সুন্দরবনের ১৩২ বনদস্যুকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ আগস্ট ২০১৭, ০৮:২৩

সুন্দরবন ও সাগরে দস্যুতা করে জীবিকা নির্বাহ করা ১২টি বনদস্যু বাহিনীর ১৩২ সদস্যকে স্বাবলম্বী করতে অর্থ সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে দেয়া হবে।

আগামী ২৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের টাকা বিতরণ করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বাগেরহাট আসছেন। স্থানীয় শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে ওই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ. পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হকসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

২০১৬ সালের ৩১ মে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সুন্দরবনের বনদস্যু ‘মাস্টার বাহিনী’ প্রধান ও তার নয় সহযোগীর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে বনদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা শুরু হয়। এরপর ১৩ জুলাই বনদস্যু মজনু এবং ইলিয়াস বাহিনীর সদস্যরাও আত্মসমর্পণ করেন। এই নিয়ে গত প্রায় এক বছরে ১২টি বনদস্যু বাহিনীর ১৩২ জন সদস্য দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এসময় তারা বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদও জমা দেন।

র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ার উজ জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, উপকূলীয় বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, পটুয়াখালীর কয়েক লাখ মানুষ সুন্দরবন ও সাগরের ওপর নির্ভরশীল। মাছ, শুটকি, মধু, গোলপাতা, কাঁকড়া ও কাঠ সংগ্রহ করে এদের জীবিকায়ন হয়ে থাকে। এসব পেশার মানুষ সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব দিয়ে থাকে। অথচ কিছু বিপথগামী কিছু ব্যক্তি নিজ নিজ নামে বাহিনী গড়ে তুলে এই পেশাজীবীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা অপরাধ করে আসছিল।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, সুন্দরবন ও সাগরের ওপর নির্ভরশীল মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব-৮) দস্যু দমনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। গত প্রায় সাত বছর ধরে র‌্যাব এসব বনদস্যু ও জলদস্যুদের দমন করতে কাজ করছে। সুন্দরবনে র‌্যাবের বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকি রয়েছে। গত সাত বছরে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বনদস্যু বাহিনীর সঙ্গে র‌্যাবের অসংখ্য গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গত চার বছরে সুন্দরবনে র‌্যাব বরিশাল-৮ এর সঙ্গে দস্যুদের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১৬৭ জন জলদস্যু-বনদস্যু নিহত হয়েছেন। নিহত ওই দস্যুদের মধ্যে ৩৮ জন রয়েছে বাহিনী প্রধান। এসময়ে দস্যুদের ব্যবহৃত প্রায় ৪০০টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া দস্যুদের ব্যবহৃত দেশীয় ধারালো অস্ত্র, প্রচুর পরিমাণ রেশনিং সামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল উদ্ধার করে র‌্যাব সদস্যরা।

র‌্যাব জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় বনদস্যু দলগুলো বলতে গেলে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। পরে তারা ওই দস্যুরা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সরকারের কাছে আবেদন করলে সরকার তাদের সেই সুযোগ তৈরি করে দেয়। এরই অংশ হিসেবে গত এক বছরে ১২টি বনদস্যু বাহিনীর ১৩২ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করেন।

র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, দস্যুবৃত্তি ছেড়ে আত্মসমর্পণ করা ১৩২ জনকে সরকার আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সরকার তাদের স্বাবলম্বী করতে পর্যায়ক্রমে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এসব বিপথগামীদের পুনর্বাসন করতে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রত্যেককে নগদ এক লাখ টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া এদের পরিবারের সদস্যদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে। আগামী ২৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের টাকা বিতরণ করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বাগেরহাট আসছেন।

জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, মৌসুম এলেই সুন্দরবনের বনদস্যু বাহিনীগুলো বেপয়োয়া হয়ে ওঠে। উপকূলীয় বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, হাতিয়া ও সন্দ্বীপের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ সুন্দরবন ও সাগরের ওপর নির্ভরশীল। মৌসুম আসলেই দস্যুরা তাদের অপরহরণ করে চাঁদাবাজি করত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় গত দুই বছর সুন্দরবন ও সাগরে চাঁদাবাজি ও অপহরণ অনেকাংশে কমে গেছে। তাদের কঠোর নজরদারির কারণে বনদস্যুরা এখন কোণঠাসা।

আবুল হোসেন বলেন, গত কয়েক বছরে জেলে, মহাজন ও আড়ৎদাররা দেনার দায়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তবে গত দুই বছরে তারা তাদের ঋণের টাকা পরিশোধ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বনদস্যু বাহিনীর সদস্যরা দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তাদের সাধুবাদ জানাচ্ছি। সরকার তাদের কর্মসংস্থানের জন্য আর্থিক সহযোগিতার উদ্যোগ নেয়ায় সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

(ঢাকাটাইমস/২১আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :