গ্রেনেড হামলার প্রস্তুতি তারেকের শ্বশুরবাড়িতে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৭, ২২:২৪ | প্রকাশিত : ২১ আগস্ট ২০১৭, ২২:০৪

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়িতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানান, হামলার আগের দিনই ওই বাড়িতে কয়েকজন ব্যক্তির কিছু বাক্সপেটরা নামানো এবং অন্য একটি ‘গ্রুপের’ সেগুলো নিয়ে যাওয়ার তথ্য তিনি পেয়েছিলেন। সে সময় বিষয়টির খোঁজ খবর করতে এক স্বজনকে বলেওছিলেন তিনি।

গ্রেনেড হামলার ১৩ বছর পূর্তিতে সোমবার রাজধানীতে এক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ২৪ জনের প্রাণহানি ও শতাধিক ব্যক্তির আহত হওয়ার ওই ঘটনাটি সে সময়ের সরকারের পরিকল্পনাতে হয়েছে বলেই বিশ্বাস করেন তিনি। হামলার পর পর হামলাকারীদেরকে নির্বিঘ্নে চলে যেতে দিতেই পুলিশ নেতা-কর্মীদের পিটুনি ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ২১ আগস্ট প্রাণ হারানোদের স্বজন এবং আহতদের সান্তনা দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, হামলার বিচার কাজ চলছে, জড়িতরা সাজা পাবে।

‘অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তারা এই ঘটনাটি তারা ঘটিয়েছে’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ওই বছর প্রায় ১০ মাস সে ওই বাসায় (শ্বশুরবাড়ি) ছিল। ঠিক ১ আগস্ট ওই বাসা থেকে ক্যান্টনমেন্টের বাসায় ফেরত যায়। ওই বাসায় এতদিন থাকাটা দরকার তার কিছু ছিল, কী কারণে ছিল এবং কী কাজ করছিল?’।

হামলার আগের রাতে তারেকের শ্বশুর বাড়ির বেশ কিছু খবর তার কাছে এসেছিল বলে জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমার কাছে ওখান থেকে একটা খবর এসেছিল, ঠিক ২০ তারিখে গভীর রাতে গাড়িতে করে কিছু বাক্স, কিছু পেটি নামানো হয়। আবার রাত আড়াইটার দিকে একটা গ্রুপ এসে ওটা নিয়ে যায়।’

‘আমি যখন এই খবরটা পেলাম, তখন আমি আমার এক আত্মীয়কে বলেছিলাম, আপনি একটু দেখেন তো, মিসেস মাহবুব (তারেক রহমানের শ্বশুর) আছেন কি না। তিনি (স্বজন) বললেন, ২১ তারিখের প্রোগ্রামটা (বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশ) যাক তারপর আমি খবর নেবব। কিন্তু ২১ তারিখে এই ঘটনা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওখানে বসে যে এই ষড়যন্ত্রটা পাকানো হয় এবং খালেদা জিয়ার মন্ত্রীরাও এর সাথে জড়িত তাতে তো কোনো সন্দেহ নাই।’

হামলার আগে সংসদে বিএনপি নেতারা আরও একটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর হুমকি দিয়েছিলেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

‘হামলাকারীদের পালাতে দিয়েছে পুলিশ’

গ্রেনেড হামলার পর পর লুটিয়ে পড়া নেতা-কর্মীদের উদ্ধারে অন্যরা যখন ছুটে আসে, তখন পুলিশ তাদেরকে লাঠিপেটা এবং কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সাধারণত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আসে সাহয্য করতে, আর আমরা কি দেখলাম? ঠিক উল্টোটা। জনগণ যখন ছুটে আসলো সাহায্য করতে তাদের উপর হামলা, তাদেরকে লাঠিচার্জ, এমনকি লাথি মারা, তারা টিয়ারগ্যাস মেরেছে।’

‘উদ্দেশ্য ছিল যারা হামলাকারী তারা যেন নির্বিঘ্নে ওখান থেকে সরে পরতে পারে। সেই সুযোগটাই তারা সৃষ্টি করে দিয়েছিল।’

চিকিৎসাও দেয়নি বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা

হামলার পর আহতদেরকে হাসপাতালে নিলে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা তাদের চিকিৎসা দিতে হবে বলে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যখন আহত রোগীরা যখন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন চিকিৎসার জন্য যায় তখন বিএনপির চিকিৎসকরা তাদেরকে কোনো চিকিৎসা দেয়নি। আমাদের আওয়ামী লীগ মনস্ক যে সমস্ত ডাক্তার, তারা নিজেরা হাসপাতালে গিলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।’

