ট্রেনের এসি টিকিট না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ
উত্তরবঙ্গের একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট নিতে এসেছেন ইমরুল কবির। শনিবার দুপুর ১২টা থেকেই তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছেন এসি টিকিট পাওয়ার আশায়। কিন্তু তার আশায় গুঁড়ে বালি। তিনি কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছার আগেই এসি টিকিট শেষ। ক্ষোভের সঙ্গে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘কালকে শুরুতে আমরা ২০ জন ছিলাম, পরে বিকালের দিকে আরও লোকজন আসতে থাকে। রাতেই সে লাইন স্টেশন ছাড়িয়ে যায়। সামনে ছিলাম এসি টিকিট পাওয়ার আশায়, কিন্তু আসার আগেই শেষ হয়ে গেছে।’
রাজশাহীর সিল্ক সিটির এসি টিকিট না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আসিফ ইকবাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি এবং আমার ভাই গতকাল দুপুর থেকে এই স্টেশনেই ছিলাম। আমি ১৫ নম্বর সিরিয়ালে ছিলাম, কিন্তু কোনো এসির টিকিট পাইনি। এই ঈদের আগে এসির টিকিট যায় কোথায়?’
কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের টিকিট নিতে রাত ১২টায় এসেছেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র ইকবাল। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার পরীক্ষা আছে, তাই আগে যেতে পারব না। এজন্য আগেই ট্রেনের টিকিট নিতে এলাম। টিকিট পেলাম, এখন নিশ্চিন্তে বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে পারব।’
২৯ আগস্টের টিকিট পেতে গতকাল বিকাল থেকেই শুরু হয় লাইন। সাড়া রাত জেগে অপেক্ষা করেছেন টিকিট প্রত্যাশীরা। এজন্য তাদের চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেয়ে স্বস্তির হাসি। আবার চাহিদামাফিক টিকিট না পাওয়ায় অনেকের চেহারায় হতাশার ছাপ।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষদের জন্য ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির তৃতীয় দিনে টিকিটপ্রত্যাশীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে কমলাপুর রেলস্টেশনে। যথারীতি রবিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় অগ্রিম টিকিট বিক্রির কার্যক্রম। ২৩টি কাউন্টার থেকে একযোগে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। আজ দেয়া হচ্ছে ২৯ আগস্টের টিকিট।
ঈদুল আজহার সরকারি ছুটি শুরু হবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে। আগের দিন বৃহস্পতিবার হওয়ায় সেদিনের টিকিটের চাহিদাই থাকবে সবচেয়ে বেশি- এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রবিবার ৩১টি আন্তঃনগর ট্রেনের বিভিন্ন গন্তব্যের ২২ হাজার ৪৯৬টি টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। ৩৫ ভাগ কোটার জন্য রেখে বাকি টিকেট কাউন্টার থেকে পাচ্ছেন যাত্রীরা। এছাড়া ঈদের বিশেষ ট্রেনের দুই হাজার ৬০৬টি টিকেটও কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হচ্ছে।
রবিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে স্টেশনে আসেন রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন। স্টেশনে টিকিট বিক্রি কার্যক্রম ঘুরে দেখেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইনগুলো ঈদের আগেই মেরামতের চেষ্টা করছেন তারা।
আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় বন্যার কারণে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা গতকাল কয়েকটি জায়গায় গিয়েছিলাম, আমরা ঈদের আগে ঢাকা থেকে দিনাজপুর ট্রেন চলাচলের স্বাভাবিক করতে পারব। এছাড়া ঢাকা দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত ট্রেনের যোগাযোগ স্বাভাবিক করতে পারব।’
এসি টিকিট না পাওয়া নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসি টিকিট কম এবং বিভিন্ন স্টেশনের কোটা থাকায় সবাইকে টিকিট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
মহাপরিচালক বলেন, ‘ধরেন কেউ কুষ্টিয়া যাবে সেখানে এসি টিকিট আছে। আবার ভেড়ামাড়া যেতে চাইলে দেখা গেল সেখানকার কোটা শেষ হয়ে গেছে। এই অবস্থার কারণে এসি টিকিট সবাই পায় না। আসলে টিকিট নিয়ে কোনো জালিয়াতি হওয়ার সুযোগ নেই।’
কথা হয় রেলওয়ের ম্যানেজার সিতাংশুর সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যাত্রীরা সুশৃঙ্খলিতভাবে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটতে পারছেন। ট্রেনযাত্রায় যাত্রীদের যেন কোনো সমস্যা না হয় পাশাপাশি নিরাপত্তাব্যবস্থা ঠিক রাখতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।’
সিতাংশু বলেন, ‘আমাদের সম্পদ সীমিত এর মধ্যেই ট্রেনে যাত্রায় যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। ট্রেনে যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দবোধ করার কারণে স্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশীদের সংখ্যা বাড়ছে। টিকিটপ্রত্যাশী মানুষেরা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের টিকিট কিনতে পারছেন।’
ম্যানেজার জানান, কমলাপুর থেকে প্রতিদিন ৩১টি ট্রেনের ২২ হাজার ৪৯৬টি টিকিট বিক্রি করা হবে। এর সঙ্গে আজ আরও ২৬শ টিকিট যোগ হয়েছে স্পেশাল ট্রেনগুলোর। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ অনলাইন, ৫ শতাংশ ভিআইপি, ৫ শতাংশ রেলওয়ে কর্মকর্মতা-কর্মচারীর জন্য বরাদ্দ। বাকি ৬৫ শতাংশ টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি হচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস/২০আগস্ট/জিএম/জেবি)