ঘুরে দাঁড়ানোর যুদ্ধ চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে

প্রকাশ | ১৯ আগস্ট ২০১৭, ০৮:২১

চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান, ঢাকাটাইমস

দফায় দফায় জলাবদ্ধতা, এরপর অগ্নিকাণ্ড। এ দুইয়ে পথে বসেছেন চট্টগ্রামের বাণিজ্যকেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। তবুও সব ভুলে আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর যুদ্ধে নেমেছেন তাঁরা।

ব্যবসায়ীদের মতে, ঈদুল আজহাকে ঘিরে দ্রুত চাঙা হয়ে উঠছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, আদা-হলুদ, রসুন, পেঁয়াজসহ মসলার বাজার সরগরম হয়ে উঠছে। যদিও অনেক ব্যবসায়ীর মাথার উপর ছাউনিটুকুও নেই।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত ৬ আগস্ট দিনগত রাতে বৈদ্যুতিক শট সার্কিটের আগুনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। এই বৈদ্যুতিক শট সার্কিটে আগুনের কারণ জলাবদ্ধতা বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস।

চাক্তাই লামাবাজার ফায়ার স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা আবদুল মান্নান ঢাকাটাইমসকে জানান, গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে অতি বৃষ্টি ও জোয়ারে দুই দফায় ১৪-১৫ দিন ডুবে ছিল চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের তিন হাজারেরও বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পানিতে ভিজে পণ্যের সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বৈদ্যুতিক লাইনও। ফলে পানি কমার পর ঘটে অগ্নিকাণ্ড।

ফায়ার সার্ভিসের হিসাব মতে, অগ্নিকাণ্ডে নতুন চাক্তাইয়ে নগদ টাকা, চালের দোকান, চালের আড়ত, চালকল, মশলার আড়তসহ ১৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে শতকোটি টাকার ক্ষতি হয়। এর আগে দুই দফা জলাবদ্ধতায় ৫০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির শিকার হন ব্যবসায়ীরা। এরপরও আসন্ন ঈদুল আজহাকে ঘিরে ঘুড়ে দাড়াতে লড়াই করছে ব্যবসায়ীরা।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক সৈয়দ সগীর আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে সাড়ে পাঁচ হাজার দোকান রয়েছে। এরমধ্যে দুই দফা জলাবদ্ধতায় তিন হাজার দোকান ডুবেছে। এরপর অগ্নিকাণ্ড। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হলেও থেমে নেই ব্যবসায়ীরা। ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে তারা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর যুদ্ধ শুরু করেছে। আশা করি অচিরেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন ব্যবসায়ীরা।

গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, জলাবদ্ধতায় নষ্ট পণ্য সরিয়ে নতুন পণ্য তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। আবার কেউ কেউ নষ্ট পণ্য শুকিয়ে ভোগের উপযোগী করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আর অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দোকান ও কারখানাগুলো গড়ে তোলার কাজ করছেন। ব্যবসায়ীদের অনেকের মাথার উপর ছাউনি না থাকলেও তারা চাল-ডাল, পেঁয়াজ, আদা-রসুন, হলুদ, ভোজ্যতেলসহ মশলা উপকরণ এনে ব্যবসা শুরু করেছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত চালের আড়ত হারুন ব্রাদার্স এর স্বত্বাধিকারী মো. হারুন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঈদুল আজহা হলো ব্যবসায়ীদের আয়-রোজগারের একটা বড় মৌসুম। এই মৌসুম হাতছাড়া করা মানে বছরের অনেক বড় একটা সুযোগ হাতছাড়া করা। চালের বাজার চাঙা থাকায় লাভও ভালো। তাই ঈদের আগেই আবার নতুন করে আড়তকে দাঁড় করানোর জন্য লড়াই করছি।’

হাজী বি. জামান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জহিরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নগদ টাকা থেকে শুরু করে আমার সবই পুড়ে গেছে। ঈদুল আজহা সামনে চলে আসায় ঋণ নিয়ে আবার ব্যবসা শুরু করেছি। তবে জায়গার মালিক নতুন দোকান তুলতে টালবাহানা করছে। তাই নিজেই দোকান তুলছি।’

পণ্য বেচাবিক্রির ধুম পড়েছে মধ্যম চাকতাইয়ের মশলার দোকানগুলোতে। দেশের নানা অঞ্চলের খুচরা ব্যবসায়ীরা ঈদুল আজহার প্রয়োজনীয় মশলা কিনে নিতে এসব দোকানে ভিড় করছে। নানা জাতের গরম মসলা যেমন জিরা, দারচিনি, লবঙ্গ, এলাচি ইত্যাদি দেদারসে বিক্রি হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো গরম মসলারই দাম বাড়েনি; বরং কিছু ক্ষেত্রে কমেছে। তাই আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গরম মসলার দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।

বর্তমানে খাতুনগঞ্জে ক্রেতা-বিক্রেতা সবার মধ্যে ঘুরে-ফিরে একটা কথা বারবার আসছে, তা হলো পেঁয়াজ ও চাল। চালের দাম অনেক আগে বাড়লেও পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে ৬০ টাকায় উঠে। তবে এখন কমে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদনকারী ও দেশে বন্যাকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজ ও চালের বাজারের এ অবস্থা সহজে কাটবে না বলে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা।

ঢাকাটাইমস/১৯আগস্ট/আইকে/জেবি