‘আমাদের নেতাকর্মীদেরকে যেখানে পেয়েছে সেখানে তুলে নিয়ে গেছে। সাহারা আপাকে (সাহারা খাতুন) আমরা পেয়েছিলাম শান্তিনগর একটি ক্লিনিকে সেখান থেকে তাকে বাংলাদেশ মেডিকেলে তাকে নিয়ে আসা হয়।’

মনগড়া কাহিনি প্রচার করেছে জোট সরকার

এই হামলার তদন্ত ভিন্নখাতে নিয়ে যেতে জোট সরকার কী কী করেছে তার বর্ণনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

হামলার পর পর আলামত নষ্ট করতে সিটি করপোরেশন থেকে তখন গাড়ি নিয়ে এসে পানি দিয়ে ওই জায়গাগুলো ধুয়ে দেয়া হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। পড়ে থাকা দুটি গ্রেনেডও নষ্ট করে দেয়া হয়। একজন সামরিক কর্মকর্তা গ্রেনেডটা রাখতে চাওয়ায় তাকে চাকরি থেকে খালেদা জিয়া বের করে দেন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন কারারক্ষী ওই হামলায় জড়িত ছিল অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির উপমন্তী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই তাজউদ্দিনসহ তাদের কয়েকজনকে ওই দিন রাত ১১টার প্লেনে করে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেয় সরকার।

সংসদে এই ঘটনায় আলোচনা করতে দেয়া হয়নি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, উল্টো আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘তাদের নেতারা ওই পার্লামেন্টে বক্তৃতা শুরু করল, আমি ভ্যানিটি ব্যগে করে ওই গ্রেনেড নিয়ে নিজেই মেরেছি। এই মিথ্যা অপপ্রচার সমগ্র বাংলাদেশে এমনকি, স্কুলে স্কুলে ছোট ছোট বাচ্চাদের কাছে এই কথা রটিয়েছিল।’

জনগণের চাপের মুখে জয়নাল আবেদীন নামে একজন বিচারপতিকে প্রধান করে বিচারিক তদন্ত কমিটি করা হয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি তদন্ত করে বলেছিলেন, যে এটা বিদেষি কাজ। প্রতিবেশী দেশ থেকে করা হয়েছে।’ জজ মিয়া নাটকের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নোয়াখালীর অজপারাগাঁওয়ের এক লোক, তাকে সাজিয়ে আনা হলো, সে গ্রেনেড মেরেছে। সে নাকি সব ষড়যন্ত্র করেছে।’

সন্দেহ নেই জোট সরকার জড়িত

এ সব ঘটনাই এই হামলায় জোট সরকারের জড়িত থাকার প্রমাণ বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তাদের আচরণের মধ্য থেকেই এটা স্পষ্ট হয়ে যায়। যেখানে খালেদা জিয়ার ক্যাবিনেটের মিনিস্টার এর সঙ্গে জড়িত। তখনকার গোয়েন্দা সংস্থা, তারা এর মধ্যে জড়িত।’

পুলিশের সেদিন আরও একটি কাজ সন্দেহজনক ছিল বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিএনপি আমলে ২০০১ সাল থেকে আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকতেই পারতো না আমাদের নেতাকর্মীরা। চারদিকে এতো পুলিশ গিজগিজ করতো। সময় সময় বাধা দিত, সময় সময় আটকে রাখতো। যখন তখন আমাদের অফিসে ঢুকে সার্চ করত। অথচ সেই দিন পুলিশ কর্মকর্তা কেউ নেই। আশে পাশে সব ফাঁকা।’

আমি তো মরেই যেতাম

জনসভায় ছোঁড়া একটি গ্রেনেড ট্রাকে করা মঞ্চে না পড়ে নিচে পড়ে বিস্ফোরণ ঘটাতেই বেঁচে যাওয়ার কথা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “হানিফ ভাই (ডিসিসির সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) আমাকে ধরে রাখেন। আর গ্রেনেডটা ট্রাকের ডালার কোনায় লেগে ভেতরে না পরে বাইরে পরে। যদি ভেতরে পরত, আমরা যারা ট্রাকে ছিলাম, তারা কেউই বাঁচতে পারতাম না। কিন্তু বাইরে পরে যে স্প্লিন্টারগুলো, পুরো স্প্লিন্টার হানিফ ভাইয়ের মাথায় এসে পরে এবং তার মাথা থেকে রক্ত আমার পুরো কাপড়ে পরতে থাকে। যার পর অনেকে ভেবেছিল আমি বোধ হয় আহত হয়েছি।’

‘আমাদের নেতাকর্মীরা মিলে মানববর্ম তৈরি করে রক্ষা করেছিল’ মন্তব্য করে প্রধানমন্তী বলেন, ‘কিন্তু সেই দিন আমরা ২২ জন নেতাকর্মীকে হারাই।’

ঢাকাটাইমস/২১আগস্ট/এমবি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :