নাতি ববির বর্ণনায় বঙ্গবন্ধু হত্যাপরবর্তী অবস্থা

প্রকাশ | ১৯ আগস্ট ২০১৭, ২০:৪৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি, শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি বঙ্গবন্ধু হত্যাপরবর্তী অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন এক আলোচনায়। তিনি জানিয়েছেন কীভাবে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা দম্ভ করে বেড়াতেন এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হিসেবে তারা কতটা কুণ্ঠিত ছিলেন।  

শনিবার ধানমন্ডির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে এক অনুষ্ঠানে ববি এসব কথা বলেন। ‘বঙ্গবন্ধু মার্ডার কেস: জার্নি, অ্যাকমপ্লিসমেন্ট অ্যান্ড রিমেইনিং চ্যালেঞ্জ’ (বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা: ধারাবাহিকতা, অর্জন ও প্রতিবন্ধকতা) শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর নাতি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আরও বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক সচিব এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকি,  জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, দৈনিক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়, সরকারদলীয় সাংসদ ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত শ্রোতাদের প্রশ্ন নেয়া হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আইন পেশাসহ বিভিন্ন পেশার কয়েকশ লোক উপস্থিত ছিলেন।  

রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আপনাদের অনেক ধন্যবাদ এ অনুষ্ঠানে আসার জন্য। আমার নানাকে (বঙ্গবন্ধু) নিয়ে আলোচনা করার জন্য। আমি আপনাদের কাছে নানা সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি।’

ববি বলেন, ‘১৫ আগস্ট নিয়ে আমাদের পরিবারে কোনো লুকোচুরি ছিল না। আমাদের ছোটবেলা থেকেই জানানো হয়েছে। আমার মা আর খালা (শেখ হাসিনা ও রেহানা) আমাদের এ বিষয় জানিয়েছেন। আমরা জেনেছি কীভাবে আমার নানাকে খুন করা হয়েছে। আর কীভাবে এর বিচার না করে খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। ইনডেমিনিটি (দায়মুক্তি) সম্পর্কে অনেকেই জানতো না, শুধু আমরা জানতাম, আমরাই বলতাম। কিন্তু আজ অনেকেই বলছে; তরুণরা বলছে, জানছে।’

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরের পরিস্থিতির স্মৃতিচারণ করে ববি বলেন, ‘আমরা যখন ১৯৮৬ সালে দেশে আসি তখন রাজধানীর বনানীর একটি স্কুলে আমাকে ভর্তি করা হয়। কিছুদিন পর মা বলেন তোমাকে অন্য স্কুলে ভর্তি করা হবে। আমি এখানে নতুন বন্ধু পেয়েছিলাম। আমি মাকে বললাম কেন মা? মা বললেন এখানে তোমার নানার খুনিদের সন্তানেরা পড়ে। তারা প্রতিদিন এখানে আসে। তাদের সঙ্গে প্রতিদিন দেখা করতে হবে, এটা হয় না।’

বঙ্গবন্ধুর নাতি জানান, তখন তারা এখানে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও ছিলেন চিন্তিত। তিনি তার মা শেখ রেহানাকে প্রশ্ন করেন, জাতির জনকের খুনিরা কীভাব প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। তবে তখন এর কোনো উত্তর ছিল না তার মায়ের কাছেও।

ববি বলেন, ‘আজ আপনারা আলোচনায় যা বললেন তখন ছোট ছিলাম তাই এসব বুঝতাম না। কীভাবে খুনিদের প্রটেক্ট করা হয়েছে তা বুঝতাম না। এরপর আমাদের পাঠিয়ে দেয়া হয় বিদেশে। আপনারা জানেন আমার মা, খালা তারা নিজের জীবন নিয়ে কখনো চিন্তা করেন না, তবে সন্তানের কথা তারা চিন্তা করেন। এজন্য তারা আমাদেরকে পাঠিয়ে দেন বিদেশে।’

স্মৃতিচারণ করে ববি বলেন, ‘১৯৯৩ সালে আমরা আবার দেশে ফিরে আসি। তখন একটু বড় হয়েছি। তখন আমার বয়স ১২-১৩। স্কুলে গেলে আমার সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করি তোমরা কীভাবে একজন  খুনিকে (জিয়াউর রহমান) নেতা হিসেবে মানো।’ এসময় বঙ্গবন্ধুর নাতির কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে।

রেদওয়ান মুজিব বলেন, ‘আমি আজ বক্তব্য দিতে চাইছিলাম না। যে স্থানে আমার নানাকে হত্যা করা হয়েছে সেখানেই তাঁর সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছে। এমনিতেই আগস্ট মাস আমাদের পরিবারের জন্য শোকের মাস।’

যারা বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পেয়েছেন তাদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান ববি।

(ঢাকাটাইমস/১৯আগস্ট/জেআর/জেবি)