্মিনালের পরিবহন সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া অন্য সময় ঈদের মৌসুমে যে বাড়তি কামাই হতো, এবার সেটাও দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ি প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম

ঢাকাটাইমস/১৮আগস্ট/কারই/কেএস/ইএস/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :