রহস্যময় চরিত্র খুব বেশি টানে: দিবা

প্রকাশ | ২০ আগস্ট ২০১৭, ১৭:৫২ | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০১৭, ১৭:৫৪

শেখ সাইফ, ঢাকাটাইমস

ফাহমিদা দিবা। একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে একজন গুণী শিল্পী হিসেবে মিডিয়াতে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। ছোটবেলা থেকেই নাচ, গান ও অভিনয় নিয়েই আছেন। আঁকাআঁকিও করেন। পেয়েছেন অনেকগুলো পুরস্কার। তার মিডিয়া ভুবনে সামনের দিনের পথচলা নিয়ে কথা বলেন ঢাকাটাইমসের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেখ সাইফ

মিডিয়ায় আপনার যাত্রা কবে থেকে?

আমি ছোটবেলা থেকে গান এবং নাচ শিখতাম। এক সময় বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে একটি প্রতিযোগিতায় নাচে আমি প্রথম স্থান অধিকার করি। তারপর বিটিভি, চ্যানেল আই যে শিশুভিত্তিক নাচ-গানের অনুষ্ঠান হতো সেখানে অংশগ্রহণ করতাম। এইভাবে আমি মিডিয়া অঙ্গনে পা রাখি। এরপর আমি উপস্থাপনাও করেছি কিছু। বিশেষ করে কোনো অনুষ্ঠান হলে আমি সে সব জায়গায় উপস্থাপনা করছি। যেমন স্টেজ শো, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি। এটি ঢাকার বাইরে এবং ভেতরে যেখানেই হোক আমি সেগুলো করেছি এবং এখনো করছি।

এক সময় আমার পড়াশোনার জন্য সেভাবে আর নিয়মিত কাজ করতে পারিনি। এক কথায় স্টপ করে দিয়েছিলাম বলা চলে। তবে নাচ আর গানের প্র্যাকটিসটা কখনো বন্ধ রাখিনি। এখন পড়াশোনার চাপ কিছুটা কম। তাই আবার কাজ করতে চাই। এক সময় আমি থিয়েটারে যোগ দেই। তারপর ধীরে ধীরে নাটক, টিভিসিতে টুকটাক কাজ করতে শুরু করি। আর এখন নাচ-গানের থেকে একটু বেশি ঝুঁকে পড়েছি অভিনয় এবং মডেলিংয়ের দিকে। সামনে কিছু সিরিয়ালের কাজ করার ইচ্ছা। কিন্তু পড়াশোনার চাপের জন্য আপাতত বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

টেলিভিশনে আপনার কাজ সম্পর্কে একটু জানতে চাই।  

আমি এটিএন বাংলাতে ক্রাইম পেট্রোলে কাজ করেছি। এনটিভিতে ড্রাগস নামে একটি প্রোগ্রামে কাজ করেছি। মাই টিভিতে ‘ভালোবাসার এক অংশ’ নামে একটা প্রোগামে কাজ করেছি। সামনে আরও কিছু কাজ সম্প্রচার হওয়ার কথা যেগুলো আমি করেছি। এরপর টিভিসিতে কাজ করেছি বেশ কয়েকটিতে। তারমধ্যে প্রথম কাজ করেছি মেন্টোসে। যেটা অমিতাভ রেজা ভাইয়ের প্রোডাকশন থেকে। তারপর ‘অদম্য বাংলাদেশ’ এ কাজ করেছি। প্রাণের টিভিসিতে কাজ করেছি। গ্রামীণফোনের টিভিসিতে কাজ করেছি। এভাবে ছোট ছোট অনেকগুলো টিভিসিতে কাজ করেছি। তবে পড়াশোনার জন্য কোনো কিছুই নিয়মিত করতে পারছি না। এখন পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে ব্যটে বলে মিলে গেলে কাজ করছি টুকটাক। এছাড়া এখন ফটোশ্যুটে বেশি কাজ করছি। কারণ এটাতে তেমন সময় ব্যয় করতে হয় না।

মিডিয়াতে আসার পেছনে কার অনুপ্রেরণা ছিল?

মূলত পরিবারের সাপোর্টের কারণেই আমি মিডিয়াতে পা রেখেছি। আমার বাবা আমার গান করাটাকে খুব পছন্দ করেন। আর মা আমার নাচকে পছন্দ করেন। বাবা-মা একটি জিনিস আমার কাছে প্রত্যাশা করে সেটা হলো পড়াশোনার পাশাপাশি যেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও ভালোমত প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আমার পরিবারের সাপোর্টের কারণেই মিডিয়া অঙ্গনে কাজ করতে আমি বেশি উৎসাহ পাই। 

অভিনয়ের ক্ষেত্রে কোন ধরনের চরিত্র আপনার বেশি ভালো লাগে?

আমার কাছে রহস্যমূলক চরিত্র খুব বেশি টানে। অভিনয়ের উপস্থিতি আমার কাছে বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হচ্ছে যতটুকু পর্দায় থাকবো সেটা যেন শক্তিশালী চরিত্রে উপস্থাপিত হয়। সেটাই যেন রহস্যের আভাস থাকে। চ্যালেঞ্জমূলক দৃশ্যে, ঝুকিপূর্ণ দৃশ্যে কাজ করতে ইচ্ছা করে খুব।

মিডিয়াতে কি নিয়মিত কাজ করার ইচ্ছা নাকি কিছুদিন পর ছেড়ে দেবেন?

সবাই পড়াশোনার পাশাপাশি জব খোঁজে। আমার ইচ্ছা পড়াশোনার পাশাপাশি অভিনয় করা। আমার পার্ট টাইম জব বলেন আর ফুল টাইম জব বলেন সেটা আমার কাছে মিডিয়া। আমি মিডিয়াকে ঘিরেই থাকতে চাই।

চলচ্চিত্রে কাজ করার ইচ্ছা আছে কি?

এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ইচ্ছা জাগেনি। তবে ভবিষ্যতে যদি ভালো কাজ করতে করতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারি। সে সময় ভেবে দেখব। আর চলচ্চিত্রের কিছু চরিত্র আমাকে খুব টানে। বাস্তবমুখী যেসব চরিত্র যেমন ‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার’ এই ধরনের কোনো সিনেমা যদি হয় আর অফার পাই তাহলে সিনেমায় অভিনয় অবশ্যই করবো।

নারী শিল্পীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় বিয়ের পর অনেকে আর কাজ করতে পারে না। সেক্ষেত্রে আপনি কী করবেন?

ক্যারিয়ার এবং ফ্যামিলি দুটা দুই ধরনের। পরিবার এবং কর্মস্থল দুইটা যদি দ্বিমুখী হয় তখন যেকোনো একটি বেছে নেয়া ভালো। আমার পরিবার যেহেতু মেনে নিয়েছে। তারা চায় আমি কাজ করি। সেদিক দিয়ে বিবাহিত জীবনে ফ্যামিলির সাথে আলোচনা করেই পথচলা উচিত বলে আমার মনে হয়। তবে সবার অনিচ্ছা থাকলে নিজে একা চ্যালেঞ্জ নিয়ে সামনে অগ্রসর হতে গেলে তার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। আর আমাদের দেশে সেটা সম্ভব নয়।

নতুন অনেকেই মিডিয়াতে এসে কিছুদিন পর হারিয়ে যায়। নতুন হিসেবে আপনি এটা কিভাবে দেখেন?

আমি নিজেকে একজন শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। দুদিন আসলাম কাজ করলাম। লাফঝাঁপ মারলাম। টেলিভিশনে দেখালো তারপর আর আমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেটা আমি কখনই করবো না। যদি দশজনের মধ্যে পাঁচজনও বলে মেয়েটা গুণী। মেয়েটি ভালো কাজ করে। তবে অবশ্যই আমি কাজ করে যাব। আমার ফেমাস হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। যদি কাজ পারি তাহলে কর্মই আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে দীর্ঘদিন। নতুন যারা আসে তাঁদের টেন্ডেন্সিটা হচ্ছে দুদিনেই আমাকে সবাই জানবে চিনবে। আমি সুপার স্টার। এটা আমি কখনই প্রত্যাশা করি না।  আমাদের মিডিয়াতে এখন দেখা যায় যে অনেকেই নতুন আসছে তাদের থিয়েটার ব্যাক গ্রাউন্ড নেই। ভালোমত কথা বলতে পারে না। শুদ্ধ উচ্চারণ জানে না। দেখতে ভালো। উচ্চতা আছে। কাজে নিয়ে নিচ্ছে। দুদিন পর তাঁদের অনেকের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এর পেছনের আরও বড় কারণ সে তার ভুল বা দোষগুলো ওভারকাম করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পরে নিজেই মিডিয়া থেকে দূরে সরে যায়। ফ্যামিলিও সাপোর্ট করে না দীর্ঘ সময় ধরে সেটাও একটা কারণ। আমি একটি কথা বলতে চাই কেউ যদি সত্যি মিডিয়াকে ভালোবাসে সে যেন লেগে থাকে। আর শিখে এসে কাজ করা উচিত। না হলে ঝরে পড়তে বাধ্য। শুধু মিডিয়া নয় যেকোনো ক্ষেত্রেই যদি দক্ষ না হওয়া যায়। কাজ ভালো জানা না থাকে তাকে কেউ রাখবে না। তবে কঠোর পরিশ্রম করলে সাধনা করলে সে পারবে। আগে শিখেনি তাই বলে যে পারবে না এমন নয়। শিখতে শিখতে জানতে জানতে সেও একদিন ভালো জায়গায় পৌঁছাতে পারবে। দরকার সাধনা পরিশ্রম এবং ধৈর্য।

প্রফেশন হিসেবে মিডিয়াকে কিভাবে দেখেন?

