দিনভর অবরুদ্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য

মাহফুজ কিশোর, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ আগস্ট ২০১৭, ২০:৪৭ | প্রকাশিত : ২০ আগস্ট ২০১৭, ১৯:১৩

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) এক শিক্ষককে বাধ্যতামূলকভাবে কর্তৃপক্ষের দেয়া এক মাসের ছুটির প্রতিবাদে এবং তা প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে দিনভর অবরুদ্ধ করে রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। রবিবার বেলা ১১টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আশরাফ নিজ কার্যালয়ে যেতে চাইলে প্রশাসনিক ভবনের করিডোরে তার পথরোধ করেন তাঁরা।

এসময় উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে শিক্ষক সমিতির নেতাদের তুমুল বাকবিতণ্ডা ও ধাক্কা-ধাক্কি হয়। ‘কিসের ভিত্তিতে শিক্ষক মাহবুবকে ছুটি দেয়া হলো? ‘উপাচার্য স্বেচ্ছাচারিতা করে শুধু ছাত্রলীগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অন্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন’ ইত্যাদি অভিযোগে উপাচার্যকে দিনভর করিডোরে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের (আইনুল-জিয়া প্যানেল) নেতারা।

অবরুদ্ধ অবস্থায় উপাচার্য বলেন, ‘আমাকে ইতোপূর্বে গাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে। এখন আমি করিডোরে অবরুদ্ধ। করিডোরে কোনো সমাধান হয় না। যে ছুটি দেয়া হয়েছে এটা কোনো শাস্তি নয়। এর তদন্তের জন্য কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এসময় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে ছুটি দেয়ার আগে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ কেন দেয়া হয়নি জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি তখন উত্তাল ছিল। ছাত্রলীগের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইদিন ধরে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এই অবস্থায় মাহবুবকে ডেকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করা সম্ভব ছিল না। সেটা করার জন্যই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।’

এসময় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি (আইনুল-জিয়া প্যানেল) মোহাম্মদ আইনুল হক উপাচার্যকে বলেন, ‘আপনি এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারকে শিক্ষক মাহবুবুল হকের ছুটি প্রত্যাহারের মৌখিক নির্দেশ দিয়ে যাবেন।’ উত্তরে উপাচার্য বলেন, ‘এভাবে করিডোরে দাঁড়িয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আমার একার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়।’

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষক সমিতির পূর্বনির্ধারিত সাধারণও সভা স্থগিত করা হয়। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান জানান, ‘শিক্ষক মাহবুবুল হকের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ না করে তাকে ছুটিতে পাঠানো এটি উপচার্যের একক ও স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত। এছাড়াও তিনি যে তদন্ত কমিটি করেছেন তাতে সময় নির্দিষ্ট না করে দিয়ে ফাঁকিবাজির আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা ওই শিক্ষকের ছুটি প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। যতক্ষণ প্রত্যাহার না করা হয় আমরা অবস্থানে অনড় থাকবো। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে সমিতির সভার পর জানানো হবে।’

এদিকে শিক্ষক মাহবুবুল হককে এক মাসের ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার বরাবর একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। রবিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া শিক্ষক মাহবুবুল হকের পক্ষে এই নোটিশটি পাঠান। নোটিশ প্রাপ্তির পরবর্তী ১২ ঘণ্টার মধ্যে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে, অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থার কথা বলা হয় নোটিশে।

এদিকে বিকালে উপাচার্য, শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ (আইনুল- জিয়া প্যানেল) উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধানে আলোচনা হয়। তবে এখান থেকে কোনো সমাধান আসেনি। সোমবার উপাচার্য শিক্ষক সমিতির নেতাদের নিয়ে সোমবার আবার বসবেন বলে জানা যায়।

বঙ্গববন্ধু পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আইনুল হক বলেন, ‘শিক্ষকের বাধ্যতামূলক ছুটি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের নিয়মিত অবস্থান কর্মসূচি চলবে।’

সার্বিক বিষয় জানতে উপাচার্যকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত আলোচনা সভা চলমান অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান মাহবুবুল হক ভূঁইয়া (তারেক) শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেন- এই অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগ অভিযুক্ত শিক্ষককে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয় ও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। একই দাবিতে পরদিন থেকে টানা দুই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দেয় তারা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই শিক্ষককে ২০ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ছুটি প্রধান করা হয়। একইসাথে ঘটনাতদন্তে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এই সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ছুটি প্রত্যাহারের দাবি জানায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ (আইনুল-জিয়া প্যানেল)।

(ঢাকাটাইমস/২০আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :