ঢাকা-২: ছেলেকে সামনে আনছেন আমান

প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০১৭, ০৮:১৫

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

১৯৯১ সাল থেকে চারটি নির্বাচনে অবিভক্ত কেরানীগঞ্জ আসনটি ছিল ধানের শীষের দখলে। এই আসনে প্রতিবারই বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিএনপির প্রভাবশালী নেতা আমান উল্লাহ আমান। আইনি জটিলতার কারণে তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। তবে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন আমান।

আগামী একাদশ নির্বাচনে তিনিই এখন পর্যন্ত বিএনপির সম্ভাব্য একক প্রার্থী। কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে পরিবারের কেউ বিকল্প হিসেবে আসছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ছেলেকে এগিয়ে রাখছেন সাবেক তুখোড় এই ছাত্রনেতা।    

সাভার উপজেলার আমিনবাজার, তেঁতুলঝোড়া ও ভাকুর্তা ইউনিয়ন, কেরানীগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ, ঢাকা মেট্রোপলিটনের কামরাঙ্গীরচর ও হাজারীবাগ থানার সুন্দরগঞ্জ ইউনিয়ন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-২।

এককালে কেরানীগঞ্জকে ‘ধানের শীষের দুর্গ’ বলা হলেও পরপর দুই নির্বাচনে বিএনপির হাতছাড়া আসনটি। নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। নবম সংসদ নির্বাচনে কামরুল ইসলাম বিএনপি প্রার্থী মো. মতিউর রহমানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন কামরুল ইসলাম। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতে পারেন। তবে কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদও প্রার্থী হতে আগ্রহী বলে শোনা যাচ্ছে।

অন্যান্য আসনের মতো ঢাকা-২ এ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানও দলীয় কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। যদিও দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় কেরানীগঞ্জে নিজের শক্ত অবস্থান থাকলেও তাতে অনেকটা ভাটার টান এসেছে বলে জানা গেছে।

এদিকে ওয়ান ইলেভেনের সময় থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারের দুই আমলে আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা দুই শতাধিক। এসব মামলায় জামিনে থাকলেও প্রতিনিয়ত তাকে হাজিরা দিতে আদালতে যাওয়া-আসা করতে হচ্ছে।

তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আমান উল্লাহ আমানসহ সাবেক ছাত্র নেতাদের ভূমিকা নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে প্রশ্ন রয়েছে। গুঞ্জন আছে, আন্দোলনে সন্তোষজনক ভূমিকা না থাকায় ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়েছে আমানকে।

নবম সংসদ নির্বাচনে আইনি জটিলতায় নির্বাচন করতে পারেননি আমান। দশম নির্বাচন তার দল বিএনপির পক্ষ থেকে বর্জন করা হয়। সামনের একাদশ নির্বাচনেও মামলাসংক্রান্ত বা কোনো কারণে নির্বাচন করতে না পারলে এ আসনে আমানের পরিবারের কাউকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। আমানের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে আলাপেও এমন আভাস পাওয়া গেছে।

সেক্ষেত্রে তার স্ত্রী সাবেরা আমান কিংবা ছেলে ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমি প্রার্থী হতে পারেন। কিছুদিন আগে ঢাকা জেলা বিএনপির কমিটিতে সহ-সভাপতি করা হয়েছে আমান পুত্রকে।

শোনা যাচ্ছে, ধীরে ধীরে ছেলেকে রাজনীতির লাইমলাইটে আনতে চান আমান। এজন্যই আইনজীবী পুত্রকে দলের পদ দেয়া হয়েছে।

আমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ঢাকা জেলা ছাত্রদলের একজন প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রায় দুইশো মামলার আসামি আমান ভাই। শেষ পর্যন্ত সরকার কী আচরণ করে সেটা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তা আছে। তবে কোনো ধরনের সমস্যা না হলে এই আসনে তার বিকল্প কোনো প্রার্থী নেই।’

আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে আমান উল্লাহ আমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সহায়ক সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনের দাবি করে আসছি। সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই। এমন পরিস্থিতি হলে আমরা অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেব।’

ঢাকা-২ আসনে প্রার্থিতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই এলাকার মাটি ও মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকলেও চেষ্টা করেছি মানুষের পাশে থাকার। একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হয়েছি। আশা করি আগামী নির্বাচনেও অতীতের মতো ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থী পাবেন।’

আমান উল্লাহ আমানের পরিবারের বাইরে কামরাঙ্গীচর থানা বিএনপির সভাপতি মনির হোসেনও এই আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। তবে দল আমানের বিকল্প হিসেবে পরিবারের কাউকেই মনোনয়ন দিতে পারে বলে সূত্রে জানা গেছে।

(ঢাকাটাইমস/২১আগস্ট/বিইউ/জেবি)