এটা পরিশ্রমের জায়গা। এখানে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে ঠিকে থাকতে হয়। যদি সেইভাবে কাজ করা হয়। তাহলে এটা অনেক ভালো জায়গা। তবে যদি কেউ রাতারাতি স্টার হতে চায় তাঁর জন্য মোটেই সুখকর হবে না। অনেকে হয়তো বলতে পারেন যারা থিয়েটার করে আসেনি বা শিখ আসেনি তারাও ভালো করছে। এক্ষেত্রে হয় কি তারা অভিনয়টা ভেতরে ধারণ করতে পারে সহজে। তারা টিকে যায়। এটা গড গিফটের একটা ব্যাপার বলতে পারি। তবে না শিখে এসেও কাজ করতে করতে নিজেকে গড়তে গড়তে এক সময় অদক্ষরাও দক্ষ হয়ে ওঠে।

আপনার বেড়ে ওঠা বা ছোটবেলা সম্পর্কে জানতে চাই

আমি খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম না। তবে কীভাবে যেন ক্লাস ফাইভে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে গেলাম। তারপর হাইস্কুলে যখন পড়ি সেখানেও ক্লাস এইটে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাই। আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে যখন ভর্তি হয় সেখানে খুব কম্পিটিশন হয়। এক হাজার জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আমি প্রথম স্থান অধিকার করি। তো সেখান থেকে আমার আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। পরিবারের প্রত্যাশাও বেড়ে যায় আমার ওপর। তবে নবম শ্রেণিতে এসে আমি ঝরে যাই। উঠতি বয়স, একটু উড়ুউড়ু মন হয়ে যাওয়ার কারণে আমার প্রথম স্থান ধরে রাখতে পারিনি। তবে দশম শ্রেণিতে আবার প্রথম স্থান অধিকার করি। এসময় লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি নাচ গান নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিতাম। আমি বিতর্ক প্রতিযোগিতাও অংশগ্রহণ করাতাম। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেছি। আমার এসএসসি ও এইচএসসি দুটাতেই জিপিএ গোল্ডেন। এখন আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বোটানিতে প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারে পড়াশোনা করছি।

আমার বাড়ি মুন্সীগঞ্জ। আমার বাবা শেখ সাহাবুদ্দিন। মা মাসুদা ইয়াসমিন রুবি। চার বোন এক ভাই। আমি সবার ছোট। মজার কথা হলো আমার মতো দেখতে আর একজন আছে। মানে আমরা জমজ বোন। দুজন একই ক্লাসে পড়ি। তবে ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আমাদের বয়সের ব্যবধান সাত মিনিটের। আমার জন্মের সাত মিনিট পর আমার জমজ বোনের জন্ম হয়। আমার নাম দিবা ওর নাম নিশি। সেও মিডিয়াতে আছে। আমি ফাহমিদা দিবা আর ও ফারজানা নিশি। আমি নাচ গানের পাশাপাশি আর্ট করতাম। পেইন্টিংস এ অনেক পুরস্কার পেয়েছি। নাচের জন্য ক্লাস সিক্সে থাকাকালীন প্রথম প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে। সেখানে প্রথন স্থান অধিকার করি। আমি জেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করি। তবে বিভাগীয় পর্যায়ে আমি আর আবেদন করিনি কারণ আমি ছোট ছিলাম। পরিবার আর চাইনি তাই আর অংশগ্রহণ করা হয়নি। অষ্টম শেণিতে পড়াকালীন জেলা পর্যায়ে একটা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। সেখানে আমি তৃতীয় স্থান অধিকার করি। তারপর আমার আর সেইভাবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা হয়নি।

পড়াশোনা শেষ করে মিডিয়ার পাশাপাশি আর কিছু করার ইচ্ছা আছে কি?  

হুম। পড়াশোনা শেষ করে যদি সম্ভব হয় আমি একজন প্রভাষক হতে চাই। বা প্রতিষ্ঠিত কোনো প্রতিষ্ঠানে জব করা। সরকারি জবের প্রতি আমার তেমন আগ্রহ নেই। আমি প্রাইভেট জবকেই বেশি পছন্দ করি।   

(ঢাকাটাইমস/২০আগস্ট/এসএস/জেবি)